করোনার অযুহতে চরফ্যাশনে লঞ্চ-বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

আপডেট: জুন ১৪, ২০২১
0

মো. সিরাজুল ইসলাম চরফ্যাশন(ভোলা)
লকডাউনেও যাত্রীবাহি লঞ্চ-বাস চলার অনুমতি মিলেছে যাত্রী কম তোলার শর্তে। বাস মালিকদের যেন ক্ষতি না হয়, সে জন্য বাড়ানো হয়েছে ভাড়া। তবে আগের মতোই দুই আসনে যাত্রী তোলার পরও বাড়তি ভাড়া দিতে বাধ্য করছেন চালক-শ্রমিকরা।
চরফ্যাশন উপজেলার প্রতিটি রুট এলাকায় চরফ্যাশন-ঢাকাগামী লঞ্চ ও ভোলা-চরফ্যাশন বাসগুলোর এমন চিত্র দেখা গেছে।
করোনাকালে স্বাস্থ ঝুঁকি বিবেচনায় প্রতি দুই আসনে একজন করে যাত্রী তুলে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া আদায়ের সুযোগের ঘোষণা রয়েছে নৌ-পরিবহন ও সড়ক ও সেতু পরিবহন মন্ত্রণালয়।
সরেজমিনে যে চিত্র দেখা গেছে, সেটি হলো ৬০ শতাংশ ভাড়া আদায় করার পরও যাত্রী তোলা হচেছ বেশি। যাত্রীরা বলছেন, যদি স্বাভাবিক সময়ের মতোই বেশি যাত্রী তোলা হয়, তাহলে অতিরিক্ত ভাড়া কেন নেয়া হবে?
চরফ্যাশনের বাসস্ট্যান্ডে পরিবহনের শ্রমিক স্টাফ হোসেন মিয়া বলেন, যাত্রী কম নিলে তাদের পোষায় না। তিনি বলেন, ‘ইচছা অইলেই ওই স্বাস্থবিধি মানি। দুই সিটে একজন কইরা লই। হেইডা তো আর সব সময় আমাগো পোষায় না। কারণ হইছে অনেক দিন বাস বন্ধ আছিল। ওই ক্ষতি তো পোষাণ লাগবে। তাই না? নাইলে আমরা বা চলুম কেমনে আর মহাজনগো বা দিম কী?’
সবসময় এভাবে বাসে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয় না দাবি করে তিনি বলেন, ‘যেসুম টেয়ায় শর্ট পরে তহনই উঠাই খালি।’আয় কমছে কিন্তু কোনো জিনিসের দামতো কমে নায়।
ভোলা-চরফ্যাশন ও চরফ্যাশন-দক্ষিন আইচা রুটে চলতি পথে বাস থামিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে।
চরফ্যাশন থেকে দক্ষিন আইচাগামী যাত্রী ইলিয়াছ আহম্মেদ বলেন, বাসস্ট্যান্ডে প্রতি দুই আসনে একজন যাত্রী নিয়ে ছাড়া হলেও পথে পথে যাত্রী তোলায় আসনগুলো আর ফাঁকা থাকে না।
চরফ্যাশন লঞ্চ-বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের নিয়মিত ঝগড়া হচেছ। বাস মালিক সমিতির দাবি, আসন নেই জানার পরেও যাত্রীরাই জোর করে উঠছেন। চরফ্যাশন-চট্রগ্রাম, যশোর বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ঢাকা-চট্টগাম রুটে যাতায়াত করে থাকে। সকালে সিট্রাক বা লঞ্চ ধরার জন্য চরফ্যাশনের শশিভূষণ, আইচা থেকে যেসব বাস আসে তার সবগুলোতেই থাকে অতিরিক্ত যাত্রী।
স্বাভাবিক সময়ে চরফ্যাশন থেকে ভোলায় লোকাল বাসের ভাড়া ছিল ১০০ টাকা। সেটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫০ টাকা। ডাইরেক্ট বাসের ভাড়া ছিল ১৩৫ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ২১০ টাকা।
যাত্রী আলী হোসেন বলেন, ‘আমাকে প্রায়ই বোরহানউদ্দিনে যেতে হয় বাসে করে। স্বাস্থবিধি মানা হয় না একটুও। আবার ভাড়া ৩০ টাকার জায়গায় নেয়া হচেছ ৬০ টাকা।’
বেশ কয়েকজন যাত্রী, বাসচালক, হেলপার, কনডাক্টর ও টিকিট মাস্টারের স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করার বিষয়টি একবাক্যে স্বীকারও করেছেন। ব্যতিক্রম চিত্র নয় নৌ রুটেও
চরফ্যাশন উপজেলায় রয়েছে বিছিন্ন ১৫/২০ টি চর। প্রতিদিন বেতুয়া(আয়শাবাগ)-ঢাকা নৌ রুটে চলাচল করে এমভি ফারহান-৫,ফারহান-৬, এমভি কর্ণফুলী-১২,কর্ণফুলী-১৩,তাসরিফ- ৩,তাসরিফ-৪ এবং ঘোষের হাট-ঢাকা নৌ রুটে সাব্বির- ৩,সাব্বির-৪। বিচিছন্ন উপজেলা চর কুকরী মুকরী, ঢালচর, চর পাতিলা,চর বাংলা, চর মনতাজ, চর নিজাম, মুজিব নগর এসকল এলাকায় অর্ধলক্ষ পরিবারের বসবাস। চরফ্যাশনের বেতুয়া ঘাট থেকে মনপুরায় মিনি লঞ্চ চললেও কচছপিয়া ও ঘোষের হাট ঘাট থেকে যেতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ ছোট ট্রলার কিংবা স্প্রিড বোটে। তবে নৌ-রুটে ঢাকাগামী লঞ্চ কিংবা মিনি লঞ্চ কোনো যানবাহনে মানা হচেছ না স্বাস্থ্য বিধি নেওয়া হচেছ অতিরিক্ত ভাড়া। যাত্রী সাধারণ অতিরিক্ত ভাড়া দিতে অস্বীকার করলে মাঝ নদী থেকে মিনি লঞ্চ ঘাটে ফিরে আসার ঘটনাও ঘটছে।
যাত্রীসাধারনের অভিযোগ ও প্রতিবাদের মুখে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করেছিলেন মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তবুও বন্ধ হয়নি যাত্রী ভোগান্তি।
বাস মালিক সমিতির চরফ্যাশন দায়িত্বরত কর্মকর্তা প্রভাষক মনির উদ্দিন চাষী বলেন,‘আমাদের যে বাসগুলো রয়েছে সেগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যারা বাস চালাবে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
তিনি বলেন, আমরা যেহেতু বাসযাত্রীদের কাছ থেকে দুটি আসনের ভাড়া নিচিছ, সেহেতু ওই দুটি আসনই ওই যাত্রীর। ভোলায় সরকারি নিয়ম মেনেই আমরা বাস চালাচিছ।
চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীণ বলেন, বাসগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে কি না, নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া আছে, বেশি যাত্রী নিলেই ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের শাস্তির দেয়া হবে।