একদল লোক এখনো ভারত বাংলাদেশ এক হয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর

আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২১
0

জাকারিয়া চৌধুরী :

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জঘন্যতম বর্বরতার সূচনা করে বর্তমান সরকারী দল আওয়ামী লীগ। সেদিন আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা লগি বৈঠা হাতে তুলে নিয়ে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে খুচিয়ে এবং গুলি করে নিরাপরাধ মানুষকে খুন করে লাশের উপর নৃত্য করেছিল। সেই অপশক্তি আর তাদের দালালেরা আজ রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায়। সে সময়ের বিরোধী দল আজ বেশরম বেলাজের মত মানবতার আম্মা সাজে কতক্ষন, তো কিছুকাল ভারতের পুত্র বধু হয়,আবার চায়নার সাথে গালে গাল ঘষে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ লগি বৈঠার নামে সারাদেশে যে ম্যাসাকার চালিয়েছিল তাঁর একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সেদিন আমি রাজপথে ঘুরেছি। দেখেছি রাজধানীর সবুজবাগ থেকে যে মিছিলটি রাজারবাগ হয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল, মিছিলের মাঝখানে একটা টোকাই গোছের কিশোর মাটিতে বসে পড়ল। একজনে ছোট্র একটা জেরি ক্যান থেকে কাচের বোতলে লিকুইড ঢেলে আগুন জ্বালায়ে পুলিশ লাইনস মাঠের দিকে ছুড়ে দিল। আমি অবাক হয়ে দেখলাম- একজন উঁচু শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সফল একজন নেতাও এসব টোকাইদের দিয়ে এসব করাতে পারে ! নেত্রীত্ব দেয় !!সেদিনের টোকাই কেন্দ্রীক এই নেত্রীত্ব আজ ও চলমান আছে। যে শত্রুর হাত ধরে তারা আজকের ফ্রাঙ্কেন্সটেইন হয়ে গেছে, সেই ফ্রাঙ্কেন্সটেইনকে দমন করবে ইতিহাসের শিক্ষা। ইতিহাস বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষকে নানা রকম ছাড় দেয়, ছেড়ে দেয়ার ইতিহাস নেই বিশ্বের কোথাও। আজকে উইকিপিডিয়া থেকে শুরু করে নেট জগতে সেদিনের যত আর্কাইভ ছিল, সেসব যেন ভোজবাজির মত হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। বেজন্মালীগ আজ বলে কিনা ২৮ শে অক্টোবর নাকি গনতন্ত্র রক্ষা দিবস !! খুনীদের অসভ্যতা আর অজুহাতের কোনো শেষ নেই। এদেশের মাটিতে যেদিন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে সেইদিন থেকে-ই শুরু হবে তাদের বিচারের পালা। খুঁজে পাওয়া যাবে তাদের লুকিয়ে ফেলা সকল ডকুমেন্টসও……

ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে মাওলানা ভাসানী যে ঐতিহাসিক লং-মার্চের নেত্রীত্ব দিয়েছিলেন, তাঁর স্লোগান ছিল খুব সম্ভবত এই রকম-
বিশ্ববাসী দেখে যাও,
ফারাক্কা বাধ তুলে নাও।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে-ই ভারত আজ পর্যন্ত আমাদেরকে রেখেছে শত্রু তালিকায়। আমরা আজো তাদের ঋন শোধের অংশ হিসেবে ইন্ডিয়ান সরকার প্রেরিত তালিকা অনুযায়ী পেনশন দেই। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও তাদের খিদে ফুরোয় না। বাংলাদেশ হচ্ছে ভারতের সর্বোচ্য রেমিটেন্স প্রেররকারীদের মধ্যে অন্যতম। আজকের বাংলাদেশ যে সংকটে দিশেহারা, ১৯৭৪ সালেও এমন খারাপ অবস্থা ছিল। এর ফল হলো নিন্দার অযোগ্য। শেখ সাহেবের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সরকারে আওয়ামীলীগ-ই আসীন হয় কেবল মুজিবুর রহমান ছাড়া।

৭ ই নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’। এটা লিখতে গিয়ে আমাকে কিছু আলোচনা এবং রেফারেন্স সংযোগ করতে হয়েছে। ৭ ই নভেম্বত বুঝতে হলে আমাদেরকে আগে বুঝতে হবে- এর উৎপত্তির প্রেক্ষাপট। শেখ মুজিব নিহত হবার পর খোন্দকার মুশতাক সরকারের মেয়াদ ছিল মাত্র ৮৪ দিন। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, পুরো এই ক্যাবিনেটটি ছিল মুজিব সরকারের ক্যাবিনেট। তারপরে কিছু সংযোজন হয়েছে নাকি বিয়োজন হয়েছে আমার জানা নেই। তো এই ৮৪ দিন পর লীগের আরেক প্রিয় কমান্ডার খালেদা মোশাররফ খোন্দকার মোশতাক সরকারকে উচ্ছেদ করলে দেশে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শুন্যতা দেখা দেয়। বলা হয়ে থাকে ৩-৬ ই নভেম্বর ১৯৭৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে কার্যত কোনো সরকার ব্যাবস্থা ছিল না। জেনারেল জিয়া খালেদ মোশাররফের হাতে বন্দী। ৬ ই নভেম্বর রাত থেকে দেশের বিভিন্ন ছাউনির সেনারা তাদের অফিসারকে মুক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। কর্নেল তাদের এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে জিয়াকে মুক্ত করেন কিন্তু জাতির সামনে নিজেকে বীর হিসেবে উপস্থাপন করতে ব্যার্থ হন। তাঁর চেহারায় সহজাত নেত্রীত্বের গুনাবলী ছিল কিনা আমার মনে সন্দেহ আছে। ফলে মুক্ত জিয়া হলেন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। এই প্রশাসনকে জনগন মানে কিনা সেটা যাচাই করতে জিয়া-ই প্রথম বাংলাদেশে গনভোটের আয়োজন করেন। সে ভোটে জয়লাভ করার পর তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠায় মনোযোগী হন। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে জিয়ার সময়ের মত সমৃদ্ধ সময় কখনো আর আসেনি। এখনো অন্তত আসেনি সে নিশ্চিত।

আওয়ামীলীগের জন্ম এবং এর ধারাবাহিক পথ চলার ইতিহাস যেদিন এ জাতির প্রতিটা নাগরিক জানবে বুঝবে সেদিন তাদের অতীত বিপর্যয়ের কারনও নিশ্চয়-ই পরিস্কার হবে। আমি অতী্ত কান্ডের জাস্টিফিকেশনে যাচ্ছি না। আমি কর্ম ও তাঁর ফলের পরিনতির অতীত শিক্ষা মনে করিয়ে দিতে পারি মাত্র। একই ঘটনা আবারও ঘটবে এ কামনা আমি করতে পারিনা। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক নাশকতার মাধ্যমে কোন কিছুই ভাবতে পারে না। ভাবি না আমিও। কিন্তু সমাধান কি ? আওয়ামীলীগ যা বলবে তা আজীবন মেনে চলতে হবে ? না। হবে না। তারা নিজেরা অবৈধ, কারন তারা একটা অবৈধ মিলিট্যান্ট সরকারকে সেদিন ডেকে এনেছিল। সেই সরকারের হাত থেকে মিউচ্যুয়ালি ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে আওয়ামীলীগ ও ভারত এক ষড়যন্ত্রমুলক চুক্তির মাধ্যমে। ফলে ২০০৬ সালের যে দিন বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হয় সেদিন থেকে আজতক বাংলাদেশে একটা অবৈধ সরকার ক্ষমতায় বসে রয়েছে। এর নেত্রীত্ব দিচ্ছে আওয়ামীলীগ। অতি উৎসাহী একদল লোক বাকশালের কীর্তন করে। একদল লোক সাংবিধানিক ধর্ম পরিবর্তন করতে চায় তো আরেকদল লোক এক ডিগ্রী সরেস আচরন করে ভারত বাংলাদেশ এক হয়ে যাবার স্বপ্নে বিভোর থাকে। যারা এসব স্বপ্ন দেখে, তাদের জিভ একদম টেনে ছিড়ে নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলবে এদেশের মুক্তিকামী জনতা। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের লেখায় লিখে গেলাম আওমী ইতিহাস। আমার আসলে লেখার তেমন আর কিছু নেই।

কেন বাংলাদেশে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি এসেছিল, কেন আসতে পারে, কেন আসে, এলে জাতির কি ক্ষতি বা লাভ হয় তা এদেশের রাজনীতির জীবন্ত ফসিল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দিকে শুধুমাত্র একবার তাকান, বুঝে যাবেন। ইতিহাস পড়ুন। রাতকে মুল সময় ধরে আন্দোলনের নকশা ঠিক করুন। পুলিশ ব্যার্থ হবে। আমাদের হাতে একমাত্র যে পথটা খোলা আছে তা হলো নিজের বুকের রক্ত দিয়ে এদেশের স্বাধীনতাকে আবার অর্থবহ করে তোলা। ভারত নির্ভর স্বাধীনতার ফল আমরা ১৯৭৫ সালে দেখেছি……… আর দেখতে চাই না। ভারতকে অনেক দিয়েছি। তারা মনে রাখেনি। আর দেব না। এই হোক এবারের জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের মুল শিক্ষা।

বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষনরসা নারী বিদিশা একবার একটা বই লিখেছিল বলে শুনেছিলাম। বইয়ের নাম ‘শত্রুর সংগে বসবাস’। বিদিশা কাকে মিন করেছেন তা যদি আমরা আমজনতা বুঝি তবে মাথা ছিলা মমিন কাকে কা’র স্ত্রী বলে মিন করেছেন সে কথাও বুঝে এদেশের জনগন। অবৈধ উপায়ে অবৈধ সেনা শাসকের হাত থেকে ক্ষমতা গ্রহন গনতান্ত্রিক চর্চা নয়। আবার আওয়ামীলীগ জন্মের পর থেকে আজতক স্বাভাবিক নিয়মে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। আর এজন্য-ই তাদেরকে কিছুদিন পরপর একটা করে ভাতার ধরতে হয়। কিছুদিন এর কোলে তো কিছুদিন অন্যের কোলে বসে। দেশের সুনির্দিষ্ট কোনো দিক ঠিক রাখা যায় না এসব ভাড়াটে সরকারদের কারনে। মঈনুদ্দিন সরকারকে ইংগিত করে সেদিন উনি বঙ্গভবনে দম্ভ করে বলেছিলেন- ১.১১ তত্ত্ববধায়ক সরকার তাঁর আন্দোলনের ফসল। হ্যাঁ, তাই তো !

কথা সত্য। সেদিন তাঁর সরাসরি নির্দেশে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার লক্ষ কর্মী ঢাকায় প্রবেশ করে। এর তিন দিন আগে জনাব আব্দুর রাজ্জাক তাদের কথিত কাউন্টডাউন ঘড়িটির দিকে ইশারা করে বলেন, কাউন্ট ডাউন শেষ হবে একদিকে তো অন্যদিকে আপনারা জিরো পয়েন্ট থেকে মুক্তাংগন পর্যন্ত দখল করে রাখবেন। সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত আপনারা অবস্থান ছেড়ে নড়বেন না। যে যেভাবে পারেন মোকাবেলা করবেন। দলীয় প্রধান এবং রাজ্জাকের মত ৬২’র ক্রিমিনালেরা যখন দেশকে নষ্টের দিকে ঠেলে দিতে চায়, তখন তারা পারে। তাদের অতীত ইতিহাস সেসবেরই স্বাক্ষ্য দেয়। ২০০৬ সালের ২৮ শে অক্টোবর বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্ববাসী আওয়ামী হিংস্রতার জঘন্য ও বর্বর রূপ দেখেছিল আরেকবার। একটা সোনালী সকালের প্রত্যাশায়।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ২০২১ সফল ও স্বার্থক হোক।