খুব শীঘ্রই নূহাশ পল্লীতে নির্মাণ করা হবে ‘হুমায়ূন স্মৃতি যাদুঘর’ —শাওন

আপডেট: জুলাই ২০, ২০২২
0

গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে হুমায়ুন আহমদের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

গাজীপুর প্রতিনিধিঃ নন্দিত কথা সাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ুন আহমদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী মঙ্গলবার যথাযোগ্য মর্যাদায় গাজীপুরে পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার গাজীপুরের সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামের নুহাশপল্লীতে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার মধ্য দিয়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়।

কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রয়াত এ লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও তার দুই ছেলে নিশাত ও নিনিতসহ হুমায়ুন ভক্ত এবং হিমু পরিবহনের সদস্যরা মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরে আসেন। বেলা ১১টার দিকে তারা নূহাশ পল্লীর লিচু তলায় হুমায়ুন আহমদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং কবর জিয়ারত করেন। এসময় প্রয়াত লেখকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠাণে অনন্য প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম, মিলেনিয়াম পাবলিকেশন্সর স্বত্তাধিকারী এস এম লুৎফর রহমান, ধ্রুব পদ প্রকাশণীর স্বত্তাধিকারী আবুল বাশার ফিরোজ শেখ, মাতৃভাষা প্রকাশের স্বত্তাধিকারী নেছার উদ্দিন আইয়ুব, অনিক পাবলিকেশন্সর স্বত্তাধিকারী মাহতাব উদ্দিন, নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ হুমায়ুন ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রয়াত লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বলেন, হুমায়ুন আহমেদের স্বপ্নের ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ একার পক্ষে সম্ভব না হলেও হুমায়ুন আহমেদের স্মৃতি যাদুঘর নির্মাণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব। খুব শীঘ্রই হুমায়ুন স্মৃতি যাদুঘর নূহাশ পল্লীতেই নির্মাণ করা হবে।

তিনি বলেন, হুমায়ুন আহমেদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রগুলো খুব সুন্দরভাবে সংগৃহীত আছে। তার হাতে অঁাকা ছবিগুলো অনেকদিন ধরে নিউইয়র্কের এক ব্যাক্তির কাছে আটকে ছিল। অতি সম্প্রতি সেই ছবিগুলো আমাদের হাতে এসে পৌছেছে। আমরা ছবিগুলো হাতে পেয়েছি। এরমধ্যে হুমায়ুন আহমেদের সন্তানদের কাছে, আমার কাছে যা কিছু ছবি আছে এগুলো হুমায়ুন আহমেদের স্মৃতি যাদুঘরে থাকবে। হুমায়ুন আহমেদের হাতের লেখা স্ক্রিপটগুলো যেগুলো বিভিন্ন প্রকাশকদের কাছে ছিল সেগুলো তারা যাদুঘরে দান করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। শীঘ্রই আমরা হুমায়ুন আহমেদের যাদুঘর নির্মাণরে কাজ শুরু করতে পারব বলে আশা করছি।

মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের আরো বলেন, ক্যান্সার হাসপাতাল নিয়ে হুমায়ুন আহমেদের যে স্বপ্ন ছিল সেটা পূরণ করার জন্য যে শক্তি যে সামর্থ্য দরকার হয় সেটা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তাও আমার নেই। সমষ্টিগতভাবে আমরা সবাই যদি চেষ্টা করি হয়তো বা হবে। আমার কাছে মনে হয়েছে অনেক বড় স্বপ্নের আগেও অনেকগুলো ছোট ছোট স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্নগুলো যে একটু একটু করে পূরণ হচ্ছে সেটার ভাল একটা খবরটা আমি আপনাদের দিচ্ছি। হুমায়ুন আহমেদের নিজ গ্রামে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠটি যেটার কথা আমি প্রতিবারই বলেছি সেটি নিয়েও তার একটি স্বপ্ন ছিল। এ স্কুলটি ২০২০ সালে নিম্ন মাধ্যমিক (অষ্টম শ্রেণী) পর্যন্ত এমপিওভুক্ত ছিল। কিন্তু সু-খবর হলো ওই স্কুলটি হুমায়ুন আহমেদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকীর মাসেই ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়েছে। সে স্কুলের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার পাশাপশি বিভিন্ন বিষয়ে জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগীতায় প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানের মধ্যে মেধার স্বাক্ষর রাখছে। এটা আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া। এরকম ছোট ছোট স্টেপ দিয়ে আমরা সামনের দিকে আগাব। সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশের সরকার তথা নীতিনির্ধারকদের প্রতি হুমায়ুন আহমেদ যে ধরনের ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপনের স্বপ্ন দেখছিলেন তা নির্মানের উদ্যোগ নেবার জন্য অনুরোধ করছি। আমি এটুকু নিশ্চত করে বলেতে পারি হুমায়ুন আহমেদের পরিবার এবং তার ভক্ত পাঠক তাদের সবাইকে যখন যেভাবে ডাক দিবেন তারা প্রত্যেকে সেভাবে ছুটে আসবে। আমার পক্ষ থেকে তথা হুমায়ুনের পরিবারের পক্ষ থেকে এজন্য কেউ পিছ পা হবে না হুমায়ুন আহমেদের সে স্বপ্ন পূরনের জন্য। এজন্য সরকার যদি উদ্যোগ নেয় পরিবারের পক্ষ থেকে যেভাবে যা করা দরকার হয় তা আমরা করব। ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মানের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে যায়। কিন্তু আসলে আমার একার পক্ষে এটা সম্ভব না। আমি খুব ক্লান্ত হয়ে যায় আমরা যেভাবে করার দরকার

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি ও অন্য প্রকাশের স্বত্তাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বলেন, হুমায়ুন আহমেদের পরিবার থেকে ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি তাদের পাশে থাকবে। তিনি দাবী করেন নূহাশ পল্লীতে হুমায়ুন আহমেদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকারি, বে-সরাকরি অথবা পারিবারিক উদ্যোগে একটি স্মৃতি যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা জরুরী প্রয়োজন। এ উদ্যোগটির সঙ্গেও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি পাশে থাকবে। ওই সমিতির কেন্দ্রীয় এবং রাজধানী কমিটির কমপক্ষে ২০ জন প্রকাশক তিনটি প্রকাশক সমিতির পক্ষ থেকে হুমায়ুন আহমেদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গাজীপুরের নূহাশ পল্লীতে সকাল থেকে কোরানখানির আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া স্যারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় দুইটি মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের নিয়ে এ কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়ার অনুষ্ঠাণ শেষে এতিমদের প্লেটে খাবার তুলে দেন শাওন ও তার দুই ছেলে। সকালে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ উপস্থিত হুমায়ুন ভক্তদের জন্য খিচুরী, ডিম, মুরগীর ঝাল ফ্লাই এবং দুপুরে সাদা ভাত, গরু ও মুরগীর মাংস এবং ডাল খেতে দেয়া হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে সন্ধ্য পর্যন্ত নুহাশ পল্লীতে হুমায়ুন ভক্তদের আগমন অব্যহত ছিল।

জনপ্রিয় এ লেখক হুমায়ুন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নবেম্বর নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। তাঁর ডাক নাম কাজল। তাঁর বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোটো ভাই। সবার ছোটো ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক। ২০১১সালে হুমায়ুন আহমেদের অন্ত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরের বছরের মাঝামাঝি সময় তার অন্ত্রে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ইন্ফেকশন হয়ে ২০১২সালের ১৯জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমেরিকায় নিউইর্য়কের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর হুমায়ূন আহমেদকে তার নিজের প্রতিষ্ঠিত গাজীপুরের নুহাশ পল্লীর লিচু তলায় দাফন করা হয়।

প্রসঙ্গত, জনপ্রিয় এই উপন্যাসিকের বিচরণ ছিল নাটক-চলচ্চিত্রেও। ১৯৭১সনে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকসেনারা তাকে হত্যার জন্য গুলি ছুড়লেও অলৌকিক ভাবে বেঁচে যান তিনি। হুমায়ুন আহমেদ শুধু সাহিত্য রচনা করেননি। তিনি নাটক ও সিনেমায় এ সাহিত্য রূপ দিয়েছিলেন। তার প্রথম টিভি নাটক “এইসব দিনরাত্রি” বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরীপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা, জননীর গল্প প্রভৃতি।