করোনা আক্রান্ত খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন : যথেস্ট সুস্থ বললেন চিকিৎসক

আপডেট: এপ্রিল ১২, ২০২১
0

করোনায় আক্রান্ত খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘খুবই স্থিতিশীল, উনি যথেষ্ট ভালো আছেন’ বলে জানিয়েছে তার ব্যক্তিগত চিকিতসক টিমের প্রধান অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী।রোববার বিকালে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখে আসার পর মেডিকেল বোর্ড তথা তার চিকিতসক টিমের প্রধান মেডিসিন ও বক্ষ ব্যাথি বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকদের একথা জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা এখন পর্যন্ত বলব যে, উনার(খালেদা জিয়া) অবস্থা খুবই স্থিতিশীল। আজকে পর্যন্ত উনি যথেষ্ট ভালো আছেন। উনি স্পিরিটেড আছেন।”‘‘ আমরা আশা করছি যে, যদি এভাবে আরো এক সপ্তাহ পার হওয়া যায় তাহলে ইনশাল্লাহ আমরা বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে যাবো।”

এফএম সিদ্দিকী জানান, মেডিকেল বোর্ডে আমাদের অনেক বি্শেষজ্ঞ চিকিতসকরা রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের সাথে বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ চিকিতসকরা রয়েছেন। সবচেয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যে, ইউকেতে যে উনার ছেলে ও ছেলের ওয়াইফ আছেন… ডা. জোবাইদা রহমান সে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আমার স্টুডেন্ট ছিলো উনিও সব সময় মোটিভেট করছেন। আমরা একটা টিম ওয়ার্ক হিসেবে আলোচনা করে উনার(খালেদা জিয়া) চিকিতসা করছি।”‘‘ কোথাও কোনো গ্যাপ বা কোথাও কোনো রকমের সন্দেহের কিছু অবকাশ নেই।”

৭৫ বছর বয়েসী খালেদা জিয়ার স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন জানতে চাইলে এই বিশেষজ্ঞ চিকিতসক বলেন, ‘‘ আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত যে, উনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো আছে বলে মনে হচ্ছে।”

খালেদা জিয়াকে কি হাসপাতালে নেয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা এরকম প্রশ্ন করা হলে চিকিতসক টিমের প্রধান বলেন, ‘‘ আপনারা জানেন যে, কোবিডে আনসারটেনিটি আছে। পৃথিবীর কেউ বলতে পারবে না যে, করোনা প্রথম সপ্তাহে কেমন থাকবে, সেকেন্ড উইকে কি বিহেব করবে। কারো পক্ষে বলা সম্ভব না।”

‘‘ সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে। আমরা যদি কখনো মনে করি, বিন্দুমাত্র আমাদের মনে হয় যে, তাকে হাসপাতালে নেয়া দরকার। আমরা সেই মুহুর্তে তাতক্ষনিক হাসপাতালে নিয়ে যাবো- সেই ধরনের প্রস্তুতি আমরা রেখেছি।”

সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়ে চিকিতসক টিমের সদস্য বক্ষব্যাথি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুস শাকুর খান, ইউরে্ালিজিস্ট অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মো. আল মামুন পাশে ছিলেন। আরো ছিলেন চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা শাইরুল কবির খান।

বিকাল ৫টায় মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ‘ফিরোজায়’ প্রবেশ করেন। বেরিয়ে আসেন সন্ধ্যা ৬টার পর।

‘খুব কাছ থেকে আমরা দেখেছি’

অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘আমরা তিন চার জন ছিলাম, উনি আমাদের সামনে এসে বসেছেন। আমি উনার ব্যক্তিগত চিকিতসক দীর্ঘ বছর ধরে।এর আগেও উনাকে যতবার আমি যেভাবে এসে দেখেছি, সেভাবেই দেখেছি। উনি রেডি হয়ে আসেন, বসেন। আমরা সেভাবে যাই। আমাদের সামনে সামনাসামনি কথা বলেন।”

‘‘ শুধূ তাই নয়, আমি উনার পাস অক্সিমিটার দিযে দেখেছি, চেস্ট অলকালটেক করে দেখেছি। যেভাবে যা যা দেখা দরকার সেভাবে দেখেছি। অর্থাত আমাদের দেখা-পরীক্ষার কোনো কিছুর মধ্যে আমরা কোনো রকমের লিনেয়েন্সি সো করি নাই, ভেরি প্রফেশনালি আমরা এটা হেন্ডেল করছি।”

‘অন্যরা কেমন আছেন’

অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ সবাই কোবিড পজেটিভ। প্রত্যেককে চিকিতসা দেয়া হচ্ছে যারা কোবিড পজেটিভ। কিন্তু ভালো দিক হচ্ছে বেশিরভা্গই সিমটেমেটিক। প্রথম দিকে ১/২ জনের জ্বর ছিলো। ওদের এখন জ্বর নাই, সবাইকে আইসোলেশনে রাখা হয়ে্ছে। সবাইকে চিকিতসা করা হচ্ছে।”

‘‘ ম্যাডাম শুধু নিজেরই না, উনি ওরা(কোবিড আক্রান্তরা) ঔষধ খাচ্ছে কিনা সেটাও উনি তদারক করছে। আজকে আমি উনাকে দেখে চলে এসছি। উনি দোতলায়। উনি লাস্টে খবর পাঠিয়েছেন যে, আমার দুইজনকে আপনি একটু দেখে যান। তো আমি উনার রিকুয়েস্টে ওদেরকে দেখে এসছি। এভাবে উনি নিজেরও চিকিতসা করছেন, অন্যরা ঠিকমতো ঔষধ খাচ্ছে কিনা সেটাও দেখছেন। উনি আমাকে বলেছেন যে, ওরা না হলে ঔষধ খায় না।”

‘খালেদা জিয়া দোয়া চেয়েছেন’

এফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ উনি ভালো আছেন, স্পিরিটেড আছেন।উনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। উনি বলেছেন, সবাই যেন উনার জন্য দোয়া করেন। সবাই যেন সাবধানে থাকে, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলে।”

খালেদা জিয়ার চিকিতসক টিমের এই বৈঠকে অনলাইনেও আরো কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিতসক অংশ নেন। এছাড়া লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও ইন্টারনেটে যুক্ত থেকে বৈঠকে অংশ নেন।

গত শনিবার খালেদা জিয়া নমুনা পরীক্ষা শেষে রোববার তার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। মেডিসিনের বিশেষ চিকিতসক এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তার ব্যক্তিগত চিকিতসক টিম বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিতসা শুরু করে।

ফিরোজার বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়াও আরো ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তারাও বাসায় চিকিতসা নিচ্ছেন।

৭৫ বছল বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দন্ডিত। দন্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়; শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। তখন থেকে তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিতসকদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিতসা নিচ্ছেন। তার সঙ্গে বাইরের কারও যোগাযোগ সীমিত।

‘দোয়া ও প্রার্থনা’

এদিকে খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ শুনে নেতা-কর্মীরা উদ্বেগ-উতকন্ঠার মধ্যে আছেন। বিভিন্ন জায়গায় নেতা-কর্মীরা নেত্রীর রোগমুক্তির জন্য দোয়া করছেন। তার আশু রোগমুক্তি কামনা রাজধানীসহ সারাদেশের মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিল হয়েছে বলে দলের কেন্দ্রীয় দফতর শাখা জানিয়েছে। ঢাকায় পল্টন জামে মসজিদে বাদ জোহর দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, অনিন্দ্র্য ইসলাম অমিত, কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, নাজিম উদ্দিন আলম, রফিক শিকদার প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দোয়া মাহফিলে মোনাজাত পরিচালনা করেন ওলামা দলের আহবায়ক শাহ নেছারুল হক।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়েও খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এই দোয়া মাহফিলে ছিলেন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, উলামা দলের মাওলানা আবদুল খালেক, মাওলানা মো. ইব্রাহিম, মাওলানা সোবহানসহ চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিকালে খালেদার রোগমুক্তির কামনায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিকালে বিশেষ প্রার্থনা সভা হয়। মঙ্গলবার কমলাপুরের বুদ্ধ মন্দিরেও খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা সভা করবে দলের নেতা-কর্মীরা