গাজীপুরে ৩০ দিনের শিশু নিয়ে পরীক্ষার আসনে মা

আপডেট: জুন ২, ২০২২
0

গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরে ৩০দিন বয়সী শিশুপুত্রকে নিয়ে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন এক পরীক্ষার্থী। মা সানজিদা হক ভাবনা সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজের বাংলা স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী। পরীক্ষার হলে কান্না করলে অন্যদের যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য শিশু সন্তানকে পরীক্ষা কেন্দ্রের একটি কক্ষে নানীর কাছে রেখে পরীক্ষা দিচ্ছেন ভাবনা।

সরেজমিনে বুধবার সকালে কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজের হলে পরীক্ষা দিচ্ছেন ভাবনা। আর তার শিশুটিকে কোলে নিয়ে হলের বাইরে একটি কক্ষের ভেতরে ভাবনার মা বসে আছে। সেখান থেকে শিশুটির কান্নার শব্দ শুনেই জানা গেল ভাবনার পরীক্ষার খবর। মায়ের কোল আর নারীর কোলের পার্থক্য যেন শিশু টের পাচ্ছে। মা থেকে আলাদা হয়েছে টের পেয়ে, না-কি ক্ষুধার যন্ত্রণায় মাঝে মাঝে শিশুটি কান্না করে উঠলে মা ভাবনা যেন টের পেয়ে যায়। আর এজন্যই মা কিছু সময় পর পরই শিশুর কাছে চলে যান। তাকে বুকের দুধ পান করিয়ে শান্ত করে আসেন বলে জানান ওই শিক্ষার্থী। তাদের গ্রামের বাড়ি গাজীপুর মহানগরের সালনার কাথোরার পলাশটেক এলাকায়। পরীক্ষার প্রস্তুতি ও পরীক্ষা দেয়ার জন্য তিনি কয়েকমাস আগেই স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে আসেন।

কলেজের বাংলা বিষয়ের প্রভাষক মো. খোরশেদ আলম জানান, তিনি ভাবনার হলেই নির্বাচনী পরীক্ষার ডিউটিতে ছিলেন। পরীক্ষা দিলেও ভাবনার মনে যেন সব সময় একটা টেনশন কাজ করছিল। কারণ জানতে চাইলে ভাবনা সব খুলে বলেন। পরীক্ষা চলাকালে শিশুকে ফিডিং করার জন্য ভাবনা অনুমতি নিয়ে দুইবার হল থেকে শিশুর কাছে গেছেন। আর চার ঘন্টার পরীক্ষার সময় শেষ হওয়ার এক ঘন্টা আগেই ভাবনা উত্তরপত্র জমা দিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে যান।

এ ব্যাপারে ভাবনা জানান, একবছর আগে তার বিয়ে হয়েছে। স্বামী এক ঔষধ কোম্পানীতে চাকুরি করেন। সিজারের মাধ্যমে এক মাস আগে তাদের পুত্রসন্তান জন্ম হয়েছে। চিকিৎসক আমাকে ৪০দিন বাইরে চলাফেরা করতে বারণ করেছেন। কিন্তু তাকে আমি আমার পরীক্ষার বিষয়ে কিছুই জানাইনি। চল্লিশ দিন পার না হলেও আমাকে অনেক কিছু বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে। এ পরীক্ষা দিতে না পরলে আমার একটা বছর লস হতো। এ ভবিষ্যতে এ লস উঠাতে সময় পাবো কি-না তা অনিশ্চিত। আমার সন্তান হয়তো এ সময়ে বড় হয়ে যাবে। কিন্তু আমার এ সময়তো আর ফিরে আসবে না। আমার ও আমার সন্তানের কিছুটা কষ্ট হবে জেনেও তাই পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। ভবিষ্যতে আমি শিক্ষকতা করতে চাই। আর এজন্য ভালভাবে লেখাপড়ার বিকল্প নেই।