”জনগণের রক্তের ওপর দিয়ে কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে পারে না”

আপডেট: এপ্রিল ২৭, ২০২১
0

বাশঁখালি থেকে ফিরে ডা.জাফরউল্লাহর সংবাদ সম্মেলন

একটা সুষ্ঠু জীবন-জীবিকার জন্য আন্দোলন করা দরকার বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ও প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক
সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পুলিশের
গুলিতে শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসে এ সংবাদ সম্মেলন
করেন তিনি।
“বাঁশখালীতে শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নাগরিক সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সভা” অনুষ্ঠিত । ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান
ও গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে চট্রগ্রামে
বাঁশখালীতে শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন ৮ সদস্য টিমের
নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য রাখেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের
মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী
জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য নঈম
জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত,রাস্ট্র চিন্তার সদস্য
এডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা
জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার সাদিয়া
আরমান ।

বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও নাগরিকবৃন্দ
বক্তব্য রাখেন এবং উপস্থিত ছিলেন, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান
মান্না, বিকপ্ল ধারার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন
বাপারী,ডাকসুর সাকে ভিপি নূরুল হক নূর, লেবার পাটির চেয়ারম্যান ডা,
মোস্তাফিজুর রহমান ইরান,গণ দলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা
চৌধুরী, গণ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, রাষ্ট্র
চিন্তার দিদার ভূইয়া, এবং অধ্যাপিকা দিলারা চৌধুরী আলোকচিত্রী শহিদুল
আলম, অধ্যাপিকা রেহনমা আহমেদ,কবি হাসান ফকরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদ
প্রেসিডিয়াম সদস্য আকতার হোসেন,ফরিদ উদ্দিন , বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন
সাধারন সম্পাদক শামসুল আলম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সৈকত আরিফ প্রমুখ

জুমে বক্ত্য রাখেন ,ডা. রেজা কিবরিয়া, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ,অধ্যাপক
আসিফ নজরুল. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, বাশঁখালীর ঘটনায় একজন সাহসী বিচারপতির নেতৃত্বে
একটি সাহসী বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, যারা এই দেশ গড়েছেন, যে কৃষক খাবার যোগান দিয়েছেন, যে
শ্রমিক উন্নয়ন দিয়েছে তারা আজ নির্যাতিত। জনগণ যখন কথা বলতে পারে তখন
বোঝা যায় কেমন স্বাধীনতা আছে। ৭৪ এ দুর্ভিক্ষে ৩ লক্ষ লোক মারা
গিয়েছে। মানুষ তখন না খেয়ে ছিল৷ আজ মানুষ অনাহারে নেই তবে অর্ধাহারে
আছে৷

তিনি বলেন, বাঁশখালীতে ১৮ বছরের একটি ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলেছে।
বিধবা মা তাকে কষ্ট করে মানুষ করেছিল। পুলিশ মেরেছে নাকি, গুন্ডা বাহিনি
গুলি করে মেরেছে কেউ বলেনি। এমন কি পুলিশও কথা বলতে ভয় পায়।

দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমাদের আর সময় নেই। রাস্তায় না
নেমে, আন্দোলন না করে এই মাফিয়া রাষ্ট্রের স্থাপনটাকে শক্ত করে দিচ্ছি।
চলেন সবাই মিলে রাস্তায় নামি। সাহস করে রাস্তায় নামতে হবে। দাবি পূরণ
না হলে ফিরবো না। পরিবর্তন চাই, পরিবর্তন হবেই। এভাবে দেশ চলবে না। কেউ
বিচারের বাইরে থাকতে পারবে না। আন্দোলন করা দরকার একটা সুষ্ঠু জীবন
জীবিকার জন্য।

সরকারের উদ্দেশ্য করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বন্দুকের গুলি দিয়ে
কোন রাস্ট্র টিকে থাকতে পারে না। আপনিও পারবেন না। ভালো হয়ে যান। সারা
পৃথিবীকে জানানো দরকার আমরা মাফিয়া রাস্ট্রে আছি।

সংবাদ সম্মেলনে বাঁশখালীর সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন গণসংহতি
আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ১৭ই এপ্রিল
বাশখালীর কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে ৭
জন নিহত ও শতাধিক আহত। যখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয় তখন বলা
হয়েছিল টেক্সটাইল মিল হবে। পরবর্তীতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়
স্থানীয় জনগণের আনদোলন উপেক্ষা করে। সেখানেও হামলা হয়। অর্থাৎ
স্থানীয় ভাবে সেখানে আগে থেকেই নানান জটিলতা আছে৷ তিনি বলেন, ১৬ এপ্রিল
শ্রমিকরা আন্দোলন করে। মার্চ মাসের বকেয়া বেতন, রোজার মধ্যে ৮ ঘন্টা
কর্ম ঘন্টা, জুমার নামাযের সময়, স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেটের দাবিতে।
মালিকদের দাবি সেখানে কর্মরত চাইনিজদের বাড়ি আক্রমণ করতে যাওয়ার কারণে
গুলি করেছে পুলিশ। শ্রমিকদের দাবি পুলিশ নিজেই নিজের গাড়িতে আগুণ
দিয়েছে। গণসংহতি আন্দোলনের এ নেতা বলেন, ওখানে শ্রমিক নিয়োগের
সিন্ডিকেট আছে৷ স্থানীয় প্রভাবশালীদের টাকা দিয়ে কাজ পেতে হয়। সরাসরি
কোম্পানি শ্রমিক নিয়োগ না দিয়ে সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়া হচ্ছে। ফলে
শ্রমিকরা অধিকার বঞ্চিত হয়। সাধারণ শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে রাদের
ন্যায় সঙ্গত দাবি মেনে নেওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু পুলিশ ও গুন্ডা বাহিনী
দিয়ে গুলি করে শ্রমিকদের হত্যা করা হয়েছে।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, এটি একটি
চাইনিজ কোম্পানি। ২০১৬ সালে এই ফ্যাক্টরি করার সময় ৪ জন নিহত হয়। ২০১৭
সালেও একজন মৃত্যুবরণ করেছে।
নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে ও প্রতিবাদ সভায় ৭ দফা দাবী উপস্থাপন করেন
ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ।

১) বাঁশখালীর গন্ডিমারায় সংঘটিত পুলিশী হত্যাকান্ডের বিশ্বাসযোগ্য
বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে । দায়ী ব্যক্তিদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত
করতে হবে। ২) নিহত এবং আহত শ্রমিকদের প্রকৃত তালিকা তৈরী করতে হবে ।
সংবাদ মাদ্যমে এ ৭ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে । কিন্তু
অভিযোগ আছে নিহতের সংখ্যা এর চেয়ে বেশি হবে। ৩) প্রত্যেক নিহত শ্রমিক
পরিবারকে এক জীবনের আয়ের সমান / নূন্যতম ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরন দিতে
হবে। আহতদের সুচিকিৎসা এবং ক্ষতিপূরন দিতে হবে। ৪) হত্যা করলো পুলিশ এবং
পুলিশের সাথে থাকা হেলমেন্ট বাহিনী। অথচ ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিদের নামেই
মামলা দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে ।

মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৫) শ্রমিক নিয়োগে কায়েমী স্বার্থের
সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে। শ্রমিকদের সরাসরি নিয়োগ পত্র, ট্রেড
ইউনিয়ন অধিকার সহ অন্যান্য আইনী অধিকার দিতে হবে। নিরাপদ কর্ম পরিবেশন
নিশ্চিত করে শ্রমিকদের দাবি – দাওয়া মানতে হবে। শ্রমিদের ছাঁটাই করা
চলবে না । ৬) শিল্প- কারখানায় শ্রমিদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে
হবে। হত্যা খুন- পুলিশ হয়রানী বন্ধ করতে হবে। ৭) বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিংবা
শিল্প কারখানা স্থাপনে প্রকৃতি এবং পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর । এই সব
বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে সরে আসতে হবে।

মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফত বলেন, সেখানে আমরা একটি ভয়াবহ চিত্র
দেখেছি। ৭১ এও এমন অবস্থা ছিল। সবাই কথা বলতে খুব ভয় পায়। পুলিশ বলেছে
আমরা গুলি করিনি। অথচ শ্রমিকরা বলছে হেলমেট ধারী পুলিশের ড্রেস পরা কিছু
লোক গুরি চালিয়েছে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রাহমান মান্না বলেন, এরকম বাংলাদেশে
কখনো হয়নি। গুলি করে ১৭ জন মেরে ফেলার পর বলা হয়েছে নিজেরাই এই কাজ
করেছে। আবার ৫ জন শ্রমিককে মেরে ফেলার পর বলা হচ্ছে শ্রমিকরাই দায়ী। এটা
একটা মজার দেশ। লকডাউনের মাঝেই ট্রাফিক জ্যাম চলছে। সরকার জীবন মৃত্যু
নিয়ে খেলা খেলছে কেবল মাত্র নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জ নাগরিক
ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রাহমান মান্না বলেন, এরকম বাংলাদেশে কখনো
হয়নি। গুলি করে ১৭ জন মেরে ফেলার পর বলা হয়েছে নিজেরাই এই কাজ করেছে।
আবার ৫ জন শ্রমিককে মেরে ফেলার পর বলা হচ্ছে শ্রমিকরাই দায়ী। এটা একটা
মজার দেশ। লকডাউনের মাঝেই ট্রাফিক জ্যাম চলছে। সরকার জীবন মৃত্যু নিয়ে
খেলা খেলছে কেবল মাত্র নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য। লড়াইটাই
চুড়ান্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, সরকার কাউকে কথা বলতে
দিচ্ছে না। ছাত্রদের অধিকার আদায়ের অন্দোলন, কোটা আন্দোলনসহ সকল
আন্দোলনে সরকার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে সহিংসতা ঘটায়। মামলা দেয়
আন্দোলনকারীদের নামে। আজ সময় এসেছে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে
সুস্পষ্ট রূপরেখার ভিত্তিতে একটি আন্দোলন গড়ে তোলার। শুধু গণমাধ্যমে
প্রকাশের জন্য ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদ বা র‍্যালি করলে চলবে না।

্আলোক চিত্রী আলম বলেন, আমরা সবাই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াবো। আজ এ দেশ
উন্নয়নশীল দেশ আমাদের শ্রমিকদের কারণে। তাদের শোষণ করি বলেই আমরা আজ
উন্নয়নশীল। কিন্তু তাদেরই আমরা নির্যাতন করি।

ভারচুয়ালী এ অংশ নিয়ে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, I would request Dr.
Zafrullah to prepare a one page summery of the findings and publish it
to intrnational media. People of Bangladesh need to sppek up in terms
of union. Its vital to attract the attention of international media.
ভারচুয়ালী এই সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মাদ বলেন,
এই ধরণের প্রকল্প বাংলাদেশকে বিপদের মধ্যে ফেলবে। এস আলম গ্রুপ বা চায়না
কোম্পানির জন্য এটা লাভ জনক হলেও এটা দেশের জন্য বিধ্বংসী। এই প্রকল্প
পূর্বেও প্রতিরোধের মুখে পড়েছিল। ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত যে হত্যাকান্ড
হয়েছে তার বিচার করতে হবে। ক্ষতিপূরণ এর বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। যে
সব প্রকল্প ক্ষতিকর, দেশকে-জনগণকে হুমকির মুখে ফেলে দেয় সেসব প্রকল্প
বাতিল করতে হবে।

ভারচুয়ালী এই সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক
আসিফ নজরুল বলছেন, এটা একটা প্যটার্ন। রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক আন্দোলনে
সরকার হামলা চালায়। আমরা একটা হেলমেট বাহিনী দেখি। এবং মামলা দেওয়া হয়
আক্রান্তদের উপরেই। এটা একটা প্যাটার্ন দাঁড়িয়ে গেছে। যেন যখন যা কিছু
সরকার করতে পারবে। শুধু গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদ
বা র‍্যালি করলে চলবে না।

সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, পুরো ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পুলিশ জনগণের
বন্ধু এই কথা আজ যে অসত্য সেটা প্রমাণ করার জন্য পুলিশ যেন উঠে পড়ে
লেগেছে। কিন্তু এর দায়ভার পুরো পুরো পুলিশ প্রশাসন বা জাতি কেন নেবে?
দোষী ব্যক্তিদের সনাক্ত করে বিচার করতে হবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে, আইনের
শাসনের স্বার্থে এই প্রকল্প বাতিল করা উচিৎ। এস আলম গ্রুপ বড় কথা নয়
জনগনের রক্তের উপর দিয়ে, তাদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কোন প্রকল্প
বাস্তবায়ন হতে পারে না