চরফ্যাশনে অতিদরিদ্রের কর্মসংস্থান কর্মসুচীতে পুকুর চুরি!

আপডেট: জুন ১২, ২০২১
0

চরফ্যাশন(ভোলা) প্রতিনিধি ঃ
ভোলা চরফ্যাশনে অতিদরিদ্রের কর্মসংস্থান প্রকল্পে পুকুর চুরির খবর পাওয়া গিয়াছে। সুত্র জানায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পে কাগজে-কলমে ৩ হাজার ২৬৭ শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করলেও বাস্তবে এর অস্তিত্ব নেই।

এ যেন ‘কাজির গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা শ্রমিকদের কাজে না খাটিয়ে বেকু দিয়ে নামমাত্র রাস্তায় মাটি ফেলে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে শ্রমিকদের নামের বিল উত্তোলন করে লুটেপুটে খাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অনেকে অর্থ লোপাট করছেন। এতে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন অতিদরিদ্র শ্রমিকরা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে চরফ্যাশন উপজেলায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে ৩৯টি প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ২৬৭ শ্রমিকের বিপরীতে ২শ টাকা হারে ৪০ দিনের জন্য ২ কোটি ৬১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪০টি প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ২৬৭ শ্রমিকের বিপরীতে ২শ টাকা হারে ৪০ দিনের জন্য ২ কোটি ৬১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। প্রথম পর্যায়ের কাজ ২৫ জানুয়ারি সমাপ্ত হয়েছে।

দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ ১৭ এপ্রিল থেকে চলমান রয়েছে।
সরকার অতিদরিদ্র অদক্ষ শ্রমিকদের চল্লিশ দিনের দুই বেলা খাবার নিশ্চিত করতে ‘দাতা সংস্থার আর্থিক সহায়তায়’ এ প্রকল্প চালু করেন। কিন্তু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রকল্প সংশিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলন করে লুটপাট করছে।

এতে বঞ্চিত হচ্ছেন অতিদরিদ্র শ্রমিকরা। পাশাপাশি ভেস্তে গেছে সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
সরেজমিনে আবুবকর পুর ইউনিয়নের ৪/৫ নং ওয়ার্ডের তেলখালী রাস্তা পুনঃনির্মাণ প্রকল্পে ৯৭ জন শ্রমিকের স্থলে একজন শ্রমিকও পাওয়া যায়নি এবং রাস্তায় কাজ হওয়ার দৃশ্যও নেই। প্রকল্প সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দারা জানান প্রকল্পের ওই রাস্তায় গত ৬ মাসের মধ্যে কোন মাটি ফেলানো হয়নি।

৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবুল কাশেম জানান, জানুয়ারি মাসে ওই রাস্তায় মাটি ফেলে মেরামত করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে আবুবকর পুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিনকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।

আসলামপুর ইউনিয়নের ২টি, চর মাদ্রাজ ইউনিয়নের ১টি, জাহানপুর ইউনিয়নের ২টি, এওয়াজপুর ইউনিয়নের ২টি প্রকল্প দেখতে গিয়েও কোনো শ্রমিক খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আসলামপুর ইউনিয়নের প্রকল্প সংলগ্ন বাসিন্দারা জানান, কিছু দিন আগে ভেকু মেশিন দিয়ে ওই রাস্তায় মাটি ফেলে মেরামত করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে আসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান একেএম সিরাজুল ইসলামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান।

মাদ্রাজ ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জমাদার বলেন, ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি ফেলে তার ইউনিয়নের প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন।

জাহানপুরের ইউপি সদস্য বজলুর রহমান ও আলাউদ্দিন জানান, তারা ভেকু দিয়ে কিছু দিন আগে প্রকল্পের কাজ করেছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ উপজেলার কোনো ইউনিয়নে শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়নি। এমনকি কর্মসংস্থান কর্মসূচির তালিকাভুক্ত শ্রমিকরা জানেন না তারা ওই প্রকল্পের শ্রমিক এবং তাদের নামে ব্যাংক হিসাব খোলা আছে। ওই হিসাবের চেক জনপ্রতিনিধিদের কাছে। তারা প্রতি সপ্তাহে শ্রমিকের স্বাক্ষর/টিপসই দিয়ে টাকা উত্তোলন করছেন।

দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের মতো প্রথম পর্যায়ের কাজেও অতিদরিদ্র শ্রমিকদের টাকা লুটেপুটে খেয়েছেন সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয়রা কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের হরিলুটের বিষয়টি তদন্তের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সহায়তা কামনা করেছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আনিসুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রুহুল আমিন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।