খুন আরও অনেকগুলো খুনকে যেভাবে ডেকে আনল এবং সুবিধাবাদীদের দৌরাত্ম

আপডেট: জুন ১, ২০২১
0

এস এম হৃদয় রহমান : একটি ঘটনা ঘটার পেছনে অন্য আরেকটি ঘটনা থাকে। খুন আরও অনেকগুলো খুনকে ডেকে আনল। সেই ঘটনাগুলোই ঘটেছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে। সুবিধাবাদী চক্র আজও সুবিধার পায়াতারায় আজও সুবিধায়।

ঘটনা-১
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাংলাদেশের জাতির জনক, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় নিজ দলীয়, নিজ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট সপরিবারে ব্রাশফায়ারে হত্যাকান্ডের শিকার হন তাঁরই অনুগত সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে।

ঘটনা-২
শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের পর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর নিরাপদ জেলখানায় রচিত হয় কলঙ্কিত ইতিহাস। সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে সেদিন জেলখানায় নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হন বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী নেতা- বাংলাদেশের সাবেক অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান।

ঘটনা-৩
মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করায় অবদান রাখা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কর্ণেল আবু তাহের ১৯৭৬ সালের ২১শে জুলাই সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সামরিক আদালতে হত্যাকান্ডের শিকার হন । এ ছাড়াও আরও অনেক সেনা কর্মকর্তা ও সৈন্যকে হত্যার শিকার হতে হয় জিয়াউর রহমানের সামরিক আদালতে।

ঘটনা-৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান, সাবেক রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সেনবাহিনীর সদস্য হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠকারী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রপতি অবস্থায় রেখেই নিজ দলীয়, নিজ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১৯৮১ সালের ৩০ মে নৃশংসভাবে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ব্রাশফায়ারে হত্যাকান্ডের শিকার হন তাঁরই অনুগত সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে।

ফলাফল :

বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, ইতিহাস বিশ্লেষক, সাপ্তাহিক বাংলাবার্তা সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান তাঁর লেখা বিভিন্ন সময়ের নিবন্ধগুলোতে তিনি লিখেছেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড, জেল হত্যাকান্ড, কর্ণেল তাহের হত্যাকান্ডের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। যার ফলশ্রুতিতে জিয়াউর রহমানকেও হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছিল তাঁরই অনুগত সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যদের হাতে।

ইতিহাস বলে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর তিনজন রাষ্ট্রপতি, দুইজন প্রধানমন্ত্রী নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিপথগামী সদস্যদের হাতে। যা কোন দিন স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্নেও ভাবতে চাননি, সেই হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলোই ঘটেছে বাংলাদেশের ইতিহাসে। একের পর এক হত্যাকান্ড বাংলাদেশকে করেছে কলঙ্কিত। আর সেই কলঙ্কময় ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটুক সেটাই প্রত্যাশা। সুবিধাবাদীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কাছ থেকে সুবিধা নিল কিন্তু তাদের মনে রাখল না। সুবিধাবাদীরা শেখ হাসিনার কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছে এবং খালেদা জিয়ার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছিল। সুবিধাবাদীরা দলের সুবিধাজনক সময়ে ১৫ আগষ্ট পালন করে কয়েক ডেগ খিচুরি আর মাংস বিলায়, আবার ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে সেই ডেগ লাথি দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। সুবিধাবাদীরা দলের সুবিধাজনক সময়ে ৩০ মে পালন করে কয়েক ডেগ খিচুরি আর মাংস বিলায়, আবার ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে সেই ডেগ লাথি দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। সুবিধাবাদীরা সুবিধা খোঁজে, সুবিধাবাদীরা কাউকে মনে রাখেনি সামনেও মনে রাখবে না।

লেখক – ফ্রিল্যান্স সংবাদকর্মী।