জলবায়ু সম্মেলনে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণের আহ্বান একশন এইডের

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১
0

ঢাকা, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১:

জলবায়ু পরিবর্তন এ প্রজন্ম ও তরুণদের মানবাধিকারের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। এর ফলে তরুণ প্রজন্মের জীবন, জীবিকা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য সামাজিক অর্থনৈতিক দিকের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে এ সংকট নিরসনে বৈশ্বিক প্রচেষ্টার সাথে জলবায়ু আলোচনায় তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ওয়েবিনার ‘ক্লাইমেট জাস্টিস: ক্যাপচারিং ইয়ুথ ভয়েস ফ্রম গ্লোবাল সাউথ ইন দ্যা কনটেক্স অব প্যানডেমিক’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে গত বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ২০২১ এসব মন্তব্য করেন আলোচক ও বক্তারা। বাংলাদেশসহ এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপ থেকে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহণ করেন।

বক্তারা আরো বলেন, জলবায়ু আলোচনায় তরুণদের অংশগ্রহণ ও মতামত জরুরি হলেও করোনা মহামারীর প্রভাবে এবং যথাযথ পলিসি ও এডভোকেসির অভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের কণ্ঠরোধ হচ্ছে। এমনকি আসন্ন কপ২৬ সম্মেলনেও বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। জলবায়ু সংকট নিরসনে যারা বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমরা তাদের কাছে আশা করবো যেন তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহনকে উৎসাহিত করা হয় যাতে আমাদের বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলের তরুণরা তাদের সিদ্ধান্ত ও উদ্বেগের কথা বিশ্বব্যাপী চলমান জলবায়ু সংকট নিরসন আলোচনায় তুলে ধরতে পারেন।
শুরুতে ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা এবং একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটি এর সাধারণ পরিষদ এর সদস্য রেবেকা সুলতানা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশের সাংসদ নাহিম রাজ্জাক বলেন, “বাংলাদেশে জলবায়ু বিষয়ে আইনগত কাঠামো রয়েছে। আমাদের এটা মানতে হবে জলবায়ু পরিবর্তন একটি মানবসৃষ্ট পরিস্থিতি। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এখন ঝুঁকির মুখে যার জন্য দায়ী আমরাই । প্যারিস চুক্তি মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। নীতিনির্ধারনের ক্ষেত্রে আমাদের তরুণদের কণ্ঠ অবশ্যই শুনতে হবে যাতে তাদের চিন্তাগুলো আন্তর্জাতিক ফোরামে পৌঁছে দেওয়া যায়”। এসময় তিনি তরুণদের জলবায়ু বিষয়ে সচেতন হওয়ার ও সকলকে সচেতন করার জন্য আহবান জানান।

অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর (আইসিসিসিএডি) পরিচালক ও বাংলাদেশি জলবায়ু বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. সালিমুল হক বলেন, “জলবায়ু সমস্যা সমাধানে অ্যাডভোকেসির চেয়ে বেশি জরুরি সরাসরি কাজ করা ও উদ্যোগী হওয়া। কপ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা না থাকা জলবায়ু সংকট নিরসনে তেমন প্রভাব ফেলবে না। আপনার এলাকার একটি সমস্যা বেছে নিন এবং মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করুন, সমস্যার সমাধানে কাজ শুরু করে দিন আজই”। প্রথমে স্থানীয়ভাবে শুরু করে পরে জাতীয়ভাবে এমনকি বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম শুরু করা উচিত বলেও জানান এই বিজ্ঞানী।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির এক ভিডিও বার্তায় বলেন, বিশ্বব্যাপী তরুণরা তাদের সমস্যা ও চিন্তার কথা বিশ্বনেতাদের কাছে তুলে ধরতে চায় মূলত কপ২৬ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। তবে এ বছর করোনা ভাইরাসের টিকার প্রশ্নে কপ২৬ সম্মেলন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না।

এ সময় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ তাদের সমগ্র জনগোষ্ঠিকে টিকা দিতে সক্ষম হয়নি। অন্যদিক জনসংখ্যার অধিকাংশ যারা টিকা দেয়নি তারা তরুণ। বয়স এবং অন্যান্য অনেক বাঁধার কারণে এটি হয়নি যা দুঃখজনক। যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং বর্তমান তরুণদের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত সে সম্মেলন কতটুকু অর্থবহ হবে তা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। একই সাথে তিনি কপ প্রেসিডেন্সি ও বিশ্ব নেতাদের কাছে এ বার্তা পাঠানোর জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ ও সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

পরবর্তীতে ‘ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস বাংলাদেশ’ সংস্থার জলবায়ুকর্মী সায়লা সবনম রিচি করোনা মহামারীতে তরুণ প্রজন্মের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তার মতে, করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি একদিকে যেমন ব্যহত হয় তেমনি যৌন, প্রজনন, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়গুলোর উপরও ব্যপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

তিনি এসকল সমস্যা সমাধানে অভিনব উপায় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আলোচনা প্রক্রিয়ায় তরুণদের স¤পৃক্ততার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা বলেন।
জলবায়ু কর্মী শ্রেয়া কে. সি (নেপাল), দিশা রেবি (ভারত), এরিক ড্যামিয়েন (কেনিয়া), নীশাদ শফি (কাতার), জন বোনিফাসিও (ফিলিপাইন), ম্যানুয়েল ভাস্কুয়েজ (গুয়াতেমালা), মারিয়া রেইস (মেক্সিকো), লাক্স শর্মা (ভারত), খূন টেট প্যাঙ্গ (মায়ানমার), জোয়ান্ত বাবিরিয়া (উগান্ডা) ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জলবায়ুকর্মী ও অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধি তাদের চিন্তাভাবনা এবং অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।

এসময় তারা বলেন, কপ সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তরুণদের এ সম্মেলনে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করার বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি করছে। তবে সম্মেলনে তরুণদের অংশগ্রহন থাকুক আর না থাকুক, সেটা বড় কথা নয় কিন্তু সম্মেলনে প্রতিনিধিত্বকারী নেতাদের দেশে ফেরার পর তাদের পদক্ষেপ ও কাজের সচ্ছতা, জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু এবং মহামারী ইস্যুতে আমাদের যা করণীয় সেটাও করতে হবে। এ বিষয়গুলো বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের কাজের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। প্রশস্ত হয় সমাধানের পথ।

অনুষ্ঠানটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের জলবায়ুকর্মী, যুবকর্মী এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞদেও একসঙ্গে এক প্ল্যাটফর্মের অধীনে নিয়ে আসে। বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় উঠে আসে করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন ও সংকট, এ সংক্রান্ত কারনে বর্তমান বাস্তবতা, পলিসি নির্ধারণ, সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থারগুলোর সমন্বয় সর্বোপরি তরুণদের অংশগ্রহণ একসূত্রে গাঁথা। ফলে এসব কিছু সমন্বয় করেই জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় ব্রতী হতে হবে বলে জানান তারা। ###