জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আপডেট: মে ৩০, ২০২৩
0
ziaur rahman

আজ ৩০ মে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে সমাদৃত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার এই স্বপ্নদ্রষ্টা। শোকাবহ এই দিনটি স্মরণে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি।

জিয়াউর রহমানকে বলা হয় আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। তিনিই জাতির সঙ্কটময় মুহূর্তে বারবার দাঁড়িয়েছেন নির্ভয়ে মাথা উঁচু করে। বিপর্যস্ত জাতিকে রক্ষা করেছেন সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে। ১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চে জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিশেহারা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস জুগিয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই তিনি ক্ষান্ত থাকেননি, দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য হানাদারদের বিরুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে তার এ অতুলনীয় ভূমিকা ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত এক পরিস্থিতি থেকে দেশ মুক্তি পায় ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক সিপাহি-জনতার বিপ্লøবের মাধ্যমে। আর এই বিপ্লবের প্রাণপুরুষ ছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। নিশ্চিত করেন বাক-ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা।

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের বক্তা জিয়াউর রহমান জাতির নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরেন। তার অন্যতম উপহার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পতাকাবাহী রাজনৈতিক দল ‘বিএনপি’। তার মৃত্যুর পর সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া দলের হাল ধরেন। তার প্রতিষ্ঠিত দল তিনবার জনগণের ভোটে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পায়।
জিয়াউর রহমান আমৃত্যু যুদ্ধ করেছেন ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শ্রেণিবৈষম্য ও নিরক্ষতার বিরুদ্ধে। জাতিকে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশকে তিনি গণতন্ত্রের আস্বাদ দিয়েছেন।

জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার গাবতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদানের জন্য স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তার ডাক নাম ছিল ‘কমল’। বাবা মনসুর রহমান ও মা জাহানারা খাতুনের দ্বিতীয় ছেলে কমল ছোটবেলা থেকেই লাজুক ও গম্ভীর প্রকৃতির ছিলেন। বাবার চাকরির সুবাদে কলকাতায় তার বাল্যপাঠ শুরু হয় সেখানকার হেয়ার স্কুলে। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে বাবার সাথে করাচি চলে যান তিনি। জিয়াউর রহমান ছিলেন মেধাবী ছাত্র। ১৯৫৩ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং কমিশন পান ১৯৫৫ সালে। ১৯৬৬ সালে তিনি কাবুলে পাকিস্তান সামরিক একাডেমিতে ইন্সপেক্টর হন এবং একই বছরে শেষদিকে কোয়েটা স্টাফ কলেজে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালের অক্টোবরে নবগঠিত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্ব দিয়ে তাকে পাঠানো হয় চট্টগ্রামে।
কর্মসূচি : মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো ১৮ দিনের কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- আলোচনা সভা, পোস্টার প্রকাশ, কালো ব্যাজ ধারণ, কালো পতাকা উত্তোলন, সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, জিয়ার মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ, দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্রসামগ্রী বিতরণ।

এ ছাড়া বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রমনায় ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স-বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের সিনিয়র নেতারা ও বিশিষ্টজনরা বক্তব্য রাখেন। দিবসটি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দুপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ করা হবে। এসব স্থানে দলের সিনয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
আগামী ১ জুন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস), ২ জুন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ-বিএসপিপি, ৪ জুন শ্রমিক দল, ৮ জুন তাঁতীদল ও ১০ জুন মৎস্যজীবী দল আলোচনা সভা করবে। আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এভাবেই বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে দলটি।

বাণী : দিনটি উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সোমবার এক বাণীতে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রমানের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্রকামী প্রায় ৪০ লাখ রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জনগণের ন্যায়সঙ্গত গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করাা হচ্ছে। হত্যা, খুন, গুম ও বিনাবিচারে হত্যা এবং অমানবিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে অবৈধ একদলীয় ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে বর্তমান অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে দিয়ে কর্তৃত্ববাদী একনায়কতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী শাসন চিরস্থায়ী করার চক্রান্ত করছে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা এবং আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার জিয়াউর রহমানকে আমাদের বারবার স্মরণ ও অনুসরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, জনগণকে সাথে নিয়ে এই দানবীয়, অবৈধ, গণতন্ত্র হরণকারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে উত্তাল গণ-আন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে, পরাজিত করতে হবে। এই অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে জনগণের পার্লামেন্ট ও জনগণের সরকার গঠন করতে হবে।