গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২
0

গোপালগঞ্জ সদরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

গোপালগঞ্জের স্থানীয় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী ন্যাক্কারজনকভাবে গণধর্ষণের শিকার হন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ রাতে ভূক্তভোগীসহ দুই শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ সদরের নবীনবাগ হেলিপ্যাডের সামনে থেকে হেঁটে মেসে যাওয়ার সময় কতিপয় দুর্বৃত্ত নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে ভিকটিমকে জোরপূর্বক স্থানীয় একটি ভবনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। উক্ত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে। সারাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের যৌক্তিক আন্দোলনে উক্ত পৈশাচিক ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ জানায়। উক্ত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত উক্ত ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায়, র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮ এর অভিযানে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে উক্ত গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত (১) রাকিব মিয়া @ ইমন (২২), পিতাঃ মোঃ সাফায়াত মিয়া, (২) পিয়াস ফকির (২৬), পিতাঃ মোঃ বাবুল ফকির, (৩) প্রদীপ বিশ্বাস (২৪), পিতাঃ পরেশ বিশ^াস, (৪) মোঃ নাহিদ রায়হান (২৪), পিতাঃ অহিদুজ্জামান, (৫) মোঃ হেলাল (২৪), পিতাঃ মৃত চাঁন মিয়া, সদর, গোপালগঞ্জ এবং (৬) তূর্য মোহন্ত (২৬), পিতাঃ বিকাশ মোহন্ত মোল্লারহাট, বাগেরহাটদের’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা গণধর্ষণের সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা মূলত রাকিবের নেতৃত্বে স্থানীয় একটি অপরাধ চক্রের সদস্য। তারা সকলেই গোপালগঞ্জ ও তার আশপাশের এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। গ্রেফতারকৃত তূর্য মোহন্ত ব্যতীত তারা প্রায় ৮/১০ বছর যাবত নবীনবাগ এলাকায় বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন, আড্ডা, জুয়াসহ বিভিন্ন ধরণের অপকর্মে লিপ্ত ছিল। এছাড়াও তারা চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধেও জড়িত ছিল। তারা বিভিন্ন সময়ে রাস্তাঘাটে স্কুল/কলেজের ছাত্রীদের উত্যক্ত করত বলে জানা যায়। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গ্রেফতারকৃতরা ইজিবাইক দিয়ে নবীনবাগ হেলিপ্যাড সংলগ্ন এলাকায় যাওয়ার পথে ভূক্তভোগীকে তার বন্ধুসহ দেখে ইজিবাইক থামিয়ে তাদেরকে নাম পরিচয় জিজ্ঞাসা করে এবং বিভিন্ন ধরণের অশালীন মন্তব্য করতে থাকে। তাদের সাথে ভিকটিম এবং তার বন্ধুর বাকবিতন্ডা হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে জোরপূর্বক ঘটনাস্থলের পাশে ঢালু জায়গায় নিয়ে যেতে চাইলে ভূক্তভোগীর বন্ধু বাঁধা দেয়ায় গ্রেফতারকৃতরা তাকে মারধর করে। গ্রেফতারকৃতরা ভিকটিমকে স্থানীয় একটি ভবনে নিয়ে গিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। মূলত পাশবিক প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই উক্ত ন্যাক্কারজনক ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা স্বীকার করে।

গ্রেফতারকৃত রাকিব মিয়া @ ইমন স্থানীয় একটি মাদ্রাসা হতে দাখিল ও আলীম সম্পন্ন করে। সে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে রিসেপশনিস্ট হিসেবে চাকুরী করত। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে মাদক ও মারামারির মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।গ্রেফতারকৃত পিয়াস ফকির গোপালঞ্জের একটি পাওয়ার হাউজে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করে।

গ্রেফতারকৃত প্রদীপ বিশ্বাস স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণী পর্যযন্ত অধ্যয়ন করে। সে গোপালগঞ্জে হোম সার্ভিসের মাধ্যমে এসি ও ফ্রিজ মেরামতের কাজ করত। গ্রেফতারকৃত নাহিদ রায়হান স্থানীয় একটি কলেজে ¯œাতক ২য় বর্ষে অধ্যয়ণরত।

গ্রেফতারকৃত মোঃ হেলাল স্থানীয় একটি কলেজে স্নাতক ২য় বর্ষে অধ্যয়ণরত। সে একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউশন সেলস অফিসার (উঝঙ) হিসেবে চাকুরী করত।

গ্রেফতারকৃত তূর্য মোহন্ত খুলনার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৮ সালে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে, সে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অধ্যয়ণের জন্য বিদেশ গমন করে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ শেষ বর্ষে থাকাকালীন কোভিড পরিস্থিতির কারণে সে দেশে চলে আসে এবং গোপালগঞ্জে সদরে গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত তূর্যের বিরুদ্ধে একটি মারামারির মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।