গাজীপুরে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাদ্রাসার ছাত্রকে খুন, বাবা ও অগ্নিপতি গ্রেফতার

আপডেট: জুন ১১, ২০২১
0

গাজীপুর সংবাদদাতাঃ

গাজীপুরে পারিবারিক বিরোধের জেরে মাদ্রাসার ছাত্র এক কিশোরকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে তার বাবা। চাঞ্চল্যকর খুনের এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত নিহতের বাবা ও ফুপাতো ভগ্নিপতিকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুক্রবার বিকেলে গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- গাজীপুর সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানাধীন পিরুজালী আকন্দপাড়া গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেন আকন্দের ছেলে নিহতের বাবা বাবুল হোসেন আকন্দ (৪২) এবং একই গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে নিহতের ফুপাতো ভগ্নিপতি এমদাদুল (৩৫)।

পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, মাদ্রাসা থেকে ছুটিতে বাড়ি আসার কয়েকদিন পর গত ৮মার্চ রাত সোয়া ৮টার দিকে মসজিদে এশার নামাজ পড়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় গাজীপুর সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানাধীন পিরুজালী আকন্দপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেন আকন্দের ছেলে ভিকটিম বিপ্লব হোসেন আকন্দ (১৪)। পরদিন সকালে বাড়ির পার্শ্ববর্তী জয়দেবপুর থানাধীন পিরুজালী বকচরপাড়া এলাকার একটি ঝাড়ের নীচে সড়কের পাশে বিপ্লব হোসেনের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। তার গলাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। নিহত বিপ্লব নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ থানাধীন বীর হাটাবো এলাকার আল জামিয়া আল সালাদিয়া মাদ্রাসার ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। এঘটনায় নিহতের মা খাদিজা আক্তার বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ সুপার জানান, মামলাটির প্রায় এক মাস তদন্তকালে কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারে নি জয়দেবপুর থানা পুলিশ। পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস এ খুনের মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গাজীপুরের পিবিআইকে। পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মাহমুদুল হাসান তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িত নিহতের বাবা বাবুল হোসেন আকন্দ ও ফুপাতো ভগ্নিপতি এমদাদুলকে বৃহষ্পতিবার গ্রেফতার করেন। তাদেরকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার একপর্যায়ে গ্রেফতারকৃতরা বিপ্লব হোসেন আকন্দকে খুনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কোদাল এমদাদের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা আদালতে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি প্রদান করে। এরপ্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় পৌণে চার মাস পর চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস মাদ্রাসা ছাত্র বিপ্লব হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

তিনি আরো জানান, প্রায় ২০ বছর আগে বাবুল হোসেন পারিবারিকভাবে ঢাকার গুলশান থানাধীন বেড়াইদ এলাকার আলী হোসেনের মেয়ে খাদিজা আক্তারকে প্রথম বিয়ে করেন। এ সংসারে আতিক ও বিপ্লব হোসেনের জন্ম হয়। এদিকে প্রায় ১২/১৩ বছর আগে বাবুলের ছোট ভাই স্বপন টাঙ্গাইলের মিজার্পুর এলাকার খাতুনকে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর জুলিয়ার সঙ্গে ভাসুর বাবুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরজেরে জুলিয়াকে তার বিয়ের তিন মাসের মধ্যেই পালিয়ে বিয়ে করেন বাবুল। বাবুলের দ্বিতীয় সংসারে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। দুই স্ত্রীর মাঝে বনিবনা না হওয়ায় প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামের আকন্দপাড়ায় থাকেন বাবুল। তার দ্বিতীয় স্ত্রী জুলিয়া তার সন্তানদের নিয়ে টাঙ্গাইলে থাকেন। কিন্তু সেখানে জুলিয়ার আপত্তিজনকভাবে চলাফেরার কারনে তাকে পিরুজালীতে একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন বাবুল। জুলিয়া নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে প্রায়ই বাবুলের বড় স্ত্রী খাদিজাকে মারধর করত। ইতোমধ্যেই বাবুলের ভাগ্নি জামাই এমদাদের সঙ্গে জুলিয়ার গোপন সম্পর্ক তৈরী হয়। গোপন সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে বাবুলের প্রথম স্ত্রীকে ঘর ছাড়া করতে এমদাদকে বিভিন্ন পরামর্শ দিত জুলিয়া। এদিকে খুনের ঘটনার ৩ মাস আগে বাবুলের সঙ্গে ঝগড়া করে জুলিয়া তার ছোট মেয়েকে নিয়ে টাঙ্গাইলে বাবার বাড়ি চলে যায় এবং প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য বাবুলকে চাপ দেয়। একপর্যায়ে ঘটনার ১০ দিন আগে জুলিয়া পিরুজালী গ্রামে এসে এমদাদের সঙ্গে দেখা করে ভিকটিমকে হত্যা করার জন্য বাবুলকে রাজী করাতে বলে। পরে এমদাদের পরামর্শে বাবুল তার নিজের সন্তান বিপ্লবকে খুন করতে রাজী হলে তারা হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এমদাদ সেভেন আপের সঙ্গে নেশা জাতীয় ঔষধ মিশিয়ে বিপ্লবকে পান করায়। পরে বাবুল কৌশলে তার ছেলে ভিকটিম বিপ্লবকে বকচরপাড়া এলাকার বাঁশ ঝাড়ের পাশে ফঁাকা জায়গায় নিয়ে যায়। নেশা জাতীয় ঔষধ পান করায় বিপ্লব সেখানে ঝিমোতে থাকে। একপর্যায়ে সে মাটিতে শুয়ে পড়ে। এসময় বাবুল তার হাতে থাকা কোদাল দিয়ে নিজের সন্তান বিপ্লবের গলায় কোপ দেয়। এতে ভিকটিম লাফিয়ে উঠার চেষ্টা করলে বাবুল পুনরায় কোদাল দিয়ে শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে বিপ্লবের মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং লাশ ঘটনাস্থলে ফেলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এমদাদ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কোদালটি তার বাসায় লুকিয়ে রাখে বলে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে।