বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার প্রেক্ষিতে ইউরোপের বাজারে (ইইউ) বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণে সরকার ও বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যার মাধ্যমে নতুন জিএসপি প্লাস পেতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের ২য় দিনে বুধবার ‘বাংলাদেশ ও ইউরোপের মধ্যকার অর্থনৈতিক সহযোগিতা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ওয়েবিনারে অন্যান্যের মধ্যে স্ট্যাডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির এজাজ বিজয়, গ্রামীণফোন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান, ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও এবং ব্যবস্থপনা পরিচালক জাভেদ আকতার, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ড. রুবানা হক এবং ইয়ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিন উদ-দৌলা প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআইয়ের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান।
টিপু মুনশি জানান, গত মাসে প্রকাশিত ইউরোপের বাজার বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা প্রাপ্তির জন্য প্রস্তাবিত নুতন নীতিমালায় ‘ইমপোর্ট-শেয়ার ক্রাইটেরিয়া’ বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরাসরিভাবে উপকৃত হওয়ার সম্ভবানা রয়েছে।
তিনি বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে সরকার ও বেসরকারি খাতকে ঐক্যবন্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
ইয়ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মমিন উদ-দৌলা বলেন,বাংলাদেশের কৃষিখাতের আধুনিকায়নে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও গবেষণা কার্যক্রম বাড়নোর প্রয়োজন। পাশাপশি কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় টেকসই উন্নয়ন ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন। যার মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বাড়বে ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও এবং ব্যবস্থপনা পরিচালক জাভেদ আকতার বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বছরে গড়ে প্রায় ২৩ মার্কিন ডলারের ফাষ্ট মুভিং কনজিওমার প্রডাক্টস্ (এফএমসিজি) পণ্য গ্রহণ করে থাকে এবং বিশেষ করে এদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের বাজারকে আরও সম্ভাবনাময় করেছে। বাংলাদেশ হতে মুনাফা প্রাপ্তির লক্ষ্যে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
স্ট্যাডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির এজাজ বিজয় বলেন, আর্থিকখাতের জন্য বাংলাদেশের বাজার অত্যন্ত সম্ভাবনাময়, এখাতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে তা সফলভাবে মোকাবেলা করা গেলে মুনাফা অর্জন সম্ভব।
গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে, যা গ্রহণের মাধ্যমে বিদেশি উদ্যোক্তাবৃন্দ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ইউরোপের দেশসমূহ বাংলাদেশের বাণিজ্যের অন্যতম ব্যবসায়িক পার্টনার এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ৩৫ শতাংশ ছিল ইউরোপের সাথে। তিনি জানান, এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তোরণ পরবর্তী সময়ে ইউরোপের সাথে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে রুল অফ অরিজিনের ক্ষেত্রে কঠিন নীতিমালার মুখোমুখি হতে হবে এবং তা মোকবেলায় ইউ’র দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের সাথে এফটিএ এবং পিটিএ স্বাক্ষর করা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা নিয়ে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
তিনি ইউরোপের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের ইপিজেডসমূহে বিশেষ করে ওষুধ, এপিআই এবং তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। বাংলাদেশের কৃষি খাতের আধুনিকায়ন এবং রপ্তানিমুখী কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজতকরণে ইউরোপের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।