গুম-খুনেও সরকার ‘শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা’ লাভ করবে: রিজভী

আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২২
0
এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী

গুম-খুনের এই সরকার শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা লাভ করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘সরকার ঘনীভূত গণতন্ত্রের সংকট সৃষ্টির পর গুম-খুনের বিষাক্ত ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে। গুমের সাথে সাক্ষ্য ও আলামত ধ্বংসের অপচেষ্টায় সম্পৃক্ত সকলকে ভবিষ্যতে আইনের আওতায় আনা হবে।’

শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, দেশে ঘনীভূত গণতন্ত্রের সংকট সৃষ্টির পর গুম-খুনের বিষাক্ত ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিএনপি এ ধরনের বেআইনি ও অশুভ পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের পাশে সবসময় আছে বলে দ্ব্যর্থহীনভাবে পুনরায় বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করছে। ভুক্তভোগীদের পরিবারে যথাযথ মূল্যায়ন ও সহায়তা করা হবে।

রিজভী বলেন, ‘সম্প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে বর্তমান পুলিশ এবং র‌্যাব প্রধানসহ সাতজন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভিসা বাতিল এবং র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন অবৈধ দখলদার সরকার দিশেহারা হয়ে তাদের দ্বারা সংঘঠিত গুমের মত মানবতাবিরোধী অপরাধের সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং আলামত ধ্বংসের বেআইনি এবং ন্যায়বিচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অশুভ চক্রান্তের পথে হাঁটা শুরু করেছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির নিকট এই মর্মে সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত আছে যে, ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি রাতে গুমের শিকার রাজধানীর সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুব হাসান সুজন (সুজন) এর পিতা আব্দুল জলিল খানের (১৪৯/৪, আহম্মদবাগ, বাসাবো-ঠিকানার) বাড়ীতে সবুজবাগ থানার এসআই রবীন্দ্রনাথ সরকার রবীনের নেতৃত্বে ৮/১০ জনের ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশের একটি টীম যায়। সেখানে সুজনের পিতাকে দিয়ে পুলিশের হাতে লেখা একটি বক্তব্যে স্বাক্ষর দিতে চাপ প্রয়োগ করে, যেখানে লেখা ছিলো সুজন স্বেচ্ছায় বাড়ী থেকে চলে গিয়ে নিখোঁজ হয়। সুজনের বাবা উক্ত ফরমায়েশী বক্তব্যে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করলে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব মির্জা আব্বাস ফোনের মাধ্যমে অবগত হলে তার হস্তক্ষেপে পুলিশ ফিরে যায়।

তিনি বলেন, বিএনপি আরো অবগত আছে যে, একই প্রক্রিয়ায় পুলিশ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ অন্য পরিবারের সদস্যদের নিকট থেকেও একই প্রকার ফরমায়েশী বক্তব্য আদায়ের চেষ্টা করেছে। গুমের সাক্ষ্য এবং আলামত ধ্বংসের এ ধরনের বেআইনি পদক্ষেপ অবৈধ সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধের সম্পৃক্ততা শুধু প্রতিষ্ঠিতই করছে না, এই পদক্ষেপগুলো এই অবৈধ সরকারকে নিত্য নতুন অপরাধেও সম্পৃক্ত করছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন,‘গোটা বিশ্ব ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছে যে, এই অবৈধ সরকার ভোট ডাকাতি, নির্বাচন ব্যবস্থা-গণতন্ত্র-আইনের শাসন-সংবিধান-মানবাধিকার-রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসসহ খুন এর মাধ্যমে নিজেদেরকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় নিকৃষ্টতম ফ্যাসিস্টদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশের গুম-খুন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর যুক্তরাজ্য, এইচআরডব্লিউসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তথ্যমন্ত্রী তা তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন। মিথ্যা বলা ছাড়া আওয়ামী সরকারের
ভাণ্ডারে আর কিছু নেই।

তিনি বলেন,‘বিএনপি এই অবৈধ ক্ষমতা দখলদার, ফ্যাসিস্ট, মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত অবৈধ সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ চায়, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার চায়, সব খুন- গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের পথকে সুনিশ্চিত করতে চায়। তবে সরকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধ গুম-খুনের ঘটনা যতই ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করুক, তাতে কোন লাভ হবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নিকট গত ১৩ বছর ধরে গুম-খুনসহ বিচারবহির্ভূত হত্যার হিসাব প্রমাণসহ তাদের নিকট রয়েছে।

রিজভী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করে পুলিশ দিয়ে মিথ্যা স্টেটমেন্ট তৈরি করে শেষ রক্ষা হবে না। গুমের আলামত এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ ধ্বংসের জন্য গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের নিকট থেকে ফরমায়েশী বক্তব্য আদায়ের লক্ষ্যে পুলিশি ঘৃণ্য পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেত্রী আফরোজা আব্বাস, বিলকিস জাহান শিরীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।