গার্লস সামিট ২০২২-ঢাকা শুরু : সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের জন্য নিশ্চিত করতে হবে মেয়েদের অধিকার

আপডেট: অক্টোবর ১৮, ২০২২
0

কিশোরী ও যুবনারীদের নেতৃত্ব বিকাশ, ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদেরকে সমাজের দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সবার আগে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান গার্লস সামিট-২০২২ ঢাকা পর্বের আলোচকরা।

সোমবার গাজীপুরে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং স্থানীয় যুব-সংস্থা ইয়েস বিডি-এর যৌথ আয়োজনে এই গার্লস সামিট তিন-দিন ব্যাপী যাত্রা শুরু করে। মেয়েদের নেতৃত্ব ও জ্ঞান এর বিকাশ, তাদের নিজেদের অধিকার, নিজেদের শরীরের উপর অধিকার, নাগরিক অধিকার, এবং কমিউনিটিতে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় দক্ষ করে তুলতে এই আয়োজন।

৩-দিন ব্যাপী এই আয়োজনের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি। ভিডিও-বার্তায় তিনি জানান, মেয়েরা তাদের সৃজনশীলতা এবং সাহস দিয়ে অনন্য মাত্রায় পৌঁছে যাচ্ছে প্রতিদিন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বের প্রতি ধন্যবাদ জানাই যার কারনে আমরা সফলতার সাথে বাল্যবিয়ে কমিয়ে আনার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি।

এধরণের সামিট আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং ইয়েসবিডিকে সাধুবাদ জানান তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. আজহারুল ইসলাম খান জানান, “আজ আমি এখানে উপস্থিত হয়েছি কারণ আপনাদের মত তরুণ নারীদের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখা আমারও কর্তব্য। নেতৃত্বের কোন জেন্ডার নেই। যে কেও দক্ষতা আর অভিজ্ঞতার বলে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা রাখে।”

জেন্ডার সমতা নিশ্চিতে তরুণদের উদ্যোগকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন তিনি।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস জানান, “আগামীর নেতৃত্ব যাদের হাতে তাদের অবশ্যই ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ কে তীক্ষ্ণ চোখে আগাম দেখতে হবে। সীমিত চিন্তাভাবনা নেতৃত্বের সম্ভাবনাকেও সীমিত করে দেয়। আর তাই, আমরা, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ চাই তোমরা যেন পৃথিবীর অসীম সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে পারো এবং নিজেদের সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারো।”

তিনি আরো জানান, গার্লস সামিট প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল-এর একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম যা সারা বিশ্বের ৮০টি দেশে আয়োজিত হচ্ছে মেয়েদের নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশের লক্ষ্যে।

এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অপরাজেয় বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রকল্প কর্মকর্তা ফারহা ফারিন, এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক অপর্ণা বর্মা।

আমাদের মেয়েরা নিজের প্রমাণ করে চলেছে সর্বত্র- শিক্ষায়, প্রযুক্তিতে, খেলার মাঠে, শিল্পে, বিজ্ঞানে, এমনকি পাহাড়ের চূড়ায়ও। আজকের ক্ষমতায়িত মেয়েরাও হয়ে উঠবে ভবিষ্যতের প্রভাবশালী নারী। তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে সকলের।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৭০ জন মেয়ে একত্রিত হয়েছে এবারের ঢাকা গার্লস সামিট-২০২২ এ নিজেদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশের লক্ষ্যে যেন সমান ক্ষমতা নিয়ে তারা এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে দক্ষ নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠতে পারেন।

জনসংখ্যা ও আবাসন শুমারি-২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে প্রতি ৯৯ জন পুরুষ এবং নারীর অনুপাত ৯৮ঃ১০০.৩। এরপরও সর্বত্র নারীদের উপস্থাপনা তুলনামূলকভাবে কম। আমাদের সকলের দায়িত্ব তাদের দক্ষ এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। একান্ত এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ পদক্ষেপ এই তরুণদের, বিশেষ করে যুব নারীদের উন্নততর ভবিষ্যত নিশ্চিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আর এই বিশ্বাস থেকেই আয়োজন করা হয়েছে গার্লস সামিট, যেখানে মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে তাদের সম্ভাবনার সম্পূর্ণ বিকাশে ভূমিকা রাখার লক্ষ্য নিয়ে বিশেষভাবে সেশনগুলো পরিকল্পনা করা হয়েছে।

গার্লস সামিট এর একজন অংশগ্রহণকারী মনি জানান, এই আয়োজন আমার প্রত্যাশাকেও ছাড়িএ গেচেহ। এখানে এসে আমি আমার জানার পরিসর বৃদ্ধির সুযোগ পেয়েছি এবং নিজেকে নিজের কমিউনিটিতে মেয়েদের অধিকারের প্রচারক হিসেবে গড়ে তোলার দক্ষতা অর্জন করতে পারছি।

তিন-দিন ব্যাপী এই সামিটে মেয়েরা জীবন দক্ষতা, নেতৃত্ব, জেন্ডার সমতা, মেয়েদের অধিকার, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মস্থানের সুযোগ, যোগাযোগ দক্ষতা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানবে।

সামিটের প্রথম দিন “নেতৃত্বে নিজেকে দেখা” শীর্ষক সেশন পরিচালনাকালে জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী এবং সমাজকর্মী আজমেরী হক বাঁধন জানান, আমি চাই এমন একটি সমাজ দেখতে যেখানে ছেলে ও মেয়েরা সমান সুযোগ নিয়ে কোন বাধা ছাড়াই সমানভাবে বেড়ে উঠতে পারবে। এই সমাজে আমরা সকলের মানবাধিকারের জন্য একত্রে না দাঁড়িয়ে বরং অন্যদের দমিয়ে রাখতে চেষ্টা করি অনেক সময়। ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে প্রত্যেক মেয়েদের উচিত প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমান ভাবে সম্মান করা, তবে তারচেয়েও বেশি জরুরি নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করা।

এই সেশনগুলোর মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণকারী মেয়েদের জানার পরিধি যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি তাদের জীবন দক্ষতা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনায় তাদের সক্ষম করে তুলবে।

১৯৯৪ সাল থেকে বাংলাদেশে শিশু ও যুব, বিশেষ করে মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে চলেছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। যুব ও শিশুদের, বিশেষ করে মেয়ে ও যুব নারীদের নেতৃত্ব গঠনে সংস্থাটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।