জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

আপডেট: জুন ১৯, ২০২২
0

ঢাকা: সরকার পতন আন্দোলনে একমত হয়েছে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও বিএনপি। শনিবার(১৮জুন) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দুই দলের বৈঠকের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জমিয়তের সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী সাংবাদিকদের সাথে এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের যে ঘোষিত কর্মসূচি সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করার। সেই কর্মসূচি অনুযায়ী আজকে ২০দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছি। আমাদের দেশের মানুষের ওপরে যে দুঃশাসন চেপে বসে আছে অনির্বাচিত একটি সরকার। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য, আশা-আকাঙ্খা সেগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়ে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে, প্রশাসন বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে, রাষ্ট্রকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে। তাদের বিরুদ্ধে সমস্ত রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার ব্যাপারে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতাদের সাথে আলাপ করে একমত হয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে একমত হয়েছি যে আমাদের গণতন্ত্রের নেত্রী, যিনি সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছেন। যাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় প্রতিহিংসা মুলকভাবে আজকে তিন বছর ধরে, প্রথমে কারা অন্তরীণ এখন গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। চরম অসুস্থতার মধ্যেও তাকে বিদেশে চিকিৎসা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। সেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি একই সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে যাদের বন্দি করে রাখা হয়েছে আলেম ওলামাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, সাজা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৫লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তাদের সবার মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করার ব্যাপারে একমত হয়েছি। আমরা আরও একমত হয়েছি যে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবো। সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। সেই সঙ্গে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। তারপরে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন হবে। যে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে একটি নতুন পার্লামেন্ট গঠন হবে। সেই পার্লামেন্টের মাধ্যমে সকল দলের মতামতের ভিত্তিতে একটি সরকার গঠন করা হবে। এই বিষয়গুলোতে আমরা একমত হয়েছি যে আন্দোলনের ব্যাপারে আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে যুগপৎভাবে আন্দোলন শুরু করবো এবং আন্দোলনকে একটা সুনির্দিষ্ট পর্যায়ে অর্থাৎ এই সরকারকে পদত্যাগের মধ্যে দিয়ে আন্দোলনকে সফল করার জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবো।

এসময় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী বলেন, আজকে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। ২০দলীয় জোটের বিএনপির সাথে বৈঠক হয়েছে। দেশের মানুষ আজকে সুখী না, পেটের খুদায় মানুষ রাস্তাঘাটে হাহাকার করছে। বন্যার মধ্যেও সরকারের সাহায্য পর্যপ্ত পরিমাণে যাচ্ছে না। তা ছাড়া দেশের প্রধান যে জিনিসটা গণতন্ত্রকে এই সরকার করে ফেলেছে। এই সরকারকে আর টিকে থাকতে দেওয়া যায় না। অনতিবিলম্বে এই সরকারকে হঠাতে হবে। সেই হঠানোর জন্য আমাদের কোরবানীর প্রয়োজন আছে, আন্দোলনের প্রয়োজন আছে। সেজন্য যা কিছু প্রয়োজন হয় তা করতে আমরা একমত হয়েছি। ইনশাআল্লাহ জনগণের আন্দোলন বৃথা যাবে যাবে না। এই দেশে অতীতেও আন্দোলন হয়েছে। অনেক স্বৈরাচারী সরকার এসেছে টিকতে পারেনি। এরাও টিকতে পারবে না। আমরা সেই মনোবল নিয়ে মাঠে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত আজকে নিয়েছি। বিএনপির মহাসচিব সাহেব যে কথাগুলো বলেছেন সে কথাগুলোর সাথে আমরা একমত হয়েছি।

এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, নির্বাহী সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রহিম ইসলামাবাদী, সিনিয়র সহ-সভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা শেখ মজিবুর রহমান, সহ-সভাপতি মাওলানা শহীদুল ইসলাম আনসারী, সহ-সভাপতি আলহাজ্ব জামাল নাসের চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল হক কাওসারী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা রশিদ বীন ওয়াক্কাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী জাকির হোসাইন খান উপস্থিত ছিলেন।