দেশের ৪২শতাংশ মানুষ এখন গরীব : জাতীয় ঐক্যর মাধ্যমে করোনা নিয়ন্ত্রণের আহবান বিএনপির

আপডেট: এপ্রিল ৯, ২০২১
0

বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন , ‘ করোনা মোকাবেলায় সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা, অব্যবস্থাপনাও দুর্নীতির জন্য এদেশের ১৬ কোটি মানুষকে একটি অনিশ্চিত গন্তব্যে নিয়ে চলছে। জাতির এই চরম দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আমরা জাতীয় ঐক্যর আহ্বান জানিয়েছিলাম। কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত আরএমজি সেক্টরে কয়েক হাজার গামেন্টস বন্ধ হয়েছে।

৪০ লক্ষ শ্রমিকের জীবন জীবিকা আবার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই দশলক্ষশ্রমিক চাকুরী হারিয়েছে। অর্থের অভাবে ঢাকা ছাড়ছে শতশত পরিবার। তাই সরকারের প্রতি আমাদের আবারও আহ্বান আসুন আমরা জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে এ সংকট মোকাবেলায় উদ্যোগী হই। মানুষ বাঁচাই-দেশ বাঁচাই।”

আজ বিকেলে গুলশান বিএনপি চেয়ারপার্সন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহবান জানান।

মীর্জা ফখরুল এ সময় করোনায় সরকারের চরম অব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যখাতে দুর্ণীতি, ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিম্মমমানের সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ , করোনা টেস্ট নিয়ে বাণিজ্য, কৌশল ও পরিকল্পনার অভাবের সামগ্রীক চিত্র তুলে ধরেন।

সমন্বয়হীনতা ও কৌশলগত পরিকল্পনার অভাব :-

শুরু থেকেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সরকারের অসহায়ত্ব ও চরম সমন্বয়হীনতা দৃশ ̈মান।জাতীয় পরামর্শক কমিশন স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ও নীতি নির্ধারকদের মধে ̈ কোন সমন্বয় ছিল না। পরামর্শক কমিটির সিদ্ধান্ত মানা হয়নি। সরকারী সিদ্ধান্ত ̄স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানেন না।লকডাউন না করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়। পোষাক শিল্পের কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য ̈মন্ত্রণালয় অবগত নয়। কোভিড নন কোভিড হাসপাতাল নির্ধারণ, চিকিৎসকগণ ও ̄স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম ছিল চরম হতাশাব্যঞ্জক।

বিজ্ঞানসম্মত ও কৌশলগত পরিকল্পনার অভাবে দেশের করোনা পরিস্থিতি ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে। চীনা বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান ডা: ওয়েন বীও এর মতে, “বাংলাদেশে অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার মতো কাজ হয়েছে”। এভাবে ভাইরাস মোকাবেলা করা সতি ̈ই কঠিন। কার্যকর লকডাউন, দ্রুত বেশি সংখ ̈ক পরীক্ষা, কন্টাক্ট ট্রেসিং ও চিকিৎসার পরিধি বাড়ানোর উত্তরণ সম্ভব ছিলো কিন্তু তা করা হয়নি।আমরা তখনও এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানালেও সরকারের এক গুয়েমির কারণে তা সম্ভব হয়নি, ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

দেশ-বিদেশে ভাবমূর্তি ও আস্থার সংকট :-টেস্ট জালিয়াতি এবং সরকারের করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থতা ও অদক্ষতা দেশ-বিদেশে চরম আস্থার সংকট তৈরী করেছে। করোনা টেস্ট জালিয়াতি বিদেশে কর্মরত ও অবস্থানরত আমাদের প্রবাসীরা চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছিলো। জাল সনদ নিয়ে বিদেশ গিয়ে বিপাকে পড়েছে শত শত ইতালি প্রবাসী। সেখানকার পত্রিকায় এমন প্রতিবেদন এসেছে যে ইতালির প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি বাংলাদেশিকে করোনা বোমা আখ্যায়িত করেছিলেন

করোনাকালে ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট :

-করোনার কারণে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত কর্মহীন মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রেরিত ত্রাণ সামগ্রী সরকারি দলের ̄স্থানীয় চেয়ারম্যান/ মেম্বার/ নেতারা ব্যাপকভাবে লুট করেছে। চাল-ডাল-তেল চুরির শত শত ঘটনা প্রতিদিন গণমাধ ̈মে প্রকাশিত হয়েছে অর্থাৎ মানুষের দুর্দশাকে পুঁজি করেও সরকার সমর্থিত লোকজন ত্রাণচুরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিলো। সরকার মোবাইলের মাধ্যমে সহায়তা পাঠিয়েছে মর্মে দাবী করেছে তাও সরকারী দুর্বত্তদের হিসাবে জমা পড়েছে মর্মে খবর বেরিয়েছে। আমরা সরকারকে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার দাবী জানিয়েছিলাম, সরকার শুধু মালিক পক্ষকে প্রণোদনা দিয়েছে কিন্তু শ্রমিকদের জন্য কোন সহায়তা ছিলনা।

তাই আমরা সকল উৎপাদনমুখী ও রপ্তানীমুখী শিল্পের শ্রমিকদের জন ̈ও প্রণোদনা/সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণার দাবী জানাচ্ছি। ঢাকা শহরের মতো পৃথিবীর ঘণ বসতীপূর্ণ এ শহরে সরকারের সামাজিক দুরত্ব ও ঘরে অবস্থান করার আহ্বান অকার্যকর হয়ে পড়ে। ঢাকায়১.১মিলিয়ন ব্যবসায়ীর দৈনিক আয় ১৬০টাকার কম। খাদ্য জীবিকার সন্ধানে এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে সরকার ঘরে রাখতে ব্যর্থ হয়। প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা না দিয়ে সরকারের আহ্বান অকার্যকর হয়ে পড়ে। দেশে দারিদ্রের হার ২১% থেকে বেড়ে ৪২% এ দাঁড়িয়েছে।

সরকারের নিষেধাজ্ঞা/লকডাউন পলিসি সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। দোকান কর্মচারী ও পরিবহন শ্রমিকদের খাবার/আর্থিক সহায়তা না দিয়ে বন্ধের ঘোষণা চরম অমানবিকতার পরিচয় বহন করছে। দেশে চরম আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত ১১০.০২ মিলিয়ন মানুষের মধে ̈ ৫৩.৬৪ মিলিয়ন দরিদ্র যাঁদের দৈনিক আয় ১৬০ টাকার কম। এরা ক্ষুধা ও দারিদ্রের জন ̈ ঘরে বসে থাকতে পারছেন না। গার্মেন্টস এ ৪ মিলিয়ন কর্মী কাজ করে। সহ স্রাধিক গার্মেন্টস ফেক্টরী ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ২.১৯ মিলিয়ন মানুষ চাকরীচ্যূত হয়েছে।