গাজীপুরে ভাইকে খুনের ২৯ বছর পর রায়ঃ দুই ভাইয়ের আমৃত্যু ও একভাইসহ ৫জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

আপডেট: অক্টোবর ৩১, ২০২২
0

গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ভাইকে খুন করার মামলা দায়েরের ২৯ বছর পর রায় ঘোষণা করেছে আদালত। রায়ে নিহতের দুই ভাইকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং অপর এক ভাইসহ ৫জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় একজনকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে। সোমবার গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক বাহাউদ্দিন কাজী এ রায় ঘোষণা করেন।

মামলার রায়ে দন্ডিতদের মধ্যে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন বেড়াইদেরচালা এলাকার ধনাই বেপারীর ছেলে নিহতের দুই ভাই মোঃ মাইন উদ্দিন (৬৫) ও আবুল কাসেম বেপারীকে (৬০) আমৃত্যু সশ্রম কারাদন্ড ও ১০হাজার টাকা করে অর্থদন্ড করা হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- নিহতের ভাই আব্দুল মান্নান (৫৫), একই এলাকার সিরাজ উদ্দিন (৫৫), শুক্কুর আলীর ছেলে মো. আজিজুল হক (৬০) ও আব্দুল কাদিরের ছেলে দুলাল উদ্দিন (৫০) এবং বেলতলী এলাকার সোনা উল্লাহর ছেলে মাঈন উদ্দিন (৬০)। বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত হলেন স্থানীয় মো. গিয়াস উদ্দিন (৬০)।

মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী নিহতের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাহাদুর জানান, দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন বেড়াইদেরচালা এলাকার ধনাই বেপারীর ছেলে সুলতান উদ্দিনের (৫৫) সঙ্গে আসামিদের জমি-জমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গত ১৯৯৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে সুলতান উদ্দিন তার বসত ঘরে বসে ভাই মোতাহার হোসেন ও প্রতিবেশি মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এসময় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আসামীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ ওই ঘরের খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে। এক পর্যায়ে তারা সুলতান উদ্দিনকে বুকে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে ঘটনাস্থলেই খুন করে। এসময় সুলতান উদ্দিনের ডাকচিৎকার শুনে বাবাকে রক্ষা করতে তার দুই ছেলে মোবারক হোসেন ও আবুল কালাম আজাদ এগিয়ে গেলে তাদেরকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে জখম করে হামলাকারীরা। পরে তাদের ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশিরা এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা গুলি করতে করতে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের ১৫ দিন আগেও আসামীদের কয়েকজন সুলতান উদ্দিনকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। একারণে ১৯৯৩ সালের ৩১ আগস্ট শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়রী (জিডি) করা হয়।

তিনি জানান, এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের ভাই মোতাহার হোসেন বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে ১৯৯৫ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১৯৯৭ সালে গাজীপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির বিচার কাজ শুরু হয়। দীর্ঘদিন শুনানী ও ১৪জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে আদালত সোমবার এ মামলার রায় দেন। রায় ঘোষণাকালে আসামীরা আদালতের কাঠগোড়ায় উপস্থিত ছিলেন। গত ২৯ বছরে মামলা চলাকালীন অভিযুক্ত ৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা হলেন, একই এলাকার ময়েজ উদ্দিন বেপারী, মোমেন, মোস্তফা, আব্দুল ওয়াহাব ও হানিফা।

নিহতের ছেলে আইনজীবি মোস্তাফিজুর রহমান বাহাদুর রায় ঘোষণার পর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমার পিতাকে যখন হত্যা করা হয়, তখন আমার বয়স ছিল ৬ বছর। আমি আমার পিতা হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে বড় হয়ে আইনজীবি হয়েছি। ২৯ বছর পর হলেও একজন সন্তান হিসেবে আমি আমার পিতা হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে পেরেছি, এটা আমার অনেক বড় পাওয়া।

মামলায় বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. সুলতান উদ্দিন এবং আব্দুর রশিদ।

###

মোঃ রেজাউল বারী বাবুল

গাজীপুর।

৩১/১০/২০২২ ইং