স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর : গাজীপুর থেকে যমুনার চরে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ও গলা কেটে এক গৃবধূকে খুন করেছে তার প্রাক্তন স্বামী ও ভাসুর। পরে নিহতের লাশ বালি ভর্তি বস্তায় ভরে যমুনা নদীতে ফেলে দেয় তারা। এ ঘটনার প্রায় ৩ মাস পর রহস্য উম্মোচন করলেও নিহতের লাশের সন্ধান মিলেনি। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নিহতের প্রাক্তন স্বামী ও ভাসুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বিদেশ থেকে পাঠানো টাকার হিসেব না দিয়ে ভাগ্নেকে বিয়ে করায় দুই সন্তানের জননী ওই নারীকে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার হিদাগারী এলাকার মৃত সোহরাব প্রামানিকের ছেলে নিহতের প্রাক্তন স্বামী মোজাম্মেল হক (৩২) এবং তার (মোজাম্মেল হক) বড়ভাই জহির আলী (৩৯)। নদী ভাঙ্গনের কারনে জহির আলী একই জেলার ইসলামপুর থানাধীন চেঙ্গানিয়া এলাকায় বসবাস করেন।
পিবিআই এর পুলিশ সুপার জানান, ২০১৫ সালে জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার ফাজিলপুর এলাকার রবিউল ইসলামের মেয়ে জনি আক্তার রুপাকে (২০) পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন মোজাম্মেল হক। তাদের দু’টি ছেলে সন্তান রয়েছে। পরিবারের অভাব ঘোচাতে টাকা উপার্জনের জন্য মালেশিয়া যান মোজাম্মেল। চার বছর পর দেশে ফিরে তিনি স্ত্রী ও শাশুড়ির কাছে তার পাঠানো প্রায় ৯ লাখ টাকার হিসেব চান। কিন্তু তারা ওই টাকার হিসেব দিতে পারে নি। এদিকে রুপার সঙ্গে মোজাম্মেল হকের বোনের সতিনের ছেলে উজ্জল মিয়ার (২৬) পরকীয়া সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে রুপা স্বামী সন্তান রেখে উজ্জলকে বিয়ে করে তার সঙ্গে গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানাধীন বালিগাঁও এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন মোজাম্মেল ও তার বড় ভাই জহির।
তিনি আরো জানান, পরিকল্পনানুযায়ী রুপাকে তাদের দু’সন্তানের বিষয়ে আলাপ আলোচনা করার জন্য গ্রামের বাড়িতে আসতে মোবাইল ফোনে অনুরোধ জানান প্রাক্তন স্বামী মোজাম্মেল। এরপ্রেক্ষিতে কালীগঞ্জ থেকে রওনা হয়ে গত ৬ জানুয়ারি বিকেলে জামালপুরের মাদারগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে পৌছেন রুপা। সেখানে পূর্ব থেকে অপেক্ষা করছিলেন মোজাম্মেল। সেখান থেকে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি এলাকার যমুনা নদীর চরে এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে আলাপ আলোচনা করার কথা বলে রুপাকে নিয়ে রওনা হয় মোজাম্মেল। তারা জামথৈল ঘাট হতে নৌকা যোগে নদী পার হয়ে যমুনার চরে গিয়ে পৌছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই ঘাটে নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন মোজাম্মেলের ভাই জহির। চরে পৌছে রুপাকে তার ব্যবহৃত ওড়না দিয়ে হাত পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে ও গলা কেটে হত্যা করে তারা। পরে নিহতের লাশ বালি ভর্তি বস্তায় ভরে যমুনা নদীতে ফেলে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় ঘাতক দুই ভাই। এ ঘটনায় দায়ের করা জিডির তদন্ত করতে গিয়ে এ রহস্য উদঘাটন করে পিবিআই। পরবর্তীতে গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপ্রেক্ষিতে পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নিহতের প্রাক্তন স্বামী ও ভাসুরকে গ্রেফতার করেন। তিনি গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাদী ও আসামীদের নিয়ে ভিকটিমের মৃতদেহের খোঁজে বৃহষ্পতিবার জামালপুর জেলার ইসলামপুর ও বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি থানা এলাকায় যমুনা নদীর চরে ও নদীতে অভিযান চালিয়েও সন্ধান পান নি। গ্রেফতারকৃতরা শুক্রবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এরপ্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় ৩মাস পর চাঞ্চল্যকর রুপা হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।
