গাজীপুরে দু’মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে র‍্যাব সদস্যসহ নিহত ২, আহত ৪ মালিক ও চালক গ্রেফতার

আপডেট: মে ১৬, ২০২১
0
file photo

গাজীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুরে দু’মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে যাব-৪ এর এক সদস্যসহ দুইজন নিহত ও ৪জন গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় মাইক্রোবাসের মালিক ও চালককে শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- র‍্যাব-৪ এর সদস্য সার্জেন্ট খাইরুল ইসলাম (৩৯) ও গাজীপুর সদর উপজেলার মৃত আমির আলীর ছেলে লিটন মিয়া (৩৫)। নিহত খাইরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ থানার কাশিমপুর আলিগঞ্জ এলাকায়। যশোর সেনানিবাসের ২০ ই বেঙ্গলের সদস্য খাইরুল ইসলাম গত ১৮ মার্চ র‍্যাব-৪ এ যোগদান করেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার পূর্ব চান্দ্রা গ্রামের বদরুজ্জামান গাজীর ছেলে মাইক্রোবাসের চালক আবুল হোসেন (৪০) এবং একই থানার উচ্চঙ্গা গ্রামের মাহফুজুর রহমান মজুমদারের ছেলে মাইক্রোবাসের মালিক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর (৪৮)।

মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি কামাল হোসেন ও স্থানীয়রা জানান, র‍্যাব-৪ এর ৬জন সদস্যের একটি টিম মাদক মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামী গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের আজিজুর রহমানের ছেলে সুজন মিয়াকে (২৯) থানায় হস্তান্তরের জন্য বুধবার সকালে একটি মাইক্রোবাসযোগে সাভারের নবীনগর ক্যাম্প হতে গাজীপুরের শ্রীপুর যাচ্ছিলেন। পথে সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ভবানীপুর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা কলেজের সামনে পৌছলে তাদের মাইক্রোবাসটি বিকল হয়ে পড়ে। মাইক্রোবাসটি সেখানে মহাসড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে স্থানীয় মেকানিক রিফাত ও লিটনকে ডেকে নিয়ে মেরামত করানো হচ্ছিল। এসময় বেপরোয়া গাতিতে ময়মনসিংহগামী অপর একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে র‍্যাব-৪ এর ওই গাড়ির পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে র‍্যাবের গাড়িটি মহাসড়কের ঢালে পড়ে যায়। এ ঘটনায় লিটন মিয়া (৩৫) ঘটনাস্থলেই নিহত এবং গাড়িতে থাকা র‍্যাবের তিন সদস্যসহ অপর মেকানিক গুরুতর আহত হন। আহতরা হলেন- র‍্যাব-৪ এর ডিএডি (ওয়ারেন্ট অফিসার) শরিফুল ইসলাম (৪২), র‍্যাব সদস্য নায়েক প্রদীপ কুমার (৪০), র‍্যাব’র গাড়ি চালক সৈনিক আতিক হাসান (৩০) এবং গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামের অটোমেকানিক রিফাত হোসেন (২৫)। ভাগ্যক্রমে ধৃত আসামীসহ র‍্যাবের অপর দুই সদস্য এসআই রাজিবুল ও সিপাহী শামীম গাড়ী থেকে নেমে নিচে অবস্থান করায় তারা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের উদ্ধার করে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা এলাকাস্থ আল হেরা মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে র‍্যাব-৪ এর সদস্য সার্জেন্ট খাইরুল ইসলামকে (৪০) মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আহতদের আশংকাজনক অবস্থায় সকাল পৌণে ১১টার দিকে দু’টি হেলিকপ্টার যোগে ঢাকার সিএমএইচ-এ স্থানান্তর করা হয়।

ওসি কামাল হোসেন আরো জানান, দূর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘাতক মাইক্রোবাস আটক করে। এসময় র‍্যাবের গাড়ি রেকার দিয়ে উদ্ধার করা হয় এবং ময়না তদন্তের জন্য নিহতের লাশ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। এ ব্যাপারে র‍্যাব-৪-এর এসআই রাকিবুল ইসলাম বাদি হয়ে বুধবার গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় গাড়ির চালক ও মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় চালকের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও মালিকের বিরুদ্ধে অদক্ষ চালক নিয়োগ দিয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগ আনা হয়। এরপরই র‍্যাব-৪ ও পুলিশের একাধিক দল তাদের গ্রেফতারের অভিযানে নামে। র‍্যাব-৪ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার মাইক্রোবাসের চালক ও মালিককে গ্রেফতার করে এবং ওই রাতেই মাওনা হাইওয়ে থানায় হস্তান্তর করে। পরদিন শুক্রবার মাওনা হাইওয়ে থানা পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করেন। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।