গাজীপুরে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে বৃদ্ধা শ্বাশুড়িকে খুন করেছে তার পুত্রবধূ ও নাতিরা

আপডেট: জুলাই ৮, ২০২১
0

গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের এক বৃদ্ধাকে মারধর করে পা ভেঙ্গে সড়কে ফেলে দিয়ে খুন করেছে তার প্রাক্তন পূত্রবধূ ও নাতিরা। খুনের প্রায় ৬ মাস পর এ রহস্য উম্মোচন করেছে গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বৃহষ্পতিবার বিকেলে গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

নিহতের নাম- জমিলা খাতুন (৬৭)। তিনি গাজীপুর সিটি কপোর্রেশনের কুনিয়া তারগাছ এলাকার মৃত আসকর আলী বিএসসি’র স্ত্রী।

পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন কুনিয়া তারগাছ এলাকার আসকর আলী বিএসসি জীবিত থাকাবস্থায় তার দুই নাবালক নাতি (বড় ছেলে আশরাফুজ্জামান সেলিমের সন্তান) মোঃ আশিকুজ্জামান দীপ্ত ও শাকিরুজ্জমান অর্ক এর নামে নিজস্ব ৫ তলা একটি ভবন হেবাদান পত্র করে দেন। ওই হেবাদানপত্র দলিলে আমমোক্তার নামায় ওই দুই সন্তানের পিতা আশরাফুজ্জামান সেলিম এর নাম ছিল। ২০১৮ সালে সেলিমের সঙ্গে তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার লিলি’র বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বিয়ে বিচ্ছেদের পর নাছিমা সন্তনদের নিয়ে এ বাড়িতেই অবস্থান করতে থাকেন। সন্তানরা সাবালক হওয়ার আগেই ২০১৯ সালে সেলিম ওই বাড়ি তার মা জমিলা খাতুনের নামে সাবকবলা দলিল করে দেন। এতে সম্পত্তি নিয়ে তাদের মাঝে বিরোধ দেখা দেয়।

তিনি জানান, জমি জমা নিয়ে বিরোধের জেরে গত ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে গাছা থানা এলাকায় বাড়ির পার্শ্ববর্তী মার্কো সিএনজি পাম্পের সামনে জমিলা খাতুনকে (৬৭) এলোপাতাড়িভাবে মারধর করে তার প্রাক্তন পূত্রবধূ নাসিমা ও দুই নাতি মোঃ আশিকুজ্জামান দীপ্ত (১৯) ও শাকিরুজ্জমান অর্ক (১৭)। তারা জমিলা খাতুনকে টেনে হিঁচড়ে বাড়িতে নিয়ে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে পায়ের হাঁড় ভেঙ্গে ফেলে এবং মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম করে। এসময় তাঁর কাছে থাকা পার্টস থেকে একলাখ টাকাও ছিনিয়ে নেয়। পরে আহত জামিলা খাতুনকে ধরে রাস্তায় ফেলে দেয় তারা। গুরুতর আহত জামিলা খাতুনকে প্রথমে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে াকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ছেলে মোঃ শহীদুজ্জামান সুমন বাদি হয়ে নাসিমা আক্তার লিলি ও তার দুই সন্তানসহ আরো কয়েকজনকে আসামী গাছা থানায় মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সুপার আরো জানান, মামলাটির প্রায় চার মাস তদন্তকালে কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারে নি গাছা থানা পুলিশ। পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে চাঞ্চল্যকর এ খুনের মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গাজীপুরের পিবিআইকে। পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মোঃ হাফিজুর রহমান তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনায় কারাবন্দি নাসিমা আক্তার লিলিকে (৪৫) গত ৫ জুলাই আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে জমিলা খাতুনকে খুনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গ্রেফতারকৃত নাসিমা।

পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, পারিবারিক ও জমি সংক্রান্ত বিরোধে নাসিমা তার শ্বাশুড়িকে ধরে নিয়ে মারধর করেছে। একপর্যায়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শ্বাশুড়ি মারা যান বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন নাসিমা আক্তার লিলি। তাকে বুধবার গাজীপুর আদালতে হাজির করা হলে আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।