জনগনের টাকা লুট করতেই সরকার বিদ্যুতের দাম বার বার বাড়াচ্ছে—খন্দকার মোশারফ

আপডেট: জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
0

জনগনের কাছ থেকে টাকা লুট করতেই সরকার বিদ্যুতের দাম বার বার বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন খন্দকার মোশারফ হোসেন।

মঙ্গলবার দুপুরে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের কাছে ‘নিরব পদযাত্রা’ কর্মসূচির তৃতীয় দিনের কর্মসূচির শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আপনারা জানেন, মাত্র ১৯ দিনের আগে এই বাংলাদেশে বিদ্যুত সরকার সরাসরি যে, নিয়ম আছে, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে হলে এটা একটা কমিশনের মাধ্যমে যায়, গণশুনানি লাগে, এই গণশুনানিকে উপেক্ষা করে তারা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছিলো। আবার আজকে একইভাবে তারা আরো ৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে।”

‘‘ আবার বলেছেন যে, মাসে মাসে নাকী এটাকে(বিদ্যুতের দাম) সমন্বয় করবে। অর্থাত আজকে তাদের হাতে টাকা নাই। এদেশের সাধারণ মানুষ থেকে লুট করে টাকা নেওয়ার জন্য বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করছে, পানির দাম বৃদ্ধি করছে। অথচ সরকার জনগনকে বিদ্যুত দিতে পারে না, গ্যাস দিতে পারে না, পানি দিতে পারে না। এদেশের মানুষের অবস্থা আজকে অত্যন্ত দূর্বিসহ।”

বিদ্যুত বিভাগ মঙ্গলবার সকালে এক প্রজ্ঞাপনে পাইকারিতে গড়ে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং খুচরায় ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার নির্ধারণ করেছে। এর ফলে খুচরায় গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ভারিত গড়ে ৭ টাকা ৮৫ পয়সা যা আগে ৭ টাকা ৪৮ পয়সা ছিলো।

আর ভারিত গড়ে পাইকারি বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৬ টাকা ৭০ পয়সা।

‘টাকার অভাবে পণ্য খালাস হচ্ছে না’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘ দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতিও একই কারণ। তারা আজকে পণ্য আমদানি করতে পারছে না। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের স্টিমার এসে বসে আছে। টাকা দিতে পারে না বলে মাল খালাস করতে পারে না। বড় বড় কথা বলে।”

‘‘ কারা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবমূল্য বৃদ্ধি করছে? আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা যারা বিদেশে টাকা পাচার করে আজকে এদেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি করেছে, অর্থনীতি ধবংস করে দিয়েছে।”

‘দুর্নীতি বাড়ছে’

দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবনমনের কথা উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘ আপনারা দেখেছেন এতো লেখালেখি হচ্ছে, বিদেশীরা চাপ দিচ্ছে তারপরেও গত কয়েক মাসে দেখেন কি পরিমান দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছেন। আপনারা হয়ত জানেন, সারা পৃথিবীর বুকে এই দুর্নীতির একটা পরিলেখক আছে সেই পরিলেখক আমরা সর্বনিম্ন ১৩ নম্বরে ছিলাম। সেটা আরো এক ধাপ কমে আজকে দেখা গেলো ১২ তে নিচে নেমে এসেছে।”

‘‘ অর্থাত ১২ আমরা যেমন বলি, আন্তর্জাতিক হিসাবেও দেখা যাচ্ছে যে, দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে, দুর্নীতি দমন তো দূরের কথা। যারা দুর্নীতি করে আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট। অতএব তাদের দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। সেজন্য দেশের মানুষ এই সরকারের পদত্যাগ চায়, যত দ্রুত বিদায় করতে চায়।”

‘পদযাত্রা: ওদের বিদায়ের অগ্রিম শোভাযাত্রা’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘ সরকারের এতো নির্যাতনের পরেও বিএনপি ঘরে বসে যায়নি, এদেশের জনগনও বসে যায়নি। বরং আপনাদের(সরকার) বিদায় করার জন্যে রাস্তায় নেমেছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, রাস্তায় আছি। আওয়ামী লীগ ভয়ে ভীতি হয়ে আমাদের পথযাত্রাকে নানা নামে সমালোচনা করছে।”

‘‘ আমরা বলতে চাই, আপনাদের সময় শেষ। আগামী দিনের বাংলাদেশে হবে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের বাংলাদেশ। অতএব আপনারা বিদায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নিন। আমরা কিন্তু আপনাদের বিদায়ের অগ্রিম শোভাযাত্রার এই পদযাত্রা করছি। আপনারা এটাকে যা-ই মনে করেন না কেনো আপনাদের বিদায়ের এটা হচ্ছে আমাদের এই শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা।”

তিনি বলেন, ‘‘ বেশি সময় নাই। আমরা অতিদ্রুত এই সরকারকে বিদায় দিতে সমর্থ হবো। এজন্য আমাদের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।”

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হকও বক্তব্য রাখেন।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে দুপুর আড়াইটায় ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে মাজার রোড দিয়ে মিরপুর এক নাম্বার হয়ে ১০ নম্বর গোল চত্বর পর্যন্ত ৫ কিলো মিটার পথে দেড় ঘন্টার ‘নিরব পদযাত্রা’ করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

রাজধানীর গাবতলী-মিরপুরের ব্যস্ততম সড়কে পদযাত্রা উপলক্ষে ব্যাপক মানুষের সমাগমে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

বিএনপির পদযাত্রা উপলক্ষে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

চারদিনের এই পদযাত্রা কর্মসূচির প্রথম দিন গত শনিবার বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ার থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত, সোমবার যাত্রাবাড়ী থেকে জুরাইন রেলগেইট পর্যন্ত পথযাত্রা করে বিএনপি। আগামীকাল বুধবার শেষ দিনে এই কর্মসূচি হবে মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত।

এই পদযাত্রায় গাবতলী-মিরপুর এলাকার বিভিন্ন ওয়ারর্ডের নেতা-কর্মী ছাড়াও মহিলা দল, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেয়।

পদযাত্রায় বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, নাজিম উদ্দিন আলম, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মীর সরাফত আলী সপু, ডা. রফিকুল ইসলাম, সাইফুল আলম নিরব, রিয়াজ উদ্দিন নসু,h এসএম জাহাঙ্গীর, মহানগর উত্তরের মুন্সি বজলুল আসিত আনজু, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, এস এ ছিদ্দিক সাজু, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, নায়াবে ইউসুফ, ফরিদা ইয়াসমীন, যুব দলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএস জিলানি, রাজিব আহসান, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমূখ নেতারা অংশ নেন।