ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের দূষণবিরোধী প্রকল্পের উদ্বোধন

আপডেট: মে ৭, ২০২১
0

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম এর দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। সভাটি বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় বৃহষ্পতিবার সকাল ১১:০০ টায় অনুষ্ঠানটি অনলাইন জুম মিটিং এর মাধ্যমে আয়োজিত হয় এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের ফেসবুক পেইজ (https://www.facebook.com/waterkeepersbangladesh) থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ইউএসএআইডি ও এফডিসিও’র আর্থিক সহযোগিতায় কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর পরামর্শে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম পরিচালিত এই দূষণবিরোধী প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সম্মানীত মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি। এছাড়াও অনুষ্ঠানটিতে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেপুটি চিফ অব মিশন জো অ্যান ওয়্যাগনার, ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস এর উন্নয়ন পরিচালক জুডিথ হারবার্টসন, ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্সের নির্বাহী পরিচালক মার্ক ইয়াগহি, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকি প্রমূখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী এবং বিপিআইএর কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। সভাটি সঞ্চালনা করেন কনসোর্টিয়াম প্রধান এবং ব্লু প্যানেট ইনিশিয়েটিভ এর নির্বাহী পরিচালক শরীফ জামিল। সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মইনুদ্দিন আহমেদ, চিফ অব পার্টি, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল; অনুষ্ঠানে প্রকল্প সম্পর্কে উপস্থাপনা প্রদান করেন প্রকল্প সমন্বয়কারী মোবারক হোসেন সাজিদ এবং অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, চেয়ারম্যান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ এবং ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। সভার শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম পিএইচডি, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

দূষণবিরোধী শক্তিশালী প্রচেষ্টা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ইউএসএআইডি, এফসিডিও এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিপিআই এর অন্তর্ভূক্ত সংগঠন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) কে সাথে নিয়ে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করেছে। এই দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রকল্পটি ঢাকা শহরের বায়ু এবং শব্দ দূষণসহ বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌযান কর্তৃক দুষণ, ডাইং কারখানা কর্তৃক দূষণ এবং ট্যানারি দূষণ মোকাবেলায় ঢাকা শহরের শব্দ এবং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, সরকারি সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগিদের সাথে নিয়ে একত্রে পরীবিক্ষণ এবং কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

সভায় প্রধান অতিথি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম একটি অগ্রাধিকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বলে থাকেন, আমরা সবাই নদীর সন্তান। নদী বাঁচলে আমরা বাঁচবো। তিনি আরো বলেন, নদীগুলোর বেশিরভাগ দূষণে জর্জরিত হয় শিল্পকারখানার মাধ্যমে। শিল্পকারখানাগুলো আবার অর্থনীতি আর উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিল্পকারখানাগুলোকে ইটিপি স্থাপন ও পবিচালনা করতে হবে নয়তো তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

তিনি আরো বলেন, যেকোন উদ্যোগের জন্য সরকার, ব্যক্তিখাত এবং এনজিওদের একত্রে কাজ করতে হয়, আর পরিবর্তনের লক্ষ্যে যেকোন অ্যাডভোকেসি কাজের জন্য এভিডেন্স বেজড ডাটা গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্পটি বিজ্ঞানভিত্তিক এভিডেন্সবেজড ডাটা নিয়ে কাজ করবে। আশা করি এই প্রকল্পটি পরিবেশ দূষণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী এবং বিপিআইএর চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, ঢাকার দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি এই প্রকল্প বিভিন্ন অংশীজনের সাথে এভিডেন্সভিত্তিক অ্যাডভোকেসি করবে। পানি, বায়ু এবং শব্দদূষণের বিরুদ্ধে এই কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে সর্বপরি বাংলাদেশের পরিবেশদূষণ কমিয়ে আনার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধিতে সকল অংশীজনকে হাতে হাত ধরে কাজ করার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথি ঢাকা উত্তরের সম্মানিত মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার। ঢাকা শহরের পানি, বায়ু আর শব্দ দূষণের জন্য যে দুর্নীতিগুলো হয় সিটি কর্পোরেশন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। পানি দূষণ বন্ধে প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে। দূষণের সূত্রপাত যেখানে সেখানেই রোধ করতে হবে। বায়ু দূষণ রোধে গাছ লাগাতে হবে। গড়ে তুলতে হবে পরিবেশবান্ধব সুন্দর ঢাকা নগরী।

বিশেষ অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানেই আমাদের পরিবেশ সমুন্নত রাখার বিষয়টি যুক্ত করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে বিষয় নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি আরো বলেন, আমরা সবাই অধিকারের কথা বলি কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় জনগণেরও যে দায়িত্ব রয়েছে তা আমরা ভুলে যাই। আমাদের চিন্তা ও মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদেরকে পরিবেশ রক্ষায় একসাথে কাজ করতে হবে। যারা আইন ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেপুটি চিফ অব মিশন জো অ্যান ওয়্যাগনার বলেন, বর্তমান সময়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুটি হচ্ছে সবচেয়ে বিপজ্জ্বনক একটি ইস্যু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই ইস্যুতে কাজ করতে পেরে খুশি। এই দুই বছর মেয়াদী প্রকল্পে সহায়তার দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে ঢাকা শহরের পানি, বায়ু এবং শব্দ দূষণ কমিয়ে আনতে নাগরিকসমাজ, বেসরকারি খাত, মিডিয়া এবং অন্যান্য অংশীজনকে সাথে নিয়ে সরকারকে পরামর্শ প্রদান করবে। একমাত্র যৌথ অ্যাডভোকেসি কার্যক্রমই পারে প্রকল্পের সুফল বয়ে আনতে। তাই তিনি পানি, বায়ু এবং শব্দদূষণ রোধে এই প্রকল্পে সকল অংশীজনকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।

ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস এর উন্নয়ন পরিচালক জুডিথ হারবার্টসন বলেন, পরিবেশদূষণ তথা পানি এবং বায়ুদূষণ থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়ায় যা মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের জীবনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্য পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছে এটা একটা প্রসংশনীয় উদ্যোগ। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের এই প্রকল্পটি দূষণ প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আন্তর্জাতিক সংস্থ ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্সের নির্বাহী পরিচালক মার্ক ইয়াগি বলেন, সারা পৃথিবীতেই এখন সুপেয় পানির সংকট চলছে। পৃথিবীর মানুষ আজ খাবার পানির জন্য সংগ্রাম করছে। বাংলাদেশেও ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্স কাজ করছে। ঢাকা শহরের পানিদূষণ এবং বায়ু ও শব্দদূষণ রোধে এই অ্যাডভোকেসি প্রকল্পটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।

অনুষ্ঠানে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকি বলেন, আমরা পরিবেশ রক্ষায় সংগ্রাম করে যাচ্ছি। বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ বিষয়ে আপনারা সকলেই অবগত আছেন। এই প্রকল্পটি বিজ্ঞানভিত্তিক এভিডেন্স নিয়ে সরকারের এবং বিভিন্ন অংশীজনের সাথে অ্যাডভোকেসি করবে যাতে ঢাকার পানি, বায়ু এবং শব্দদূষণ কমিয়ে নিয়ে আসা যায়। আমরা স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই ধরনের কর্মসূচির সাথে ঐকমত্য প্রকাশ করে এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করি।

কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি মইনুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় বসবাসের অনুপযোগী নগরীতে স্থান করে নিয়েছে। শহরটি সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে এবং ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর এবং জলাবদ্ধতার সঙ্কট নিরসনের জন্য ভীষণভাবে সংগ্রাম করছে। এছাড়াও ঢাকা শহরের বায়ু এবং শব্দ দূষণের মাত্রা এত বেশি যে, শহরটি বসবাসের জন্য অনুপযোগী হয়ে উঠেছে যা লিভাবিলিটি ইনডেক্সের শেষে ঢাকা নগরীতে স্থান দিয়েছে। এই প্রকল্পটি ঢাকা শহরের দূষণ হ্রাস করতে সরকারের সাথে কাজ করবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথি বক্তাগণ বলেন, বৈধ আইনী কাঠামো অনুসরণ না করে নগরায়ন ও শিল্পায়ন এর ফলে নদী দখল এবং নদী দূষণকারীরা তাদের আবর্জনা ফেলে দিচ্ছে নদীতলদেশে। ফলে বছর শেষে নদীস্থ জলজ জীবনের বেঁচে থাকার জন্য নদীর জলে কোনও দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকছে না। বুড়িগঙ্গা নদীর দুষণের প্রায় পঞ্চাশভাগ দুষণই হাজারীবাগের দুই শতাধিক ট্যানারি শিল্প এবং শ্যামপুরের এক শতাধিক ডাইং কারখানাজাত।

রাজধানীর সাথে পুরো দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের বৃহত্তম কেন্দ্র হলো বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাট বন্দর। প্রতিদিন কয়েকশত নৌযান এই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ মানুষ যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন করে থাকে। বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাট এলাকাটি নৌযান থেকে নির্গত দুষণের কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঢাকা শহরকে এই দূষণের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে এই প্রকল্প অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।