গোলাপগঞ্জে রাস্তা নির্মাণ নিয়ে মিথ্যাচার, প্রতিবাদে এলাকাবাসীর সংবাদ সম্মেলন

আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৩
0

গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি: গোলাপগঞ্জে রাস্তা নির্মাণ কেন্দ্র করে ভাদেশ্বর ইউনিয়নের পূর্বভাগ ফকিরটুল গ্রামের মকসুদুর রহমান ওরফে বাবুল মুহুরী ও তার ভাই মাহবুবুর রহমান ফানু কর্তৃক ইউপি সদস্য শেখ মিলাদ হোসেন ও বিশিষ্ট মুরব্বি সমাজসেবী সৈয়দ মুদাব্বির হোসেনের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, মিথ্যা অপপ্রচার ও কথিত সংবাদ সম্মেলনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের করেছেন এলাকাবাসী। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ফকিরটুল গ্রামে এ সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইউপি সদস্য শেখ মিলাদ হোসেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৮মার্চ সিলেটে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন মকসুদুর রহমান ওরফে বাবুল মুহুরী ও তার ভাই মাহবুবুর রহমান ফানু। তারা এই সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন। যা কয়েকটি অনলাইন ও কয়েকটি পত্রিকায় “মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বাড়ির সীমানা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে” শিরোনামে যে মিথ্যা, বানোয়াট, অসত্য তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

আমরা ২নং ওয়ার্ডবাসী অনেক দিন থেকে পূর্বভাগের ফকিরটুল-লক্ষণাবন্দ রাস্তা পাকাকরণের দাবি জানিয়ে আসছিল। এর পরিপেক্ষিতে সিলেট-৬ আসনের এমপি জননেতা নুরুল ইসলাম নাহিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রায় ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যায়ে রাস্তাটি পাকাকরণের কার্যাদেশ পায় এলজিইডি বিভাগ। নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি এই রাস্তাটির কাজের উদ্বোধন করলে রাস্তা উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। বিপত্তি দেখা দেয় রাস্তার প্রস্থতা নিয়ে। চাহিদা অনুযায়ী রাস্তার প্রস্থ ছিল সংকীর্ণ। সমস্যা সমাধানে এলাকাবাসী তথা রাস্তা সংশ্লিষ্ট সকল সুবিধাভোগী এগিয়ে আসেন।

এ নিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভাদেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বার সহ দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণ নিয়ে স্থানীয় পূর্বভাগ ফকিরটুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক সভার আয়োজন করা হয়। এ সভার এজেন্ডা ছিল এলাকার সর্বস্তরের জনগণের উক্ত মহতি কাজে সম্পৃক্ত করে সুবিধাভোগী ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে তাদের ভূমি নিয়ে রাস্তার প্রস্থ ১৫ ফুট করে উভয় পার্শ্বে ড্রেইনের ব্যবস্থা করা। যাতে করে তাদের টিলা বাড়ির পানি সুষ্ঠু নিষ্কাশন হয়ে রাস্তার ক্ষতি সাধন না করে। সবাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এ কাজে সাড়া দেন। তাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়, এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় যাদের গার্ড ওয়াল ভাঙ্গা হবে তা পূর্ণ নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এলাকার সকল প্রবাসী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ এ ফান্ড আয়োজনে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেন। সভায় সকলের অংশগ্রহণে ১টি বাস্তবায়ন কমিটি করা হয়। যার প্রধান উপদেষ্টা ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আহমদকে রেখে এবং আহবায়ক করা হয় ২নং ওয়ার্ড মেম্বারকে।

এদিকে বাবুল মুহুরী সভায় উপস্থিত না থাকায় ব্যক্তিগত ভাবে কমিটির পক্ষ থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন আপনারা অন্যান্য পাশ ভেঙ্গে বড় করেন। প্রয়োজনে আমার বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে উন্নয়ন কাজ সহায়তার করব বলে আশ্বাস দেন। কাজ শুরু হলে হঠাৎ করে বাবুল মুহুরী দেয়াল ভেঙ্গে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বাস্তবায়ন কমিটি ও উপদেষ্টা কমিটি বার বার তার কাছে গিয়েও তিনি দেয়াল ভাঙ্গায় রাজি হননি। এক পর্যায়ে এলাকাবাসী বাবুল মুহুরীর দেয়াল ভেঙ্গে রাস্তার কাজের জন্য বের করেন। এসময় তিনি উপস্থিত থাকলেও কোন বাধা প্রদান করেননি।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, বাবুল সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে দুজন ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে যে মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্য প্রদান করে, তাদের একজন সৈয়দ মুদাব্বির হোসেন। তিনি সমাজের একজন সম্মানিত ব্যক্তি ও সমাজসেবক ও বায়োজৈষ্ট ব্যক্তি। তিনি একজন শালীস বিচারক ও সম্মানিত ব্যক্তি দানশীল ও পরোপকারী এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি। তিনি ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সদস্য ও বর্তমান পূর্ব ভাগ ফকিরটুল জামে মসজিদের সম্মানিত সভাপতি। তিনি সব সময় বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দান খয়রাত করে থাকেন। পাশাপাশি এলাকার গরীব দুঃখী ও এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন।

পূর্বভাগ ফকিরটুল রাস্তার কাজ শুরু হলে তার নির্মিত ওয়াল ভেঙ্গে একটি জায়গার জন্য ৩ডিসিমেল ভূমি দান করেন। এছাড়াও তার ছেলে সৈয়দ মোতাহার হোসেনকে দিয়ে ১৫ লক্ষ টাকার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করান। তাকে হেয় ও প্রতিপন্ন করতে ব্যক্তিগত আক্রোশ চরিতার্থের জন্য বাবুল মুহুরী যে অশালীন মিথ্যা, বানোয়াট ও কুরুচিপূর্ণ কটুক্তি করেছে আমরা তার জোর প্রতিবাদ জানাই।

সৈয়দ মোদাব্বির হোসেন বৃদ্ধ শারীরিক বিভিন্ন জঠিল রোগে রোগাক্রান্ত হওয়ায় হাটাচলা করাও তারপক্ষে সম্ভব নায়, সেখানে এলাকার কোন লোকের সাথে তারপক্ষে লাগালাগি বা জোরপূর্বক জমি দখল করার অভিযোগ নিছক একটি মিথ্যাচার।

বাবুল মুহুরী সংবাদ সম্মেলনে তার মৌখিক বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, সৈয়দ মোদাব্বির হোসেনের ছেলে সৈয়দ মোতাহার হোসেন কর্তৃক বাবুল মুহুরীর ওয়াল ভাঙ্গা শর্তে ১০লক্ষ টাকার অনুদানের ঘোষণা করেছেন এবং মিটিংয়ের রেজুলেশন কপি তার কাছে আছে উল্লেখ করেছেন। এটা ডাহা মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়। উন্নয়নের কাজের প্রারম্ভেই অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের অনুদানের ঘোষণার সাথেই তিনিই সর্বপ্রথম এত বড় অনুদানের আশ্বাস ও দু তৃতীয়াংশ টাকা ইতিমধ্যে ফান্ডে জমা দেওয়ায় জনগণের ওয়াল নির্মাণ ও বাড়ির ওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়েছে। আমরা বাবুল আহমদের এরম মিথ্যাচারের ধিক্কার জানাই।

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, তার আক্রোশের শিকার ইউপি সদস্য শেখ মিলাদ হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধেও বাবুল মুহুরী মিথ্যাচার করেছেন। তার নাকি গুন্ডাবাহীনী রয়েছে। আমরা এই মিথ্যাচারে প্রতিবাদ জানাই।

লিখিত বক্তব্য তিনি আরো বলেন, বাবুল মুহুরী একজন খারাপ লোক। তিনি আপন একমাত্র বোনেরও সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে বিচার শালীস ও মামলা মোকাদ্দমা হয়েছে। এছাড়াও বাবুল মুহুরী প্রতিবেশি আব্দুল জলিল জোয়ারদারের পারিবারিক গোরস্থান দখল ও মার্কেটে আবর্জনা ফেললে তার বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলার চার্জশীটও হয়েছে। বাবুল মুহুরীর বিরুদ্ধে জায়গা আত্মসাৎ সহ নানআ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবেনা। লিখিত বক্তব্যে, এলাকাবাসীর তার এসব অপকর্মের শাস্তি একটা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মোদাব্বির হোসেন, আলহাজ্ব ময়নুল হক, এহতেশাম আবেদীন চৌধুরী, মইন উদ্দিন মজনু, হেলাল উদ্দিন হেলু, সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন, এহিয় সাদেক চৌধুরী, আফরুজ আহমদ সহ এলাকার কয়েক শতাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন ।