কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।এতে করে জেলার ৯টি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরায় এখন তারা দূর্ভোগে পরেছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে আরও নতুন নতুন এলাকা।
রোববার (১৯ জুন) সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সুত্রে জানা গেছে, ধরলার পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি কমে গিয়ে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নদ-নদীর অব্যাহত পানিবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল গুলির মানুষজন। দুর্গম চরাঞ্চলের অনেক পরিবার নৌকা ও বাঁশের মাচায় আশ্রয় নিয়ে দিন পাড় করছে। পানির তোড়ে ঘরবাড়ী ভেসে যাওয়ার আতঙ্কে অনেকেই ঘর-বাড়ি ভেঙে নিয়ে উঁচু স্থানে তুলে নিয়ে রাখছেন। অনেকের বসতবাড়ী পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রান্না করে খেতে পারছে না তারা। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পনির সংকট দেখা দিয়েছে এসব মানুষজনের মাঝে। নিজেদের পাশাপাশি গবাদি পশুরও খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন। পানি বৃদ্ধির ফলে এসব এলাকার অনেক পরিবারই তাদের গবাদি পশু নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বন্যা কবলিত এসব এলাকার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে এসব এলাকার কোমলমতি শিশুদের পাঠদান।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, আমার ওয়ার্ডের আরাজী পিপুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অপর একটি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ স্কুল দুটির পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
যাত্রাপুরের জগমনের চরের আকবর আলী বলেন, পানি বৃদ্ধির ফলে চারদিন থেকে ঘরের ভিতর পানি। তাই ঘরে থাকার উপায় নেই। বর্তমানে নৌকায় অবস্থান করছি। চুলা জ্বালাতে পারছি না। এখন পর্যন্ত কোন সহযোগীতা পাই।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া জানান, আমার ইউনিয়নের মশালের চর ও পুর্বমশালেরসহ সবমিলে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানি বন্দি হয়েছে। এরমধ্যে কিছু পরিবার ফকিরের চর আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও আশ্রয় কেন্দ্রটিও ঝুকির মধ্যে পড়েছে। এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ সহায়তা পাইনি।
বন্যা কবলিত এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের নিকট খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সবমিলে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি জীবন-যাপন করছে।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ভারী বর্ষনে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বেশীর ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং টিম ও বন্যা নিয়ন্ত্রন সমন্বয় কক্ষ চালু করা হয়েছে।
অন্যদিকে পানির তোড়ে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে দুধকুমার নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ১শ মিটার ভেঙ্গে প্লাবিত হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রাম। এতে করে কয়েক শত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছেন। তারা দূর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে সবগুলো পয়েন্টে বিপৎসীমার আরও উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তার পানি কমে কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বন্যা কবলিতদের জন্য ৯ উপজেলায় ২শ ৯৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১১ লাখ টাকা, শুকনো খাবার ১হাজার প্যাকেট, ১৭ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ১৯ লাখ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলার রৌমারী, রাজিবপুর ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ত্রান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকী উপজেলা গুলোতেও দ্রুতই শুরু করা হবে।
###