ছোটকাকু-পাঞ্জেরী-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ ঘোষণা

আপডেট: ডিসেম্বর ১৫, ২০২২
0

ছোটকাকু-পাঞ্জেরী-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছর মক্তিযুদ্ধ গবেষণায় পাঞ্জেরী-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ পাবেন হাবিবুর রহমান। শিশুসাহিত্যে ছোটকাকু-পাঞ্জেরী-আনন্দ আলো সাহিত্য পূরস্কার পাচ্ছেন আমীরুল ইসলাম, ছড়া-কবিতায় মারুফুল ইসলাম, নাটকে রতন সিদ্দিকী এবং ছোট গল্পে সঙ্গীতা ইমাম।

 

পাঞ্জেরী-আনন্দ আলো বিশেষ সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সম্পাদক, বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধান জনাব হাবিবুর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) ১৯৬৭ সালের ১ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের আব্দুল আলী মোল্লা এবং মোসাম্মৎ রাবেয়া বেগম দম্পতির ঘরে ভোরের প্রদীপ্ত সূর্য হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় নিবেদিত এক প্রাণ তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে কৃতিত্বের সাথে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে তিনি ১৭তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। চাকুরি-জীবনে যে কর্মস্থলেই দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই রেখে এসেছেন তাঁর সৃষ্টিশীল চিন্তা-চেতনা আর ব্যতিক্রমী কর্মস্পৃহার স্বাক্ষর। পেশাগত জীবনে তাঁর অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য যেমন লাভ করেছেন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি, তেমনই অর্জন করেছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও। হাবিবুর রহমান তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদকে (বিপিএম) এবং দুবার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকে (পিপিএম) ভূষিত হন। এছাড়া তিনি তিনবার ‘আইজিপি গুড সার্ভিস ব্যাজ’ লাভ করেন।

বহুমুখী প্রতিভা ও অসাধারণ মানবিক গুণাবলির অধিকারী হাবিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন বিশেষ করে বাংলাদেশ পুলিশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা ও সংকলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং তা সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সম্পাদনা করেছেন ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ, ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা’ এবং ‘পিতা তুমি বাংলাদেশ’ গ্রন্থসমূহ। বাংলাদেশের বেদে এবং হিজড়া সমপ্রদায়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও সমাজের মূলধারায় তাদের প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃৎ। তাঁর অতল মানবিক গুণের ফসল পুলিশ ব্লাড ব্যাংক, যা করোনা রোগীদের প্লাজমা এবং ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট সরবরাহ করে কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গু চিকিৎসায় প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।

[ঠার: বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা শীর্ষক গ্রন্থটি তাঁর দীর্ঘ পরিশ্রমলব্ধ মৌলিক গবেষণার ফসল।]

 

ছোটকাকু-পাঞ্জেরী-আনন্দ আলো শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০২১-এ ভূষিত হলেন আমীরুল ইসলাম, মারুফুল ইসলাম, রতন সিদ্দিকী ও সঙ্গীতা ইমাম।

 

আমীরুল ইসলামের জন্ম ৭ এপ্রিল ১৯৬৪, ঢাকায়। তাঁকে বলা হয় আধুনিক বাংলা শিশুসাহিত্যের রূপকার। ছড়া ছাড়াও তিনি লিখেছেন গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে লিখছেন ছোটদের জন্য। তাঁর পিতা প্রয়াত সংবাদকর্মী সাইফুর রহমান এবং মা আনজিরা খাতুন। তাঁর বড় চাচা হাবীবুর রহমান ছিলেন খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক। ছেলেবেলায় পরিবারের সবাই তাকে ডাকত টুলু নামে। পরিবার ও বন্ধুমহলে তিনি এখনও ওই নামেই পরিচিত। কৌতুকপ্রিয়, আড্ডাবাজ, জীবন-রসিক ও ভোজনপ্রিয় আমীরুল ইসলাম ঘুরেছেন পৃথিবীর প্রায় বিখ্যাত সব শহর। প্রিয় শখ বই পড়া, পুরনো বই ও চিত্রকলা সংগ্রহ, দাবা খেলা, রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনা। তিনি ২০০৬ সালে শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

 

মারুফুল ইসলাম ১৯৬৩ সালের ২৯শে মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা রফিকুল ইসলাম এবং মাতা আনোয়ারা বেগম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পিএইচডি করেছেন অর্থনীতিতে। শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বের জন্য ১৯৮৬ সালে ‘বিশেষ সম্মানসূচক রাষ্ট্রপতি পুরস্কার’ অর্জন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ২০১৫ সালে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। মারুফুল ইসলাম কবিতা, ছড়া, গান, প্রবন্ধ, সমালোচনা লিখে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেছেন। ২০১৭ সালে বাংলা কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন।

 

ড. রতন সিদ্দিকী একজন শিক্ষক, গবেষক, নাট্যকার এবং নাটকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক। রতন সিদ্দিকী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বাংলা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি মতিহারে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত অবস্থান করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ও পিএইচডি করেন। অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি প্রবন্ধ, সমালোচনা, নাটক ও শিশুসাহিত্য রচনা করে খ্যাতি লাভ করেছেন।

 

সঙ্গীতা ইমাম। বাবা সৈয়দ হাসান ইমাম। মা লায়লা হাসান। তাঁর জন্ম ১৯৬৭ সালে। বাড়ি বাগেরহাট জেলায়। পারিবারিক সাংস্কৃতিক পরিবেশে তাঁর বেড়ে ওঠা। সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে কাজ করছেন বহুদিন ধরে। ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করেছেন প্রচুর। সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন তাঁর শিল্পীসত্তাকে। সঙ্গীতা ইমাম বর্তমানে কাজ করছেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক হিসেবে। শিশুসাহিত্যিক হিসেবে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেছেন।

 

ইমপ্রেস টেলিফিল্মস, চ্যানেল আই থেকে প্রকাশিত আনন্দ আলো পত্রিকা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় প্রতিবছর পুরষ্কার দিয়ে থাকে।