আড়াইহাজারে এতিম খানায় এতিম নাই আছে আ’লীগ নেতাদের অবৈধ পশুর হাট!!

আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২২
0

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এতিম খানার নামে অবৈধভাবে পশুর হাট বসিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ সময় ধরে ১০/১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট দরপত্র বিহীন অবৈধ এ পশুরহাট নিয়ন্ত্রন করলেও প্রশাসনের কোন নজর নেই। এতে একদিকে যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, সেই সাথে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় ক্রেতারা। প্রশাসনে প্রতি ক্ষুব্দ স্থানীয়রা।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামীলীগ ক্ষমতা আসার পর ২০০৯ সালে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সাকু বিশনন্দী ইউনিয়ন পরিষদের পাশে স্পল্প পরিসরে দরপত্র বিহীন অবৈধভাবে পশুর হাট বসায়। আশে-পাশের কোন পশুর হাট না থাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে হাটটির পরিসর বৃদ্ধি পায়। প্রতি বুধবারের এ পশুর হাটে পাশ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, কুমিল্লা, সোনারগাঁও সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার পশু এখানে আসে।

প্রতি হাটে হাজার খানেক উপর পশু কেনাবেচা হয়। হাসলী বাবদ টাকা উঠে ৪/৫ লাখ টাকার উপর। এত টাকা হাসলী উঠার কারণে নজর পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অংগসংঠনের নেতাদের। পরবর্তীতে উপজেলা আওয়ামী লীগ এক শীর্ষ নেতাসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগের বেশ কয়েকজন মিলে গড়ে উঠে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট তাদের এই অবৈধ কাজকে সহানুভূতি দেখাতে টোল (হাসলী) রশীট কাটে “আল জামিয়তুলা ইসলামিয়া দারুল উলুম বিশনন্দী ও এতিমখানার এর উন্নয়ন কল্পে”। টাকার তোলার কাজে মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থী দিনমজুর হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই এতিমখানায় প্রতি ঈদের সময় সামান্য নামকাওয়াস্তে টাকা দান করে পুরো বছরের প্রায় দুই কোটি টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছে আওয়ামী লীগের ওই সিন্ডিকেট।
নেতাদের ভাগ্য বদলালেও বদলায়টি এতিমখানার : বিশনন্দী ইউনিয়ন পরিষদের এক কিলোমিটারে সড়কের পাশে আল জামিয়তুল ইসলামিয়া দারুল উলুম বিশনন্দী ও এতিমখানা। মাদ্রাসার সূত্র মতে, এ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন শতাধিক ও শিক্ষক সংখ্যা ১৬ জন। এর মধ্যে ১০০ জন আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষর্থী চন্দ্রগরদী এলাকা সাকিবুল হাসান জানায়, সে পাশের বাসায় লজিন (প্রাইভেট) পড়িয়ে তার তিন বেলা খাবার জুটাতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ মাদ্রাসার একজন শিক্ষক জানায়, এতিম খানার নামে পশুর হাট থেকে টাকা তুললেও ওই টাকা মাদ্রাসা পর্যন্ত পৌছায়না। আওয়ামী লীগ নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, পশুর হাটের টাকায় মাদ্রাসা ও এতিমখানার ভাগ্য না বদলালেও নেতাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। এত বড় লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও নেতাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলছেনা।
আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম বিশনন্দী ও এতিমখানার অধ্যক্ষ শরীফুল ইসলাম জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনুরোধ করে তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে পশুর হাট থেকে টাকা তুললে উপকার হয়। হাটের দায়িত্বে যারা রয়েছে তাদের কথা রাখতে গিয়ে মাদ্রাসার ও এতিমখানা নামটি রশীদে ব্যবহার করে। মাঝে মধ্যে ফান্ডের টাকা অভাব হলে ধার নেয়া হয়।
এ ব্যপারে বিশনন্দী বাজার কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শাকু বলেন, সামাজিক ও ধমীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নতিকল্পে এ পশুর হাটের টাকা ব্যয় করা হয়। কোন ভাগবাটোয়ারা হয়না। বছরে দুই কোটি হউক বা দশ কোটি হউক তা সামাজিক কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাকা ব্যবহারের তুলনায় মাদ্রাসার উন্নতি দৃশ্যমান না হওয়ার তাদের দেখার বিষয় না।
মাদ্রাসার সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী খোরশীদ আলম সরকার বলেন, পশুর হাট আমার মাদ্রসাও আমার,তাতে কি হয়েছে’। টাকা বাগবাটোয়ার বিষয়ে একাধিকবার জিজ্ঞাসা করলেও তিনি এ ব্যাপারে পরে কথা বলবেন বলে জানান।
পশুর হাটটি নিয়মাতান্ত্রিক নয় বলে স্বীকার করেন বিশনন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পাশে এ পশুর হাটটি বসলেও এ হাটের সাথে বিশেষ করে টাকা বাগবাটোয়ারার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে এ পশুর হাট বন্ধ না করে নিয়মের ভিতরে চালু করার জন্য বেশ কয়েকবার ইউএনও ও এসিল্যান্ডকে বলা হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এতে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবৈধ পশুর হাটের সঙ্গে কারা কারা সম্পৃক্ত এ ব্যপারে কোন তথ্য দিতে তিনি রাজি হননি।
অবৈধ গরুর হাটের কারণে যানজট : ঢাকা বিশনন্দী আঞ্চলিক মহাসড়কে কড়ইতলা রামচন্দ্রদী বেইলি সেতুতে যানজট নিরসনে উপজেলা প্রশাসন ও গোপালদী পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে সেতুর দুই পাশে আনসার নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু প্রতি বুধবার আনসার গুলো তাদের দায়িত্ব পালন করে না। কারণ বুধবারে গরুর নেয়ার পরিবহনের এত চাপ থাকে সীমিত আনসার দিয়ে যানজট নিরসন দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। বিনিময়ে তাদের অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দেয়া হয়।
আনসারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বুধবার এই বেইলী সেতুর দুই পাশে বাড়তি লোক নিয়ে পশু পরিবহনের গাড়ি অতিরিক্ত পরিশ্রম করে পার করে দিতে হয়। বিনিময়ে ওই দিনের বাড়তি টাকা দাবী করা হয়। অথচ অবৈধ পশুর হাট থেকে প্রতি সপ্তাহে বিপুল পরিমান টাকা তোলা হলেও তাদের জন্য কোন অতিরিক্ত কাজের পারিশ্রমিক দেয়া হয়না। তাই তারা বুধবার ডিউটি করে না। এতে প্রতি বুধবার সকাল থেকে রাত অবদি কড়ইতলার পারের চালারচর পর্যন্ত রামচন্দ্রদীর এদিকে জালাকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। বুধবার হাটে যাওয়ার পরই দেখা গেছে ভয়াবহ যানজট। এই চিত্র প্রতি বুধবারের।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বলেন, এই হাটের কোন অনুমোদন নেই। যতদূর জেনেছি স্থানীয় কিছু লোকজন মাদ্রাসা বা এতিমখানার উন্নয়নের নাম করে হাট পরিচালনা করছে। হাটটি অবৈধ, তাই উচ্ছেদ করে দেওয়া হবে। আমি এসিল্যান্ড সাহেবের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা দ্রুতই ব্যবস্থা নিব’।