কুমিল্লায় যুবদলের ইফতার পার্টিতে পুলিশী হামলার নেপথ্যে বিএনপির নেতারা‍‍‍!!

আপডেট: এপ্রিল ৬, ২০২৩
0

কুমিল্লা প্রতিনিধি:
যুবদলের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা এবং ইফতার পার্টিতে আসলে কি হয়েছিল ? যা হয়েছে তাকে ভ্রাতৃঘাতী আচরন ছাড়া অন্য কিছু বলার উপায় নেই। এমন আচরন দেশের ও বিএনপির জন্য কতটুকু সহায়ক হবে তা নীরিক্ষার প্রয়োজন আছে।

গত ০৪/০৪/২০২৩ ইং, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কুমিল্লা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা এবং ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয় কেন্দ্রীয় নির্দেশ অনুযায়ী। এর জন্য স্থান নির্ধারন করা হয় কুমিল্লা টাউন হল অডিটোরিয়ামে। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের উপচে পরা ভীর ছিল লক্ষনীয়। আনুমানিক বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সভার কাজ শুরু হয়। যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের বক্তব্য যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে, সে সময় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়াল বক্তব্য দিতে শুরু করেন বিএনপির এ্যাক্টিং চেয়ারপারসন জনাব তারেক রহমান।

জনাব তারেক রহমানের বক্তব্য শুরুর কয়েক মিনিট পরেই ১৫-২০ জন পুলিশ সদস্য অযাচিতভাবে হল রুমে ঢুকে মাইক বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা চালায়। প্রশ্ন হলো কেন পুলিশ এ কাজ করতে গেলো ? এমন নয় তো যে, পুলিশের অনুমতি ছাড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ! প্রশাসনিক অনুমতি ছিল। ফলে ক্ষুব্ধ যুবদলের সাধারন নেতাকর্মীদের প্রবল বাধায় তাদের সে চেষ্টা ব্যার্থ হয়। এখন কথা হল, সারাদেশে যখন শান্তিপুর্ন কর্মসূচির মাধ্যমে নির্ভেজাল ইফতার মাহফিল ও প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে তখন কুমিল্লায় এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে কিভাবে ! অনুষ্ঠানে এমন কোনো বিশৃংখলা ছিল না যে, শৃংখলা ফিরিয়ে আনার জন্যে পুলিশকে প্রবেশ করতে হয়েছিল। যদি তা না হয়ে থাকে তবে এটা ভেবে দেখা প্রয়োজন, এমন জঘন্য বর্বর ঘটনার সুত্রপাত কিভাবে হলো ?

১. পুলিশ যখন প্রবেশ করে তখন টাউন হলের সকল কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ ছিল। সেই তালা কে বা কারা খুলে দিয়েছিল এবং কেন খুলে দিয়েছিল?

২. তালা খুলে দেয়ার দায়িত্বে কারা ছিল এবং কার নির্দেশে তালা খুলে দেয়া হল ?

৩. জুনিয়র একজন নেতার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যে সভা শুরু হলো, সেই নেতাকে স্টেজে বসে প্রকাশ্যে গালাগাল করেন কুমিল্লা দক্ষিন জেলা যুবদলের সভাপতি ও বর্তমান কুমিল্লা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জনাব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াশিম। জাতীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এমন আচরন শুরুতেই একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

৪. দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মেয়র নির্বাচন করা এবং দল থেকে আজীবন বহিস্কৃত সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জনাব নিজাম উদ্দিন কায়সার দলীয় সকল কর্মকান্ডে নিজের সরব উপস্থিতি নিশ্চিত করে কোন শক্তিতে ? দলের ভেতরের কর্মকান্ডে কায়সার সাহেব কোন আইনে দীর্ঘদিন ধরে উপস্থিত থাকেন ? তার খুটির জোর কি ?

৫. একজন ওয়াসিম দীর্ঘদিন যুবদলের রাজনীতি করেছেন এবং সর্বশেষ যুবদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক পদে আসীন আছেন। এতদ স্বত্তেও তিনি কোন যুক্তিতে আবারও জেলা যুবদলের সভাপতি হতে চান ? নেতৃত্ব কুক্ষিগত করে রাখার মাশুল কি বিএনপি আজতক দিয়ে যাচ্ছে না !! আমাদেরকে বুঝতে হবে। নতুন নেতৃত্বের জন্য পদ আকড়ে না থেকে পদ সৃষ্টির সুযোগ করে দিতে হবে। কেবল নিজেকে নয়, দলটাকেও দেখতে হবে।

৬. যে অপরাধে সাবেক মেয়র জনাব মনিরুল হক সাক্কু দলের ধারে কাছেও ঘেষতে পারেন না সেই একই অপরাধে, একই শাস্তি মাথায় নিয়ে নিজাম উদ্দিন কায়সার কিভাবে রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন ?

৭. দল বিরোধী কর্মকান্ডে অভিযুক্ত এবং দন্ডিত কায়সার এবং যুবদলের বর্তমান সভাপতি ওয়াশিম যদি দলের চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য এ কান্ডে যুক্ত থাকেন তবে কুমিল্লার ভবিষ্যৎ বিএনপিও এর অংগসংগঠন গুলো মারাত্মক ক্ষতির মুখে পরবে সন্দেহ নেই। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরন দলীয় সাংগঠনিক কোন আইনেই বৈধ হতে পারে না।

৮. এটা পরিষ্কার বুঝা যায়, যে সময়ে ঢাকা সহ সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে ইফতার কর্মসূচি সমুহ সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে, সে সময়ে কুমিল্লায় এ ধরনের ঘটনা কেন হবে ? এর একটা সফল পোষ্টমর্টেম অন্যদের জন্য শিক্ষা হবে সন্দেহ নেই।

৯. সাবেক মেয়র সাক্কু সাহেব এবং স্থানীয় এম্পির সু-সম্পর্কের মাশুল দিতে হয়েছে দলকে। এ সত্য কখনোই গোপন করা যাবে না অন্ততঃ কুমিল্লার রাজনৈতিক প্রেক্ষিত বিবেচনায়। বিভিন্ন সুত্র অনুযায়ী দলের অতিরিক্ত সুবিধাভোগী অংশ এখন সাক্কু স্টাইল রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন এবং রয়েছেন। আমাদেরকে অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং এর দ্রুত বিহিত না হলে এ রাজনীতির ফসল ঘরে তুলবে আওয়ামী লীগ। কুমিল্লার বর্তমান মেয়র, সাক্কু এবং কায়সারের দলীয় শৃঙ্খলা না মেনে নির্বাচনে যাওয়ার ফসল। ডেডিকেটেড এবং ত্যাগী নেতাকর্মীরা সব জেনে বুঝেও চুপ থাকে, তাদেরকে চুপ থাকতে বাধ্য করা হয়। বিএনপিকে এইসব মাফিয়াইজম থেকে বের হতে হবে বলে মত দেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতাকর্মীরা।

১০. জেলা বিএনপির আহবায়ক জনাব ইয়াসিন সাহেব নিজাম উদ্দিন কায়সারের ভগ্নিপতি। মেয়র নির্বাচনের পুর্বের ১৫ বছর জনাব ইয়াসিন সাহেব দলীয় কার্যালয় কিংবা কান্দিরপাড়ে কোনো কর্মসূচী পালন করতে পারেনি। কিন্তু গত মেয়র নির্বাচন শেষে লীগের বিজয় নিশ্চিত হবার পর দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে এর দখল কে এবং কিভাবে বিনা বাধায় নিয়েছে তা সামান্য তদন্তেই বের হয়ে আসবে।

১১. কুমিল্লার জনগণ পরিষ্কার বুঝতে পারে যে ইয়াসিন সাহেবের শ্যালক কায়সার এর কারণে আওয়ামী লীগের মেয়র নির্বাচিত হয়। ফলে পুরস্কার হিসেবে স্থানীয় আওয়ামীলীগ বিএনপির পার্টি অফিস দখলে নেবার সুযোগ করে দিয়েছেন। সিটি কর্পোরেশনের ১০% কাজ কায়সার কে দেওয়া হচ্ছে বলে লোকমুখে শোনা যায়।

ত্যাক্ত বিরক্ত নির্যাতিত নানান স্তরের নেতাকর্মীদের সাথে একান্ত আলাপে উঠে এসেছে কুমিল্লা বিএনপির বর্তমান এ বাস্তবতা। নিজের জীবনের নিরাপত্তা নেই, পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় নেমে যাওয়া ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এ প্রতিবেদককে বলেন, পারলে আমাদের বাস্তবতা ও সত্য সঠিক বার্তা দলীয় চেয়ারম্যানকে পৌছে দিয়েন।

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়)