গাজীপুরে দুদকের গণশুনানী দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না — দুদক সচিব

আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩
0

**অসৎ পথে উপার্জিত অর্থ কেউ ভোগ করতে পারবে না

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর \ দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, দুর্নীতিদমন কমিশন পূর্বের চেয়ে বর্তমানে অনেক সক্রিয়। আমরা প্রতিকারমূলক নয় প্রতিরোধমূলক কাজে বেশী জোর দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না। অসৎ পথে উপার্জিত অর্থ কেউ ভোগ করতে পারবে না। যারাই দুর্নীতি করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কেউ ছাড় পাবে না। আমাদের সংবিধানেরও ম্যাসেজটা এমন যে, রাষ্ট্র এমন অবস্থার সৃষ্টি করবে যেখানে অনু্পার্জিত অর্থ কেউ যেন ভোগ করতে না পারে। সে লক্ষ্যেই দুদক সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনগনের সেবা নিশ্চিত কতে চাই।

সোমবার গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত দুদক আয়োজিত গণশুনানীতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি ওইসব কথা বলেন।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে গণশুনানী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান, দুদকের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক মোরশেদ আলম, গাজীপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক এমএ বারী ও সাধারণ সম্পাদক মুকুল কুমার মল্লিকসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। গত কয়েকদিন ধরে গাজীপুর সদরে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করে এলাকাবাসী থেকে প্রাপ্ত লিখিত অভিযোগের উপর প্রধান অতিথির সামনে অভিযোগকারীর অভিযোগ উপস্থাপন করা হয় এবং যেগুলো সম্ভব সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করা হয়।

প্রধান অতিথি বলেন, গুরুতর অভিযাগগুলো আমলে নিয়ে দুদকের আইন ও নিয়মানুয়ায়ি পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করা হবে এবং কমিশনের সিদ্ধান্তক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, দুর্নীতির কোথাও কোন সুযোগ নেই। যে যেই ধর্মেরই হোন না কেন, কেউ কিন্তু দুর্নীতিকে সাপোর্ট করে না। কোন অভিযোগের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দেশের জনগণ যতদিন সেবাটি না পাবে ততদিন দুদক আপনাদের সঙ্গেই আছে, থাকবে। দুদক ভালোর সঙ্গে থাকবে, খারাপের সঙ্গে থাকবে না।

সচিব বলেন, আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশনের দুর্নীতি আইন মোতাবেক আমরা দুই ধরণের কাজ করে থাকি। একটি হলো প্রতিকারমূলক এবং অপরটি হলো প্রতিরোধমূলক। আজকে আমরা গাজীপুরে এসেছি প্রতিরোধমূলক কাজে। আজকে বিভিন্ন বিষয়ের শ’খানেক অভিযোগ আমাদের হাতে পেঁৗছেছে। এগুলো যতদিন নিষ্পতি না হবে ততদিন পর্যন্ত দুদক বসে থাকবে না এবং এগুলোর আইনগত পদক্ষেপ পরবর্তীতে নেয়া হবে। আমাদের গণশুনানীর উদ্দেশ্য হলো জনগণের সেবাটা নিশ্চিত করা। এ নিয়ে কেউ যদি এখনও গাফিলতি করেন বা ভবিষ্যতে করেন তা থেকে কারো পার পাওয়ার সুযোগ নেই। দুদকের ১১টা কার্যক্রমের মধ্যে ৬টিই প্রতিরোধমূলক।

তিনি আরো জানান, এরআগে বিভিন্ন জেলায় দুদকের ১৪৮টি গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। গাজীপুর নিয়ে দুদকের ১৫৯টি গণশুনানী অনুষ্ঠিত হলো। এ গণশুনানীর উদ্দেশ্য হলো- সবার মাঝে দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক মনোভাব তৈরি করা। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করবো। প্রত্যেকটি পদক্ষেপের ফলোআপ করে দুর্নীতিবাজরা যাতে ঝরে যায় সেটাই আমরা করবো। এ পর্যন্ত যতগুলো অভিযোগ লিপিবদ্ধ হয়েছে সেগুলোর নিষ্পত্তি না করা পর্যন্ত সংলিষ্ট দপ্তরের ঘুম হারাম বলেন দুদক সচিব।

অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সামসুদ্দিন অভিযোগ করেন, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাল নিয়ে। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা হাসপাতালটিতে কাঙ্খিত সেবা পান না। চিকিৎসকরা ব্যবস্থা পত্রে যেই ঔষধ লেখেন তার সবগুলো হাসপাতালে পাওয়া যায় না, বাইরে থেকে কিনতে হয়। হাসপাতালটিতে দালালচক্রে ভরপুর।

সদর ভুমি অফিস নিয়ে অভিযোগ করেন স্থানীয় রফিকুল ইসলাম। তিনি অভিযোগে জানান, ওই অফিসে নামজারি করতে হলে ১২হাজার টাকা দাবি করা হয়। পাসপোর্ট পেয়ে নানা হয়রানীর ও বিড়ম্বনার অভিযোগ করেন গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকার আলেক মিয়া। এভাবে সকাল ১০টা থেকে টানা বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিআরটিএ, পল্লীবিদ্যুৎ, জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগের উপর গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়। এসব সরকারি ও বেসরকারি অফিসের প্রধান ও তাদের প্রতিনিধিরা পর্যায়ক্রমে উত্থাপিত অভিযোগের জবাব দেন ও কিছু নিষ্পত্তি করেন। এসময় অন্যান্য অভিযোগগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় গণশুনানী। এতে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান। গণ শুনানীতে মোট ১৬৪টি অভিযোগপত্র জমাপড়ে। এগুলোর মধ্যে সাব রেজিষ্ট্রি অফিস, ভূমি অফিস, বন বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন, পল্লী বিদ্যুৎ, বিআরটিএ ও পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে বেশী অভিযোগ জমা পড়ে। এতে ৮৬ জন সেবা গ্রহিতা ২৩টি সরকারি অফিসের বিরুদ্ধে সরাসরি তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

###