জাতিসংঘ সরকারদের একটি ক্লাবে পরিণত হয়েছে : কোন জাতির আশা- আকাঙ্খার মূল্যায়ন হয় না– সুলতানা কামাল

আপডেট: জুলাই ৩০, ২০২১
0

সুন্দরবন কেউ গাছ লাগিয়ে পয়দা করেনি,সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে, বাঘ বাচাঁতে হবে। সুন্দরবন বাঁচলে দেশ বাঁচবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস-২০২১ উদযাপন উপলক্ষ্যে আজ ২৯শে জুলাই “বাঘ দিবসে বাঘের গল্প” শীর্ষক এক বিশেষ ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাপা সভাপতি, সুলতানা কামাল এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক, শরীফ জামিল এর সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, বাপা’র বন, জীববৈচিত্র, প্রাকৃতিক সম্পদ ও জ্বালানি বিষয়ক কমিটির, সহ-আহবায়ক, অধ্যাপক ড. মনিরুল হাসান খান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক ড. এম এ আজিজ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মোহসীন-উল হাকিম, সিনিয়র সাংবাদিক, যমুনা টেলিভিশন, বেলায়েত সরদার, স্থানীয় বনজীবী, মোংলা, নূর আলম শেখ, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার, নান্টু গাজী, ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম, জয়মনি, মোংলা, আহাদ হায়দার, সাবেক সভাপতি, বাগেরহাট প্রেসক্লাব এবং অধ্যাপক গোলাম রহমান, সাবেক সভাপতি, বিআইপি।

সভাপতির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, সুন্দরবনে বাঘের বসবাসের অনুকূল পরিবেশ নাই। সুন্দরবন বাঁচলে বাঘ বাচবে। বাঘ আমাদের সাহস, শক্তি ও সংস্কৃতির পরিচয়। এটিকে সংরক্ষণ করাও আমাদের দায়িত্ব। সরকার কখনও বাঘকে রক্ষায় গুরুত্ব দেয়নি। জাতীসংঘ সরকারদের একটি ক্লাবে পরিনত হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সেখানে জাতীর আশা-আকাঙ্খার কোন মূল্যায়ন হয়না বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি সুন্দরবনকে বাঘের বসবাস উপযোগী করার দাবী জানান।

তিনি ওয়বেনিারে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭২ সালের সোহরাদ্দী উদ্যানে দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ “আমরা গাছ লাগাইয়া সুন্দরবন পয়দা করি নাই“ এ কথা উল্লেখ করে সুলতানা কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যে সুন্দরবনকে “স্বাভাবিক অবস্থায় প্রকৃতি এটাকে করে দিয়েছে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য” এ কথার মর্মার্থ অনুধাবনের আহ্বান জানান।

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বাঘের আবাস স্থল ও খাদ্য সরবারহ নিশ্চিত করার আহবান জানান। তিনি বলেন সুন্দরবনকে সুন্দরবনের মতো থাকতে দিন। সরকারের প্রতি সুন্দরবন এবং এর ভেতর বসবাসকারী জীববৈচিত্র্যের উপর অত্যাচার বন্ধ করার অনুরুধ করেন।

অধ্যাপক ড. মনিরুল হাসান খান বলেন, বাঘ আমাদের জাতীয় পরিচয়। বাঘ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। সাধারণ বাঘ মানুষকে দেখে দুরে চলে যায়। বাঘ এবং সুন্দরবন দেশের গর্বের বিষয় এই গর্বকে অক্ষুণ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান।

অধ্যাপক ড. এম এ আজিজ বাঘকে বাঁচাতে হলে সুন্দরবনকে বাঁচানোর কোন বিকল্প নাই বলে মনে করেন। ইকোলজিক্যালি চিন্তা করলে সুন্দরবনকে দু’ভাগ করার কোন যুক্তি নাই। দুস্কৃতিকারীরা মাংসে বিষ মিশিয়ে বাঘ হত্যা করে থাকে। এটি সরকার বন্ধ করতে পারছে না। সুন্দরবনের বাঘের প্রধান খাদ্য হচ্ছে চিত্রা হরিণ। বনের চিত্রা হরিণও কমে যাচ্ছে বিভিন্ন কারনে। এ কানরে বাঘের খাদ্যের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে।

নূর আলম শেখ বলেন, সুন্দরবনে দিন দিন বাঘের সংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। সুন্দরবনে বাঘের খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। সুন্দরবনকে ঘিরে যে অপরিকল্পিত ব্যবসা-বানিজ্য ও শিল্পায়ন চলছে সেই জন্য বনে বাঘ বসবসাসের অনুপযোগী স্থান হিসেবে পরিনত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন সুন্দরবন বাঁচলে বাঘ বাঁচবে।

মোহসীন-উল হাকিম বলেন, সুন্দরবন এবং এ বনের জীববৈচিত্র রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে কোন শক্ত ভূমিকা নাই। তিনি বনবিভাগের নজরদারি বাড়ারোন প্রতি সরকারের নিকট আবেদন জানান।

আহাদ হায়দার বাঘ হত্যাকারিদের কঠোর শাস্তির দাবী জানান।
একই সাথে তিনি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র রক্ষার জোর দাবী জানান।
প্রাকৃতিক বর্ম সুন্দরবন রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

বেলায়েত সরদার বাঘ দেখার অভিজ্ঞতা বর্ননা করেন। তিনি বলেন সুন্দরবন আমার জীবনের অংশ। তিনি সরকারের প্রতি সুন্দরবন এবং এর জীববৈচিত্র রক্ষার আবেদন জানান।

সবার গল্পে বাঘ এবং সুন্দরবনের প্রতি স্থানীয় মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রতিফলিত হয়। আজকের ওয়েবিনারে সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরা, বাঘের সংখ্যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম বৃদ্ধি পাওয়া, বাঘ খাদ্যের অভাবে লোকালয়ে চলে আসা এবং সুন্দরবনের অদুরে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ইত্যাদি বিষয় উঠে আসে।