ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ছাত্র ইউনিয়ন নেতার মামলা

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২
0
file photo

ইতিহাস বিকৃত করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নামে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদানের অভিযোগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নামে শরীয়তপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারী ২২) দণ্ড বিধির ৫০০ ধারা মোতাবেক মামলাটি দায়ের করেছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন শরীয়তপুর জেলার সভাপতি সাইফ রুদাদ। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস মামলাটি গ্রহণ করেছেন। মামলা নং ১৫/২০২২।

মামলাসূত্রে জানা যায়, গত বুধবার(০২ ফেব্রুয়ারী ২২) ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এনডিএফের এক প্রতিবাদ সভায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, কাদের মোল্লা(রাজাকার) ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ মিডিয়াগুলোতে হৈ চৈ পরে যায়।

মামলায় বলা হয়, ১৯৬৮ সালে কাদের মোল্লা তার ছাত্রজীবনে ফরিদপুরে থাকাবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংঘর সামনের সাড়ির নেতা ছিলেন। এরপর ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হল শাখার সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে ছাত্র সংঘর যাবতীয় কাজে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন। ১৯৭১ সালের একজন প্রতিষ্ঠিত রাজাকার হিসেবে প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধী হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২ তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলে তা কার্যকরও করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এদেশের স্বাধীনতা ও স্বাধীকার আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র ইউনিয়ন তার গেরিলা বাহিনী নিয়ে এদেশকে মুক্ত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করলে তার অনেক কর্মী শহীদ হোন। কাদের মোল্লার মতন একজন ঘৃণিত ব্যক্তি ১৯৭১ সালে ছাত্র ইউনিয়ন করত মর্মে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য ইতিহাস বিকৃত করার শামিল ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

মামলার বাদী বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন শরীয়তপুর জেলার সভাপতি সাইফ রুদাদ বলেন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য নাম। ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৬২,৬৬,৬৯,৭০ এবং একাত্তের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল ন্যায্য আন্দোলনে সামনের সাড়িতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। সেই সংগঠনকে ইতিহাসের ঘৃণিত এক ব্যক্তির নামের সাথে জড়ানো ইতিহাস বিকৃতির সামিল এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। হুমায়ুন আজাদ স্যারের ‘একবার রাজাকার মানে চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা মানে চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা নয়’ উক্তিটি আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চাই ছাত্র ইউনিয়নের ইতিহাস বিকৃত করে জাফরুল্লাহরা বাংলাদেশের ইতিহাসকেই বিকৃত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই ছাত্র ইউনিয়নের ইতিহাস বিকৃত করার দায়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নামে মামলাটি দায়ের করেছি, আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছে। তিনি যদি প্রমাণ দিতে না পারেন তাহলে দেশীয় আইনেই তার বিচার হবে।

মামলাটির আইনজীবী এ্যাড. আজিজুর রহমান রোকন বলেন, ইতিহাস বিকৃত করে ভুল তথ্য প্রদান এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তাই আমাদের জানতে হবে। আমরা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আমরা ন্যায় বিচার চাই।