খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা

আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২১
0

হাসপাতালে মুমুর্ষ অবস্থা চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার দাবিতে আরও এক দফা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।

আজ (বুধবার) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দল এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের যৌথ সভায় আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়।

যৌথ সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ঘোষিত কর্মসুচী অনুযায়ী আগামীকাল ২৫ নভেম্বর রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে জাতীয়তাবাদী যুবদল। রাজধানীতে বিক্ষোভ হবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। পরদিন ২৬ নভেম্বর বাদ জুমা সারাদেশের মসজিদে মসজিদে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া করা হবে। এছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভার আয়োজন করবে।এর পর ২৮ নভেম্বর রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল। ঢাকায় বিক্ষোভ পালিত হবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে।

এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সারা দেশে জেলা প্রশাসকদের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছেন বিএনপির নেতারা।

গত সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা: কাদের

তবে বিএনপি’র এসব কর্মসূচিকে “বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা“ বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন দল। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশের উন্নয়ন-অর্জনে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপি সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে সাথে নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে। তিনি দলের নেতাকর্মীদের এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

আজ সকালে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে নিজ বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার মত বিএনপির এমন কোনো মুখ নেই, তাই তারা আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে নতুন নতুন ইস্যু খুঁজে বেড়াচ্ছে।

বিএনপির রাজনীতি মাঠে নয়, তাদের রাজনীতি এখন মিডিয়া নির্ভর উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক নেতা তারেক রহমান লন্ডনে বসে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে উসকানি দিয়ে যাচ্ছে।

যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে: ডা. জাফরুল্লাহ

এদিকে, রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন। তাই সম্ভব হলে আজকে রাতেই ওনাকে বিদেশে ফ্লাই করা উচিত। আর না হলে যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে।

আজ রাজধানীর নগর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আহুত নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে এমন উদ্বেগের কথা জানান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

এর আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ রাজনৈতিক এবং নাগরিক সমাজের নেতারা। সেখানে তারা প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় অতিবাহিত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা গতকাল বিকালে খালেদা জিয়ারকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। যা দেখেছি সম্প্রতিককালে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের নজরে আসেনি। খালেদা জিয়া কতক্ষণ, কয় মিনিট, কয় দিন বাঁচবেন সেটা আমি বলতে পারব না। তবে এটা বলতে পারি খালেদা জিয়া চরম ক্রান্তিকালে আছেন।

এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা বাতিল করে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের আদেশ দিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে আবেদন করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

আবেদনে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা আপনার আছে। যে ক্ষমতা সংবিধান আপনাকে দিয়েছে। দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জীবন রক্ষায় সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বাতিল করে, বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করে বাঁচার সুযোগ দিন।”

উল্লেখ্য, দু’টি দুর্নীতির মামলার সাজা প্রাপ্ত ৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। সর্তসাপেক্ষে দণ্ড স্থগিত রেখে সাময়িক ভাবে মুক্ত বেগম জিয়া নিজ বাসায় অবস্থান করছিলেন। গত এপ্রিলে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এরপর করোনা পরবর্তী জটিলতায় ২৭ এপ্রিল ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন এবং এক মাসের বেশি সময় হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি থাকেন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে ১৯ জুন বাসায় ফেরেন। সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ১৩ নভেম্বর তাকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিন থেকেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে সিসিইউতে রাখা হয় তাকে। ইতোমধ্যে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে তার ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেছেন।#