করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর সীমান্তগুলোসহ দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন চায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা

আপডেট: জুন ১৮, ২০২১
0

করোনার এমন অবনতিশীল পরিস্থিতিকে সামনের দিনগুলোর জন্য আরও বেশি উদ্বেগজনক মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ। সীমান্ত এলাকার পাশাপাশি অন্য জেলাগুলোতেও সংক্রমণ বাড়ছে। তাদের অনুমান, এই মাসের শেষের দিকে সংক্রমণ পরিস্থিতি একটা সহনীয় পর্যায়ে আসতে পারে। কিন্তু আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ব্যাকপকভাবে জনচলাচলের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুসারে, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা পূর্বের দিনের চেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল (বুধবার) সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় গত দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬০ জনের মৃত্যু ঘটেছে এ ঘাতক ভাইরাসটির কারণে। একই সময়ে গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৯৫৬ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এমনকি একদিনের ব্যবধানে শনাক্তের হার ১৭ শতাংশে পৌঁছে গেছে।

এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভাইরনমেন্ট- এর সদস্য সচিব ডাক্তার কাজী রাকিবুল ইসলাম বলেন, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির চিন্তা মাথায় রেখেই লকডাউন বা বিধিনিষেধ কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে। জেলা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত করোনা চিকিৎসা সেবার সুযোগ বাড়াতে হবে। অক্সিজেন সরবরাহ এবং পর্যাপ্ত আইসিইউ স্থাপন করতে হবে।

ডাক্তার কাজী রাকিবুল ইসলাম আরও বলেন, হাসপাতালে কেবল যন্ত্রপাতি বা শয্যা সংখ্যা বাড়ালেই সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে না; এ জন্য যথেষ্ট সংখ্যক দক্ষ জনবল নিয়োগ করতে হবে এবং চিকিৎসাখাতে বরাদ্ধ বাড়াতে হবে।

নাগরিকদের প্রতিষেধক টিকা প্রদান প্রসঙ্গে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, সরকারের এ কর্মসূচিকে দ্রুত এবং সফলভাবে কার্যকর করতে হবে। কারণ, দেশের ৭০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া না হলে তা কার্যকর প্রতিরোধ বলে গণ্য করা হয় না।

সর্বোচ্চ সংক্রমণ সীমান্তবর্তী জেলায়

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, সীমান্তবর্তী ১০-১২টা জেলার ভারতীয় ধরন দেশে ঢুকছে। সেসব জেলায় সংক্রমণ-ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এর বাইরে দেশের ৪০-৪৫টি জেলাও সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সংক্রমিত এলাকায় রূপ নিয়েছে। এসব জেলায় সংক্রমণ হয়েছে ভেতর থেকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে দেশের ২৮টি জেলায় করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এসব জেলায় পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার সর্বোচ্চ ৫৩ শতাংশ থেকে সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ সাতক্ষীরায়, ৫৩ শতাংশ। এর পরপরই সর্বোচ্চ সংক্রমিত জেলার মধ্যে রয়েছে ঠাকুরগাঁও, ৫০ দশমিক ৪১ শতাংশ; যশোরে ৪৯ শতাংশ, চুয়াডাঙ্গায় ৪৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ, বাগেরহাটে ৪২ দশমিক ৪৬ শতাংশ, কুষ্টিয়ায় ৪১ শতাংশ ও মেহেরপুরে ৪০ শতাংশ।

নিয়ন্ত্রণে পরামর্শ

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেছেন, চিকিৎসা ব্যবস্থা বাড়ানোর চেয়ে বেশী প্রয়োজন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা। এখন যেসব বৈজ্ঞানিক আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসছে না। পরিস্থিতি সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে সাবধানতা থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে। প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবেই সবাইকে সাবধানে চলাফেরা করা উচিত। তা না হলে হাসপাতালে জায়গা মিলবে না। যদি প্রতিদিন ১০ হাজার করে রোগী শনাক্ত হয়, ১০ দিনেই পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমাদের সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। তবে পরিষ্কার মাস্ক পরতে হবে। কারণ, অপরিষ্কার মাস্ক পরলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ হতে পারে।#

পার্সটুডে