বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ
সংসদে উত্থাপিত ‘গণমাধ্যম কর্মী (চাকরি শর্তাবলী) আইন ২০২২’ প্রত্যাখ্যান করে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, এ আইন সাংবাদিকদের মান-মর্যাদা, স্বার্থ ও অধিকার কেড়ে নেবে। আইনটির অধিকাংশ ধারা, উপধারা সাংবাদিকদের আর্থিক ও চাকরির নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। প্রস্তাবিত আইন বাতিল করে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সকল সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নতুন করে সাংবাদিকবান্ধব আইন প্রণয়নের আহবান জানিয়েছেন নেতারা।
আজ (৭ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এ আহবান জানান। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র সভাপতি এম আবদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে এবং ডিইউজে’র যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান সাজু ও বিএফইউজে কাউন্সিলর আল-আমীনের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বর্তমান মহাসচিব নুরুল আমীন রোকন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সিনিয়র সহসভাপতি কবি হাসান হাফিজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ডিইউজে’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও বিএফইউজে’র নির্বাহী সদস্য একেএম মোহসীন, সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি কায়কোবাদ মিলন, বিএফইউজের প্রচার সম্পাদক মাহমুদ হাসান. মফস্বল সাংবাদিক ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ও বিএফইউজে নেতা জাকির হোসেন, ডিইউজে’র জনকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান মাসুদা সুলতানা, নির্বাহী পরিষদের নেতা আবদুল হালিম, জেসমিন জুঁই, সাবেক নেতা জসিম মেহেদী প্রমুখ।
শওকত মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যম কর্মী আইনে সম্পাদক থেকে সর্বস্তরের পেশাদার সাংবাদিকদের একই কাতারে এনে মান-মর্যাদা ক্ষুণœ করার অপচেষ্টা হয়েছে। গণমাধ্যম কর্মী বলতে নাট্য শিল্পী, সিনেমার শিল্পী থেকে শুরু করে সবাইকে বুঝায়। শতাব্দীকাল ধরে পেশাজীবী হিসেবে ‘সাংবাদিক’ আন্তার্জাতিকভাবে স্বীকৃত । সেটি মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে নতুন আইনে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় গেছে তখনই সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারও তাই করছে। অনেকে এই সরকারের দালালী করছেন। দালালী করে শেষ রক্ষা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শওকত মাহমুদ বলেন, সাংবাদিক সমাজ ফ্যাসিবাদের দালালদের চিহ্নিত করে প্রতিহত করবে। সাংবাদিকদের স্বার্থ পরিপন্থী আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে।
সভাপতির বক্তৃতায় এম আবদুল্লাহ বলেন, সাংবাদিক সমাজের মান-মর্যাদা এবং চাকুরি ও আর্থিক নিরাপত্তা বিপন্নকারী প্রস্তাবিত গণমাধ্যম কর্মী আইন আমরা মানিনা। আজকের বিক্ষোভ সমাবেশ এ আইন প্রত্যাখান করছে। এ আইনের প্রতিটি ধারা-উপধারায় সাংবাদিকদের আর্থিক সুবিধা কমিয়ে চাকুরিকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনকে এক শ্রেণীর ‘নিপীড়ক মালিকের স্বার্থ সুরক্ষা আইন’ হিসেবে বর্ণনা করে বিএফইউজে সভাপতি বলেন, এ আইন সংসদ থেকে প্রত্যাহার করে সাংবাদিক সমাজের প্রতিনিধিত্বশলীল সব সংগঠনের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে। তথ্যমন্ত্রী আইন সংশোধনের যে আশ্বাস দিয়েছেন তা ভাওতাবাজি। অতীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ক্ষেত্রে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা করা হয়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
নুরুল আমিন রোকন বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরই সাংবাদিকদের শত্রু হিসেবে নিজেদের পরিচয় স্পষ্ট করেছে। তারা আবারও সেই খেলায় নেমেছে। গণমাধ্যম কর্মী আইনের একটি বারও সাংবাদিক শব্দটি নেই । এটা সাংবাদিকদের কল্যাণের পরিবর্তে নানামুখী সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেবে। সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেবে। এই আইন পাশের চেষ্টা সাংবাদিক সমাজ সফল হতে দেবে না।
ইলিয়াস খান বলেন, ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার বাংলাদেশ কোন স্বাধীন সাংবাদিকতা দেখতে চায় না। সাংবাদিকদের শত্রু সরকার হিসেবে তারা বার বার প্রমান করেছে। গণমাধ্যম কর্মী আইন সাংবাদিকদের স্বার্থপরিপন্থী আরেকটি কালাকানুন। এ আইন কার্যকর হলে সাংবাদিকরা এখন যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন তার অনেকটাই কমে যাবে।