খাল-বিল বাওড়ে পানি নেই, পাট নিয়ে সারা দেশের দিশেহারা কৃষক

আপডেট: জুলাই ২৪, ২০২২
0

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভরা বর্ষা মৌসুমেও খাল-বিল, পুকুর, ডোবা, নালা, জলাশয়গুলোতে বর্ষার পানি না আসায় পাটজাগ না দিতে পেরে কৃষক-কিষানিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। সোনালি আঁশ পাট কেটে পানির আশায় খেতেই স্তুপ করে রেখেছেন অনেক কৃষক, এতে রৌদ্রতাপে অনেক পাট খেতেই শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। পাট কাটাসহ ফসল ঘরে ওঠানো নিয়ে মহাসংকটে সময় পার করছেন চাষিরা। পানি স্বল্পতা ও শ্রমিক সংকট এতে নাজেহাল অবস্থায় কৃষকরা।

গাইবান্ধা ,ঝিনাইদহ,ময়মনসিংহ ,জামালপুর , ত্রিশাল, জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে কৃষকদের এমন সংকট।
খাল-বিল বাওড় অধ্যুষিত ঝিনাইদহে কৃষকের কান্না :
খাল বিল ও ডোবায় পানি নেই, স্থানীয় নদিতেও মিলছে না পাটজাগের জায়গা। তাই পাট নিয়ে দিশেহারা চাষি। অন্যদিকে, সামান্য পানির সন্ধান পেলেও পাটের রং কালো হওয়া এবং মান নিম্মমানের হবার দুশ্চিন্তাও রয়েছে তাদের। খরা পরিস্থিতি সামাল দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও এ মুহর্তে কোন সমাধান দিতে পারছে না।

ঝিনাইদহের সীমান্তবর্তী মহেশপুর উপজেলার জালালপুর ও শৈলকুপার কবিরপুর এবং ঝাউদিয়া গ্রামে পাটচাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকবছরে খরা পরিস্থিতির কারণে খাল বিল ও ডোবার পানি শুকিয়ে যাওয়া, স্থানীয় নদিতেও পাটজাগের জায়গার সংকুলান না হওয়া এবং সর্বোপরি পাটচাষে দিনমজুরদের দৈনিক মজুরি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাদের মতে, গরু বা ঘোড়ার গাড়ি, রিকসাভ্যান বা থ্রিহুইলারে বোঝাই করে পাট নিয়ে তারা এগ্রাম সেগ্রাম করে দিন পার করতে থাকায় কাঁচাপাট কিছুটা শুকিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে কোথাও কম পানিতে পাটজাগ দেয়া সম্ভব হলেও পানিতে ডুবিয়ে রাখতে জাগের ওপর মাটি চাপা দিতে হচ্ছে।

এতে পাটের রং কালো হয়ে যাচ্ছে, মান খারাপ হচ্ছে। ওসব পাটের দাম তূলনামূলক কম হবে বলে তারা মনে করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ উপপরিচালকের অফিসসূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ সদর, কালিগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, শৈলকুপা ও হরিণাকুন্ডু উপজেলায় গত মৌসুমে ২২, ৮৬০ হেক্টরে ৬২,৮৬৫ টন পাট উৎপাদন হয়। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ছিল ২.৭৫ টন। এবার ২২,৮৪০ হেক্টরে ৬২,৯০০ টন পাটের উৎপাদন হবে বলে আশা করাছেন তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ উপপরিচালক আসগর আলির সাথে কথা বললে তিনি জানান, খরা পরিস্থিতির মত নাজুক আবহাওয়ার ওপর কারো হাত না থাকায় প্রাকৃতিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে পাটচাষিসহ সবাই। পাটজাগ বিষয়ে নতুন কোন প্রযুক্তি উদ্ভাবন না হওয়া পর্যন্ত পাটচাষিদের নিস্তার পাওয়া কঠিন বলে মনে করেন ওই কৃষি কর্মকর্তা।

এদিকে জয়পুরহাটে পাটের ভালো ফলন হলেও তীব্র তাপদাহ ও পানির অভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। প্রখর রোদে জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে পাটের আঁশ। এ সময়ে চাহিদামতো বৃষ্টি না হলে পাটের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ মাসের শুরুতেও জেলায় কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় চাষিদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে জেলার অধিকাংশ খাল-বিলে পানিতে ভরপুর থাকার কথা থাকলেও এখন শুকনো। কোনো কোনো জলাশয়ে সামান্য পানি থাকলেও পাট পচানোর জন্য তা যথেষ্ট নয়।

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে পাটের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৭৬ টন। কিন্তু সেখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৪৫ হেক্টর জমিতে বেশি পাট চাষ করেছেন কৃষকরা। গত বছর দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবার পাট চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন।

পানির অভাবে পাট নিয়ে বিপাকে কিশোরগঞ্জের কৃষক
বন্যার কবলে দেশের কয়েকটি জেলায় প্লাবিত হলেও কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে নদ-নদী,খাল-বিলে তেমন পানি দেখা যায়নি। গত কয়েকদিনে তীব্র তাপদাহে নদ-নদীর পানি শুকিয়ে নদীর তলায় অবস্থান করছে। খাল বিল শুকিয়ে যেন হয়েছে মরুভূমি। ক্ষেত-খলা ফেটে হয়েছে চৌচির। সে কারণে আমন আবাদ ও পাট জাগ দেওয়া নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন স্থানীয় চাষিরা। বাজারে পাটের দাম ব্যাপক থাকায় এই বছর উপজেলায় পাটের আবাদ অধিক হয়েছিল। কিন্তু পানির অভাবে উপযুক্ত সময়ে পাট কাটতে না পারায়, খেতেই পাট শুকিয়ে যাওয়াতে ফলন হ্রাসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পাট চাষিরা।

উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী জাহিদ হাসান রণি বলেন, ‘অনাবৃষ্টির কারণে কৃষকরা পাট পঁচাতে পারছেন না’। রিবন রোটিং’ পদ্ধতিতে পাট পঁচানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উন্নতজাতের পাট চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। এ জন্য আমরা বিভিন্নস্থানে কৃষকের মাধ্যমে প্রদর্শনী প্লট তৈরি করেছি।

গাইবান্ধায় বৃষ্টিহীনতার কারণে চাষিরা বিপাকে

গাইবান্ধায় বৃষ্টিহীনতার কারণে চাষিরা একদিকে যেমন পাট পচানোর পানি পাচ্ছেন না, তেমনি খরায় এবার পাটের ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। ভরা বর্ষায় পানির সঙ্কটে পুরোদমে পাট কাটা শুরু করতে পারছেন না। আবার সাহস করে পাট কাটা শুরু করেও বিপাকে পড়েছেন কৃষক। জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় শুকিয়ে যাচ্ছে পাট।