চিত্রনায়ক সোহেল হত্যা মামলার আসামি আশীষ রায় গ্রেপ্তার

আপডেট: এপ্রিল ৬, ২০২২
0

আজ থেকে ২৪ বছর আগের বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। আজ মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই আশিষ রায় চৌধুরীর গুলশানের বাসায় অভিযান শুরু করে র‌্যাব। গ্রেফতারের সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে র‌্যাব।

র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বলেন, আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাসাটিতে অভিযান চালানো হয়।

নায়ক সোহেল চৌধুরীকে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় । ঘটনার পর সোহেলের ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।

১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে বাদানুবাদই এ হত্যার নেপথ্য কারণ বলে মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

দায়েরকৃত মামলা প্রেক্ষিতে ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। এরপর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০০৩ সালে ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ পাঠানো হয়। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো বেআইনি হয়েছে এই দাবি করে ওই আইনের দুটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে আদনান সিদ্দিকী হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন।

পরে সেই রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরের আদেশ কেন বেআইনি হবে না তা জানাতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। একই সঙ্গে তিন মাসের জন্য মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত করেন। পরে ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। সেই থেকে এই মামলার বিচার স্থগিত থাকে। কোনো সাক্ষির সাক্ষ্যই আর গ্রহণ করা হয়নি।

এর পর ১২ বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকার পর ২০১৫ সালে আদনান সিদ্দিকীর দায়ের করা রিট আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর বেঞ্চ ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট রায় দেন।

রায়ে ইতিপূর্বে দায়ের করা রুল খারিজ করে দেন। হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার করেন। মামলার বিচার কার্যক্রম চলতে আইনত আর কোনো বাধা থাকে না এই আদেশের পর। কিন্তু কোনো অজানা কারণে ওই রায় ও হাইকোর্টের আদেশ আর বিচারিক ট্রাইব্যুনালে পৌঁছেনি। হাইকোর্টেও গায়েব হয়ে যায় আদেশের নথি।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হারুন ভূইয়া রাসেল মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে রিট আবেদন করেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেন।

একই সঙ্গে নথি খুঁজে বের করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন। এরপর গুম হওয়া নথি বের হয় এবং সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা স্থগিত করা নিয়ে যে রিট আবেদন করা হয়েছিল সেই রুল খারিজের আদেশও দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে যায়। পরে গত ১০ মার্চ মামলার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই গুলশান পিংক সিটির পেছনে ১০৭ নম্বর রোডের ফিরোজা গার্ডেন নামের একটি বাসায় অবস্থান নিতে শুরু করেন র‌্যাব সদস্যরা। পরে বাসায় তল্লাশি শুরু হয়। পরে তাকে গ্রেপ্তার করেন র‌্যাব সদস্যরা। জানা যায়, অভিযোগপত্র দাখিলের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর আর কোনোদিন হাজিরা দেননি আশিষ রায় চৌধুরী।