কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস স্ক্যাম র‌্যাবের অভিযানের আগে ও পরে অসংখ্য অভিযোগ হলেও মামলা নেয়নি পুলিশ

আপডেট: অক্টোবর ২৮, ২০২১
0

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পল্লবীতে আলোচিত কর্ণফূলী মাল্টিপারপাস সোসাইটির স্ক্যামের আগে
ও পরে পল্লবী থানায় ভূক্তভূগীরা মামলা করার জন্য অভিযোগ দিলেও মামলা
নেয়নি পল্লবী থানা পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নেতা ও
পুলিশের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠে কর্ণফূলী মাল্টিপারপাস সোসাইটি।
কর্ণফূলী মাল্টিপারপাস সোসাইটির গ্রাহকরা টাকা চাইতে গেলে পুলিশ ও
নেতাদের জোরে উল্টো মারধর করত গ্রাহকদের। গ্রাহকরা থানায় মামলা করতে গেলে
মামলা পর্যন্ত নেওয়া হতো না। অধিকাংশ দরিদ্র গ্রাহকদের টাকা আত্নসাত করার
কারণে গ্রাহকরা ছিল অসহায়। পুলিশ কর্ণফূলী মাল্টিপারপাস সোসাইটির পক্ষে
থাকায় গ্রাহকদের পক্ষ মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। যদিও
পল্লবী থানা পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে উঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
র‌্যাব-৪ এর ভাষ্য অনুযায়ী, সমবায় সমিতির নামে প্রতিষ্ঠানটির মালিক জসীম
উদ্দিন ২৫-৩০ হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা
করা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের ১১০ কোটি টাকা লোপাট করেছে। বর্তমানে
তাদের অ্যাকাউন্টে আছে ৮০ লাখ টাকার মতো।
কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস সোসাইটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা রাখত। এক লাখ
টাকা জমা রাখলে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি
দিত তারা। আর যে গ্রাহক জোগাড় করে দিত, তাকে দেওয়া হতো এক হাজার টাকা।
আবার সঞ্চয়ী হিসাবও চালু করেছিল তারা।
কেউ যদি মাসে ১ হাজার টাকা জমা দিত, তাহলে পাঁচ বছর পর তাঁকে ৯০ হাজার
টাকা দেওয়ার কথা বলেছিল কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর টাকা
ভেঙে ভেঙে প্রথম কয়েক মাস দু-চার হাজার টাকা করে দিলেও পরে তারা ঘোরাতে
শুরু করে।
ভুক্তভোগীরা পোশাককর্মী, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, অটোচালক, সবজি-ফল
ব্যবসায়ী, গৃহকর্মীসহ সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষ। কাগজে–কলমে প্রতিষ্ঠানটির
সদস্যসংখ্যা পাঁচ শতাধিক।
র‌্যাব জানায়, ভুক্তভোগীদের মূলধনের পুরোটাই হাতিয়ে নিয়েছেন জসীম উদ্দিন।
পরে এই টাকা দিয়ে জসীম মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কর্ণফুলী রিয়েল
এস্টেট লি., জসীম ইন্টারন্যাশনাল ওভারসিস লিমিটেড, জসীম স্টুডেন্টস
কনসালটেন্সি ফার্ম লিমিটেড, জসীম ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, জসীম
ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও জসীম নিট কম্পোজিট লিমিটেডের মালিক হন। তাঁর দুই
স্ত্রীর একজন বসুন্ধরায় ও অন্যজন গ্রিন রোডে থাকেন। জসীমের একটি প্রাডো
গাড়ি রয়েছে, গাজীপুরের মাওনায় প্লট ও তিনতলা বাড়ি, মিরপুরে বাড়ি, ঢাকার
বাইরে কয়েক একর জমির সন্ধান এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে।
গত সোমবার দুপুর দেড়টা থেকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত অভিযান
চালিয়ে র‌্যাব ১০ জনকে গ্রেফতার করে।
গত ১৬ অক্টোবর সুজন নামে দুই ব্যক্তি পল্লবী থানায় দু’টি জিডি করে। সেদিন
পল্লবী থানার এসআই কাউসার মাহমুদ ও এসআই জিতু কর্ণফূলী মাল্টিপারপাস
সোসাইটির পল্লবীস্থ অফিসে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, এই সময় র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতারকৃত
প্রকল্প পরিচালক শাকিল আহমেদ এসআই কাউসার মাহমুদকে অসংখ্য মানুষের সামনে
পল্লবী থানার ওসিকে মোবাইলে কল করে ধরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে এসআই কাউসার ও
এসআই জিতু কর্ণফূলী মাল্টিপারপাস সোসাইটির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে
ফিরে আসে।
শুধু ১৬ অক্টোবরই নয়, তার তিন মাস আগে পলি আক্তার নামে এক নারী টাকা
চাইতে গেলে শাকিল আহমেদসহ অন্যান্যরা তাকে ও তার স্বামীকে নির্যাতনের
অভিযোগে পল্লবী থানায় অভিযোগ দেয়। অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার
এসআই জিতু। তিন মাস পার হয়ে গেলেও কর্ণফূলী মাল্টিপারপাস সোসাইটির
বিরুদ্ধে কোন মামলা নেয়নি পল্লবী থানা পুলিশ। বরং, কর্ণফূলী মাল্টিপারপাস
সোসাইটির পক্ষ নিয়ে এসআই জিতু পলি আক্তারের সাথে খারাপ ব্যবহারের কথা
জানায়। যদিও র‌্যাবের আটকের পর করা মামলায় পলি আক্তারকে মারধরের কথা উঠে
এসেছে।
এই বিষয়ে এসআই জিতু বলেন, পলি আক্তার মামলা করতে চায়নি। মূলতঃ টাকা আদায়
করতে চেয়েছে।
অভিযোগ হলে পুলিশ রুটিন মাফিক মামলা রেকর্ড করবে, মামলা কেন হলো না,
জানতে চাইলে এসআই জিতু বিষয়টি এড়িয়ে যায়।
শুধু পলি আক্তারই নয়, পল্লবী থানায় অসংখ্য গ্রাহক কর্ণফূলী মাল্টিপারপাস
সোসাইটির বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ ও জিডি করলেও পল্লবী থানা পুলিশ কোন
ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।
গত ২২ অক্টোবর মোঃ শাহিন নামে কর্ণফূলী মাল্টিপারপাস সোসাইটির এক গ্রাহক
পল্লবী থানায় তার এবং তার সঙ্গিয় রাকিবের সঞ্চিত টাকার বিষয়ে অভিযোগ
দায়ের করে। অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব পায় এসআই তারেক বিন খালিদ। কিন্তু,
আজো পল্লবী থানায় মামলা আকারে অভিযোগটি রেকর্ড হয়নি।
এই বিষয়ে এসআই এসআই তারেক বিন খালিদ বলেন, সময়ের অভাবে বিষয়টি তদন্ত করতে
পারিনি। রাষ্ট্রীয় কাজে বাস্ত ছিলাম।
গত ২৫ অক্টোবর র‌্যাবের অভিযানের মাঝেই পল্লবী থানায় মোঃ মাহিন, জাকির ও
আনোয়ার নামে তিন ব্যক্তি পৃথক তিনটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ গুলোর
তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই পিন্টু। কিন্তু, একটি মামলাও রেকর্ড
হয়নি।
এই বিষয়ে এসআই পিন্টু বলেন, আপনার পরিচিত কেউ হলে পাঠিয়ে দেন। মামলা
রেকর্ড করা হবে।
এই সকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ওসি বলেন, অভিযোগের বিষয়
গুলো নিয়ে খোজ নিবো। মামলা করার মতো হলে মামলা নেওয়া হবে।
কর্ণফূলী মাল্টিপারপাস সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক ওসিকে মোবাইলে কল করে
এসআই কাউসারকে ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অসত্য বলে ওসি দাবী করেন।