করোনাকালে বছর নয় ৬ মাসের অন্তবর্তীকালীন বাজেট চায় বিএনপি

আপডেট: মে ২৮, ২০২১
0

স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষিখাতে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো ও ঝঁকি মোকাবিলার বাজেট চায় বিএনপি।

২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণার পাঁচদিন আগে সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার সকালে এ্ক সংবাদ সম্মেলনে ২৪ দফা বাজেট ভাবনা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘‘এবারের বাজেট হওয়া উচিত জীবন বাঁচানোর বাজেট, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকি মোকাবেলার বাজেট। এবারের বাজেট হবে করোনা ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ ও অভিঘাত থেকে উত্তরণের বাজেট।”

‘‘ বর্তমান বিরাজমান জটিল, সংকটজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো জীবন ও জীবিকার সমন্বয়ে সাধন করে কার্য্করী পদক্ষেপ গ্রহন করা। বিএনপি এবারের বাজেটকে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট অর্থবছরেরর হিসাবের চেয়ে আগামী দিনের অর্থনীতির সুনির্দিষ্ট পথ-নির্দেশের যাত্রাবিন্দু হিসেবে দেখতে চায়। সেই লক্ষ্যে বিএনপি আগামী বাজেটকে ভবিষ্যতের অর্থনীতির নীতি কৌশল হিসেবে ‘সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ অর্থনীতি’ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার হিসেবে দেখতে চায়।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আগামী দিনে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী, সামাজিক নিরাপত্তাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে সব প্রতিবন্ধকতা দুরীকরণের মাধ্যমে একটি কার্য্করী নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

তিনি বলেন, ‘‘ অনেকে মনে করে করোনার ভয়াবহতা না কমলে গতানুগতি বাজেট করে কোনো লাভ নেই। লক্ষ্য হওয়া উচিত আগামী ৬ মাসের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট করা। আবার অনেকে মনে করে, অর্থনীতির অস্বাভাবিক সংকোচনে প্রচলিত বাজেট ব্যবস্থা থেকে সরে এসে তিন বছর মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রনয়ন করতে হবে। বিদায়ী অর্থবছরে আমরাও এই দাবি করেছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়নি।”

‘‘আমরা বিশ্বাস করি, একটি দেশের অর্থনীতি তখনই সত্যিকার অর্থে জনবান্ধব হয়ে উঠে যখন সেখানে সুশাসন ও জবাবদিহিমূলক সরকার জনগনের অবাধ নিরপেক্ষ ভোটের নির্বাচিত হয়। সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরনের মূলমন্ত্র হচ্ছে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগের সর্বোত্তম পন্থা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা যা বর্তমানে সম্পূর্ণ রুপে অনুপস্থিত।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ অনেকে মনে করেন করোনার ভয়াবহতা না কমলে গতানুগতি বাজেট করে কোনো লাভ নেই। লক্ষ্য হওয়া উচিত আগামী ৬ মাসের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট করা। আবার অনেকে মনে করে, অর্থনীতির অস্বাভাবিক সংকোচনে প্রচলিত বাজেট ব্যবস্থা থেকে সরে এসে তিন বছর মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রনয়ন করতে হবে। বিদায়ী অর্থবছরে আমরাও এই দাবি করেছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়নি।”

‘‘আমরা বিশ্বাস করি, একটি দেশের অর্থনীতি তখনই সত্যিকার অর্থে জনবান্ধব হয়ে উঠে যখন সেখানে সুশাসন ও জবাবদিহিমূলক সরকার জনগনের অবাধ নিরপেক্ষ ভোটের নির্বাচিত হয়। সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরনের মূলমন্ত্র হচ্ছে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগের সর্বোত্তম পন্থা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা যা বর্তমানে সম্পূর্ণ রুপে অনুপস্থিত।”

২৪ দফা প্রস্তাবনায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্ধের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য খাতকে বাজেটের সর্বাধিক তালিকায় রাখতে হবে। চলমান বৈশ্বিক মহামারী প্রতিরোধ ও করোনা চিকিতসা দুইটিই সমানতালে চালিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।”

‘‘ শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ, বৃত্তি প্রদান, প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, কোভিডকালে ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষায়াতনে আর্থিক সহায়তা প্রদান, গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়ন ও উচ্চ শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে শিক্ষাখাতে বরাদ্ধ বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে কৃষি, শিল্প ও সেবাখাতের বহুমুখীকরণ, উতপাদন, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, উদতপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। কৃষিখাতে জিডিপির ৫% অর্থ বরাদ্ধ করতে হবে।”

দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ২৮ পৃষ্ঠার বাজেট ভাবনায় কর্মহীন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য জিডিপির ৬-৭%, ‘দিন আনে দিন খান’ শ্রেনীর মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে ১৫ হাজার টাকা করে তিন মাসের প্রণোদনা প্রদান, নিরপেক্ষভাবে দুঃস্থ উপকারীভোগীর তালিকা প্রনয়ন করে ‘দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে সুরক্ষা সহায়তা প্যাকেজে’র আওতায় আনার প্রস্তাব করেছেন বিএনপি মহাসচিব।

কৃষি কমিশন গঠন, রপ্তানি বহুমুখীকরণে বিকল্প বাজারের অনুসন্ধান, টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় মহামারীর মতো সংকট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ, জাতীয় স্বাস্থ্য কার্ড চালু, প্রত্যেক জেলায় ডেডিকেটেড সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, করোনাকালে জেলা হাসপাতালগুলোতে করোনা বেড, আইডিইউর সংখ্যা বৃদ্ধি, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উতস্য থেকে বিদেশি অনুদান বাড়ানোর কথাও বিএনপির বাজেট প্রস্তাবনায় রয়েছে।

ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বাজেট প্রস্তা্বনায় শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে একটি ‘অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠন করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।

মেগা প্রকল্পের অর্থ বরাদ্ধের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘‘ মেগা প্রকল্পের মেগা দুর্নীতির সব কাহিনী আপনারা সবাই জানেন। দেখা গেছে যে, সরকার সাধারণ মানুষের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চেয়ে মেগা প্রকল্পের গ্রহনেই বেশি আগ্রহী।”

পদ্মাসেতু, রপুপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর ও মাথারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে কিভাবে অর্থ বরাদ্ধের নামে মহাদুর্নীতি করা হয়েছে তাও তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব।

কালো টাকা সাদা করার সরকারি নীতির কঠোর সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘‘ আসছে বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, যত অপ্রদর্শিত আয় থাকবে, তত দিন এই সুযোগ থাকবে। হরিলুট করে সঞ্চিত কালো টাকা জায়েজ করার দরজা অবারিত করে দিলেন অর্থমন্ত্রী যা অনৈতিক এবং ন্যায় নীতি মেনে আইন পালনকারী নাগরিকদের প্রতি অবিচার বলে আমরা মনে করি।”

‘‘ কোভিডকালীন সময়ে এতো কালো টাকা কারা আয় করেছে জাতি জানতে চায়? যদিও এরই মধ্যে সরকার দলীয় ও তাদের মদদপুষ্ট অনেক রাঘব বোয়ালের নাম বেরিয়ে পড়েছে। অপ্রর্দশিত আয়ের একটি বিরাট অংশ মানিলন্ডারিং হয়ে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোভাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির প্রতিবেদন অনযায়ূ দেশ থেকে অস্বাভাবিক হারে টাকা পাঁচার বেড়েছে। বছর প্রায় লাখ কোটি টাকার অধিক পাঁচার হয়। প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ।যে পরিমান অর্থ পাঁচার হয়েছে তা দিয়ে চারটি পদ্মাসেতু নির্মাণ সম্ভব হতো।”

ব্যাংকিখাতে চরম অব্যবস্থাপনা ও হরিলুটে ‘ঋণখেলাপীর চিত্র তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘ ঋণ খেলাপীদের কবল থেকে দেশকে ও অর্থনীতকে মুক্ত করতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে ঋণ খেলাপীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলা হলেও তাদের আবার বিপুল ঋণ রাইট অব করে দেয়া হচ্ছে। অর্থাত ঋণ খেলাপী ও ব্যাংক মালিকদের অনৈতিক সুযোগ দেয়া হচ্ছে।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের বাজেট ভাবনা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির শ্যামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, রিয়াজ উদ্দিন নসু, আবদুস সালাম আজাদ, এবিএম আবদুস সাত্তার শায়রুল করিব খান ছাড়া ইন্টারনেটে যুক্ত ছিলেন শামসুজ্জামান দুদু, শওকত মাহমুদ, হারুন আল রশিদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ, সুকোমল বড়ুয়া, শাহজাদা মিয়া, তাহসিনা রুশদীর লুনা, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, ফজলুল হক মিলন, মোস্তাক আহমেদ, অনিন্দ্র্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ড প্রমূখ নেতারা।