ক্ষমতাসীনদের ‘কারসাঁজি’তে ভরা মৌসুমেও চালের দাম বেড়েছে—মির্জা ফখরুল

আপডেট: মে ১৮, ২০২২
0

– ক্ষমতাসীনদের ‘কারসাঁজি’তে ভরা মৌসুমেও চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার দুপুরে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তীয়তাবাদী কৃষক দলের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ এই ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কথা না। এখন তো চালের দাম পড়ার কথা, কমার কথা। কারণ বোরো কাটা হচ্ছে, দাম কমে আসার কথা। সেই জায়গায় প্রত্যেকটি চালের দাম বেড়ে গেছে। তার মানে –‘দেয়ার ইজ সাম প্রোভলেমস ইন প্ল্যানিং, টোটাল প্ল্যানিংয়ের মধ্যে প্রোভলেম আছে’। সমস্যা হচ্ছে যে, এমন এমন লোককে এমন এমন দায়িত্ব দিয়ে্ছে যারা যে ব্যবসা করেন তাদেরকে সেই দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছে। এখন খাদ্য ব্যবসা যারা করেন তারা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকেন।”

‘‘ ফলে যা হচ্ছে ওখানে ব্যবসাটা প্রধান হয়ে দাঁড়াচ্ছে।এখন কী হচ্ছে আপনার? বড় বড় কৃষকেরা ধান তারা মজুদ করছে, ব্যবসায়ীরা ধান মজুদ করছে। কারণ কিছুদিন পর ধানের দাম আরো বাড়বে এবং তাদের মুনাফা বাড়বে। এটাই কারসাঁজি ওদের।”

সম্প্রতি কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন ও শহিদুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সরজমিন হাওড় এলাকা পরির্দশন করে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের এই সংবাদ সম্মেলন হয়। ‘হাওড়ে বাঁধ নির্মাণে কোটি কোটি টাকা লুটপাট-সর্বশান্ত কৃষকের ক্ষতিপুরণ দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে ৪ দফা সুপারিশমালা উপস্থাপন করেছে তারা।

হাওড় অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ হাওড়ের সমস্যা আজকে নতুন না, এটা পুরনো সমস্যা। আপনি খেয়াল করে দেখবেন প্রায় প্রতিবছরই উজান থেকে চলে আসে পানির ঢল। আমি এই সময়ে নিজেই একবার গিয়েছিলাম সুনামগঞ্জে। এই সময়ে পানি ঢল গোটা এলাকাকে প্লাবিত করে দেয়। যেখান থেকে পানি আসছে সেখান যদি প্রটেশন দেয়া যায়, সেখানে যদি বাঁধ নির্মাণ করা যায় বা রিজার্ভার নির্মান করা যায় তাহলে সেখানে দুইটা কাজ হতে পারে।একটা হচ্ছে বাড়তি পানি আটকিয়ে রাখতে পারেন এবং সেটাকে পরবর্তিতে সেচের ব্যবস্থা করে একটা নয়, দুই-তিনটা ফসল করা যেতে পারে। দুর্ভাগ্যক্রমে এখন পর্যন্ত সেই ধরনের কোনো কর্মসূচি বা পরিকল্পনা নেয়া হয়নি।”

‘‘ বর্তমান সরকারের সমস্যা হলো, সরকার সেই কাজগুলোই হাতে নেয় যেখানে তাদের নিজস্ব মুনাফা হয়, দুর্নীতি হয়, কমিশন পায়, লক্ষ্ লক্ষ কোটি কোটি টাকা বানাতে পারে। হাওড় এলাকায় বাঁধ দেয়া হয়েছে। সেই বাঁধগুলো এতো ভঙ্গুর, এতো খারাপ হয়েছে যে সেই বাঁধগুলো চব্বিশ ঘন্টাও পানির চাপকে ধরে রাখতে পারে না। অর্থাত সেখানে পুকুর চুরি তারা করেছে এবং এটাই হচ্ছে সারা দেশে, হাওড়ে তাই হচ্ছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ কৃষিতে সরকার প্রথম দিকে একটা কার্ডের ব্যবস্থা করেছিলো সেই কার্ডের মাধ্যমে তারা সার দেবে। সেই সারও কিন্তু কৃষকের কাছে পৌঁছায় না। আপনাদের মনে থাকার কথা ২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রচারনা করে তখন তারা(আওয়ামী লীগ)বলেছিলো কৃষকদের বিনামূল্যে সার দেবে। ভোট নেওয়ার জন্য এই সমস্ত মুখরোচক কথা তারা অনেক বলেছে।সেটা তো দূরে থাক, তিন‘শ টাকার ইউরিয়া সার এখন ১২‘শ টাকায়ও পাওয়া যায় না। এটাই সমস্যা।”

‘‘ মেশিন বা পাওয়ার টিলারস, টিলারস এগুলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের লোকদের বিনা পয়সায় বিলি করেছে এবং সেখানে বড় রকমের দুর্নীতি করেছে। এই বিষয়গুলো দুর্ভাগ্যক্রমে সেইভাবে মিডিয়াতে আসে না। কৃষিতে যে দুর্নীতি হচ্ছে সেটা সহজে আসে না। আমি অনুরোধ করি গণমাধ্যমকে আপনারা কৃষির সমস্যা ও কৃষকদের সমস্যাগুলো তুলে আনবেন।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে কৃষি কাজ অলাভজনক হওয়াতে প্রান্তিক কৃষকের তো ছেড়েই চলে গেছে, তারা ভিন্ন পেশায় কেউ রিকশা চালায়, কেউ ভ্যান চালায়। এমন কী মধ্যম কৃষক যারা আছে তারাও কৃষি কাজ ছেড়ে দিচ্ছে কারণ এটা এ্খন আর লাভজনক পেশা হচ্ছে না।”

‘‘ আরেকটা বড় সমস্যা তৈরি হতে যাচ্ছে খাদ্যশষ্য-এটার দাম এতো ভেরি করে যে ধান এখন আবাধ করতে চায় না লোকে। কারণ ধানে পয়সা নেই। তার বদলে তরমুজ করছে, ভুট্টা করছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা দারুণভাবে বিপন্ন হয়ে পড়ছে।”

কৃষক ও কৃষি খাতের উন্নয়নে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শাসনমালে নেয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা সবাই বলি কৃষি সবচেয়ে বেশি আর্থিকখাতে আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যক্রমে কৃষিকে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও পরবর্তিকালে বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামল ছাড়া খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচি ও কার্য্ক্রম কেউ গ্রহন করেনি।”

কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, কৃষক দলের গৌতম চক্রবর্তী, জামাল উদ্দিন খান মিলন, এসএম ফয়সাল, ভিপি ইব্রাহিম, সৈয়দ অলিউল্লা্হ সিদ্দিকী, ফেরদৌস পাটোয়ারি, মাহুমদা হাবিবা, ইউসুফ আলী মোল্লা, মেহেদি হাসান পলাশ, ইশতিয়াক আহমেদ নাসির, জাহাঙ্গীর আলম, কাদের সিদ্দিকীসহ কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।