কিশোর গ্যাং ডি কোম্পানীর লন্ডন বাপ্পি ও ডন নীরবসহ ১২ সদস্য অস্ত্রসহ গ্রেফতার

আপডেট: জুন ৬, ২০২১
0

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কিশোর গ্যাং তথা গ্যাং কালচার এবং উঠতি বয়সি ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সাথে অন্য গ্রুপের মারামারি করা বহুল আলোচিত ঘটনায় পরিনত হয়েছে। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করার জন্য উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেধে ঘুরে বেড়ায়, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়, পথচারীদের উত্ত্যক্ত করে এবং ছোট খাট বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের উপর চড়াও হয়ে মারামারি-খুনোখুনি করে। এছাড়াও তারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একই এলাকায় অন্যান্য গ্রুপের সাথে প্রায়সই কোন্দলে লিপ্ত থাকে। এই এড়ানোর বিষয়টিকে তারা তাদের ক্ষমতা হিসেবে ভাবে এবং কোন ঘটনায় কেউ কোন প্রতিবাদ করলেও ক্ষমতা জাহির করতে মারামারি করাসহ অনেক সময় খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না।
গত ১ জুন রাতে কিশোর গ্যাং ডি কোম্পানীর কয়েকজন সদস্য গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন আরিচপুর এলাকাস্থ ভূঁইয়া পাড়া জামে মসজিদের সামনে জনৈক মোঃ তুহিন আহম্মেদ এবং তুষার আহম্মেদ’কে দেশীয় অস্ত্র দ্বারা আঘাত করতঃ গুরুতর জখম করে। এই সংক্রান্তে ভিকটিম মোঃ তুহিন আহম্মেদ বাদী হয়ে জিএমপি, টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলার দায়ের করেন, যার নম্বর-০২ তারিখ-০২/০৬/২০২১ ইং ধারা- ১৪১/৩৪১/৩২৩/৩২৬/৩০৭ /৩৭৯/৫০৬ পেনাল কোড। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার কারণে তারা বাদীর বাড়িঘর ও দোকানপাটে ব্যাপক ভাংচুর করে ভীতির সঞ্চার করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৩ জুন ২০২১ ইং তারিখ রাতে একই গ্রুপের কয়েকজন সদস্য গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন আরিচপুর এলাকাস্থ একটি দর্জি দোকান ভাংচুর এবং চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করার ফলে জনৈক আব্দুল মালেকের ছেলে ১) আরজু মিয়া (৩৪) ও সুজন মিয়া (২৪) এবং সুজনের স্ত্রী রুপালী (২১) গুরুতর আহত হয়। কিশোর গ্যাংয়ের এই নৃশংস হামলার বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয় এবং সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এরই প্রেক্ষিতে কিশোর গ্যাং এর বিপদগামী সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-১ সাস্প্রতিক সময়ে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দলটি গত ০৫ জুন ২০২১ ইং তারিখ সময় আনুমানিক ২৩৩০ ঘটিকা হতে সারারাত ব্যাপী এর টঙ্গী ও উত্তরা এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ডি কোম্পানী @ ডেয়ারিং কোম্পানী’ কিশোর গ্যাং গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক ১) মোঃ রাজিব চৌধুরী বাপ্পি @ লন্ডন বাপ্পি (৩৫), পিতা- আঃ মালেক, জেলা-গাজীপুর, মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব দানকারী ২) মোঃ মইন আহমেদ নীরব @ ডন নীরব (২৪), পিতা- বোরহান উদ্দিন, জেলা-চাঁদপুর ৩) মোঃ তানভীর হোসেন @ ব্যাটারি তানভীর (২৪), পিতা- মোঃ ইসমাইল হোসেন, জেলা-চাঁদপুর, ৪) মোঃ পারভেজ @ ছোট পারভেজ (১৯), পিতা- মোঃ ওসমান গনি, জেলা- ময়মনসিংহ, ৫) মোঃ তুহিন @ তারকাটা তুহিন (২১), পিতা- মোঃ শাহ আলম, জেলা- বরিশাল, ৬) মোঃ রাজিব আহমেদ নীরব @ টম নীরব (৩০), পিতা- মোঃ আলমগীর হোসেন, জেলা-খুলনা, ৭) মোঃ সাইফুল ইসলাম শাওন (২৩), পিতা- মোঃ শাহ আলম, জেলা-গাজীপুর, ৮) মোঃ রবিউল হাসান (২০), পিতা- হোচেন আলী, জেলা- বি-বাড়ীয়া, ৯) মোঃ শাকিল @ বাঘা শাকিল (২৮), পিতা- মোঃ সামচুল আলম, জেলা-গাজীপুর, ১০) মোঃ ইয়াছিন আরাফাত @ বিস্কুট ইয়াছিন (১৮), পিতা- মৃত আঃ ছাত্তার, জেলা-গাজীপুর, ১১) মোঃ মাহফুজুর রহমান ফাহিম (২২), পিতা- ইদ্রিস আলী, জেলা-গাজীপুর ও ১২) ইয়াছিন মিয়া @ প্রিন্স ইয়াছিন (১৯), পিতা- মোঃ শাহাজাহান মিয়া, জেলা- ময়মনসিংহ’দেরকে গ্রেফতার করে। এসময় ধৃত আসামীদের নিকট হতে ১২ টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ৬১৩০/-টাকা উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে ধৃত আসামীদের দেয়া তথ্যমতে র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল ধৃত আসামীদের টঙ্গির বাপ্পীর আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে ০২ টি বিদেশী পিস্তল, ০২ টি চাপাতি, ০২ টি রামদা, ০৩ টি লোহার রড এবং ০১ টি ছুরি উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ডি কোম্পানী @ ডেয়ারিং কোম্পানী’ কিশোর গ্যাং গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। গ্রেফতারকৃত আসামীরা মাদক সেবন, স্কুল-কলেজে বুলিং, র‌্যাগিং, ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিল মর্মে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা বর্ণিত হামলার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।