মো. সিরাজুল ইসলাম চরফ্যাশন (ভোলা)
চরফ্যাশনে হঠাৎ সয়াবিন তৈলসহ সবজির মূল্য বৃৃদ্ধি পাচ্ছে। একদিনের ব্যবধানে সয়াবিন তৈল মূল্য ৪০টাকা বৃদ্ধিতে নিন্ম ও মধ্যভিত্ত পরিবারগন হতাশ হয়ে পড়েছে। এদিকে বাড়ছে সবজির দামও । বাবসায়ীদের দাবি, তৈল ও সবজির সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়তি। এ ছাড়া পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দামে প্রভাব ফেলেছে বলে দাবি তাঁদের। সয়াবিন তৈল পূর্বে ছিল বোতল লিটার ১৬০টাকা বর্তমানে ২০৫টাকা। খোলা বিক্রি হচ্ছে ২২০টাকা। সাধাারন ক্রেতারা দোষলেন মজুদদার ডিলারদের রিরুদ্ধে।
ঠিক ভিন্ন চিত্র চাষিদের ক্ষেত্রে। ব্যবসায়ীরা চড়া দামে সবজি বিক্রি করলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ কৃষক। যে দামে সবজি বিক্রি করছেন, তাতে উৎপাদন খরচ না ওঠার আশঙ্কা তাঁদের।
সাধারণ ক্রেতাগন ডিলারদের মজুদকে দায়ী করেছেন। চরফ্যাশন মোট ৬টি ডিলার রয়েছেন তৈলের।
ঈদের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। তাঁদের অভিযোগ, অতি মুনাফার আশায় বিক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। অথচ বাড়তি দামের কারণ জানতে চাইলে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকার অজুহাত খাড়া করেন ব্যবসায়ীরা।
যদিও প্রতিবছরের মতো এবারও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোজায় নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে। এ জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আগে থেকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাজারে গেলে দেখা যায় উল্টো চিত্র। বাড়তি দামের ব্যাপারে কোনো তদারকি নেই বলে অভিযোগ ভোক্তাদের।
শনিবার সকাল ও বিকালে বাজারে লিটার প্রতি ৪০টাকা বৃদ্ধি বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ এত বৃদ্ধির বিষয় জানতে চাইলে তারা বলেন, মোকামে বৃদ্ধি করলে আমরা কি করব? মোকমের জন্যে আমরা বেশী মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে।
চরফ্যাশন পূর্ববাজার সাবেক লঞ্চঘাট মুদি ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, সয়াবিন তৈল বাজারে পাওয়াা যাচ্ছেনা। এখন বোতলজাতটি লিটার বিক্রি হচ্ছে ২০৫টাকা। পূর্বে আমরা বিক্রি করছি ১৬০টাকা এখন তা ২০৫টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। খোলা তৈল বিক্র হচ্্েছ ২২০টাকা।
চরফ্যাশন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বেশির ভাগ সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। গোল বেগুন ৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৪০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, কাঁচকলা হালি প্রতি ৪৫ টাকা, ঢ্যাঁড়স প্রতি কেজি ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা ও লেবুর হালি ৭০-৮০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা কামরুল হাসান বলেন, ‘ঈদের পর থেকে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোজা রেখে এখন আর পারি না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভ্যান চালাই। এ কারণে আয়-রোজগার কম হয়। ৩০ টাকার এক কেজি মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা দিয়ে কিনছি। সবকিছুর দাম বাড়লে আমাদের মতো গরিব মানুষ কী খেয়ে বাঁচবে?’
দিনমজুর মো. আলী হোসেন জানান, ‘বাজারে আসলাম সয়াবিন তৈল ক্রয় করতে লিটারে ৪০টাকা বৃদ্ধি করা আদালিটার কিনলাম। সবজি বাজারেও সমস্যা বেশি দামে সবজি কেনার সামর্থ্য আমাদের মতো মানুষের নাই। সরকার বাজার তদারকিও করছে না। ফলে বাড়তি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছি।’
কাঁচা সবজির আড়তদার কাইয়ুম বাণিজ্যালয়ের মালিক আবদুল কাইয়ুম মিয়াজি বলেন, আমরা যে মূল্যে ক্রয় করি সামান্য লাভ পেয়ে বিক্রি করি। আমাদের করার কিছু নেই।
চরফ্যাশন কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জামাল বলেন, ‘৪-৫ ধরনের সবজির সরবরাহ কম থাকায় এ অঞ্চলে দাম একটু বেশি। তা ছাড়া মোকাম থেকে সবজি আনতেও খরচ বেড়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে সবজির দাম কমে যাবে। তবে চরফ্যাশন উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হওয়ায় অন্য জেলার তুলনায় এখানে দাম কম।
তবে ভিন্ন চিত্র চাষিদের ক্ষেত্রে। ভালো দাম না পাওয়ায় লোকসানের শঙ্কা তাঁদের।
আসলামপুর এলাকার সবজিচাষি কামাল হোসেন বলেন, ‘অন্যের জমি বর্গা নিয়া তিন একর জমিতে শসা, টমেটো, করলা চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পাইকারদের কাছে গত সপ্তাহে শসা প্রতি কেজি ২০ টাকা, করলা ২৫ টাকা, টমেটো ২০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। তবে খরার কারণে টমেটো গাছ প্রায় মরে গেছে। এত কম দামে সবজি বিক্রি হলে খরচ ওঠানো দায় হয়ে যাবে।’
চরমাদ্রাজ এলাকার সবজিচাষি জহির উদ্দিন বলেন, ‘আড়ত থেকে দাদন নিয়ে চার একর জমিতে করলা, শসা, বেগুন ও টমেটো চাষ করেছি। এতে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। টমেটোর মৌসুম শেষের দিকে হলেও করলা, শসা ও বেগুনের আশানুরূপ দাম পাচ্ছি না। খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হবে। অথচ আমাদের থেকে পাইকারেরা কম দামে সবজি কিনে দ্বিগুণ দামে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করছেন।’
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু আবদুল্লাহ বলেন, ‘কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে কাঁচা সবজির দাম বাড়ায় সাধারণ ভোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। বাজার তদারকি চলমান রয়েছে। তবে কোনো ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মো. সিরাজুল ইসলাম
চরফ্যাশন (ভোলা)প্রতিনিধি