জলবায়ু পরিবর্তনে প্যারিস চুক্তির কঠোর বাস্তবায়ন চান প্রধানমন্ত্রী

আপডেট: এপ্রিল ২৮, ২০২১
0
file photo

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে প্যারিস চুক্তির ‘কঠোর বাস্তবায়নের’ আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দুই দিনের ‘পররাষ্ট্র নীতি ভার্চুয়াল ক্লাইমেট সামিট’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রচারিত তার ধারণকৃত বিবৃতিতে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মারাত্মক কোভিড-১৯ থেকে মুক্তি পেতে বিশ্বের সব দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন।তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নির্দিষ্ট সীমানায় আবদ্ধ নয়। যদি একটি দেশ থেকে নির্গত হয়, তাতেও প্রতিটি দেশ প্রভাবিত হয়। সুতরাং প্রতিটি দেশকে তার (যথাযথ) ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে ধনী দেশগুলো, বিশেষ করে জি-২০ দেশগুলোকে বিশ্বব্যাপী (কার্বন) নির্গমন বন্ধে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে।

শেখ হাসিনা অভিমত ব্যক্ত করেন, প্যারিস চুক্তির কঠোর বাস্তবায়নই বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন এবং এর ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধের একমাত্র উপায়।

তিনি বলেন, গ্রহটিকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় আগামীকাল নয়, আজ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী নিম্ন পর্যায়ের মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ (কার্বন) নির্গমনের জন্য ১০০ দেশ দায়ী এবং জি-২০ দেশগুলো ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী। শেখ হাসিনা বলেন, এটা ভালো খবর যে, যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তিতে ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সিদ্ধান্তের এবং গত সপ্তাহে জলবায়ুবিষয়ক নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানেরও প্রশংসা করি। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, প্যারিস চুক্তিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অভিযোজন এবং প্রশমনের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল গঠনের অঙ্গীকার করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ পার্লামেন্ট চলমান জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণতাকে ২০১৯ সালে একটি বৈশ্বিক জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা দেশব্যাপী ৩০ মিলিয়ন বৃক্ষ রোপনের পরিকল্পনা করেছি এবং কম-কার্বনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান’ প্রণয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর আমরা আমাদের জিডিপি’র প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ বা প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবেলায় টেকসই জলবায়ু সহনশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যয় করি।
চলমান করোনাভাইরাস মহামারী সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সারা বিশ্ব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি অভিমত প্রকাশ করেন, মারাত্মক ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কোভিড-১৯ এর পর, সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনর সবচেয়ে আলোচিত বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি এখন প্রতিটি দেশের জন্য, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু দুর্বল দেশগুলোর জন্য একটি বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়ছে এবং এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি সমস্ত অসুস্থতার জন্য প্রধানত দায়ী। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রার ক্রমাগত বৃদ্ধি মানবজাতির জন্য সবচেয়ে জরুরি উদ্বেগের বিষয়।প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠতে না দিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু, তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন রোধে এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট কিছু করা হয়নি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলো প্রতিনিয়ত ভয়াবহ বন্যা, খরা, জোয়ারের ঢেউ, জলোচ্ছ্বাস , বজ্রপাত ইত্যাদির মতো বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিজ্ঞতা অর্জন করে আসছে। বর্তমানে আমার দেশে তাপপ্রবাহ চলছে।গত বছর বাংলাদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে গত বছর ভারী বৃষ্টিপাত ছাড়াও সুপার সাইক্লোন আমফানসহ বেশ কয়েকটি সাইক্লোন আঘাত হানে এবং এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই ঘটেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ নয়, এবং বাস্তবিক অর্থে শুধু বাংলাদেশই নয়, বরং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এর কোনো সদস্য রাষ্ট্রই উল্লেখযোগ্য কার্বন নিঃসরণকারী নয়।তিনি আরো বলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরাই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমার দেশের ২ শতাংশ জিডিপি হারাচ্ছি।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় ১১ লাখের বেশি রোঙ্গিাকে আশ্রয় দিয়েছে। জোরপূর্বক-বাস্তুচ্যূত এই সব মিয়ানমারের নাগরিকদের পরিবেশগত-সংকটপূর্ণ কক্সবাজারে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের আশ্রয় দেওয়ায় ওই এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সিভিএফ জলবায়ু অভিযোজনের সম্মুখভাগে রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম একটি ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘৮০০ এর বেশি অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা এখন পর্যন্ত আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে ৪১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছি।’

তিনি আরো বলেন, আমরা উপকূলীয় এলাকায় ১২ হাজার সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করেছি এবং ২০০ হাজার হেক্টর ‘গ্রিন বেল্ট’ করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশী বিজ্ঞানীরা লবনাক্ততা ও বন্যাসহনশীল শস্য, বৃষ্টির পানির সংরক্ষণের জলাধার ও পুকুর-বালি-ফিল্টার উদ্ভাবন করেছেন। এ ছাড়া তারা উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য পানির ওপর ভাসমান কৃষি প্রযুক্তি ও ভ্রাম্যমান পানি শোধানাগার প্লান্ট উদ্ভাবন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উপকূলীয় জেলাগুলোর চরাঞ্চলে কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ বন করছি।’ শেখ হাসিনা আরো বলেন, তার সরকার সাইক্লোনপ্রবণ এলাকাগুলোর দরিদ্রদের জন্য সাইক্লোন সহনশীল টেকসই বাড়ি-ঘর নির্মাণ করছে।