জিসিসি নির্বাচন: সেনা মোতায়েনসহ বিভিন্ন দাবীতে চিঠি দিলেন স্বতন্ত্র প্রাথর্ী জায়েদা

আপডেট: মে ২২, ২০২৩
0

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুরঃ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি) নির্বাচন প্রচারের সময়সীমা ক্রমেই শেষ হয়ে আসছে। দু’দিন পর বৃহষ্পতিবার (২৫ মে) অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। প্রচারণার শেষ মুহুর্তে নির্বাচনের হিসেব পাল্টে গেছে। কে হতে যাচ্ছেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পরবর্তী মেয়র তা নিয়ে রীতিমতো সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। নির্বাচনকে ঘিরে হোটেল-রেস্ঁেÍারা থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লায় সর্বত্রই চলছে নির্বাচনী চুলচেরা বিশ্লেষন, চলছে ভোটের হিসেব-নিকেশ। গাজীপুর সিটিকে পরিবেশবান্ধব ও বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এড. আজমত উল্লা খান। অন্যদিকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ভোটের সুষ্ঠূ পরিবেশ চেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন সহ অন্য মেয়র প্রার্থীরা। অপরদিকে কাউন্সিলর প্রাথর্ীরা দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি।

নির্বাচনী প্রচারণার শেষ মুহুর্তে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ ও হিসেব নিকেশ কষে ভোটারদের পিছু নিয়ে হন্যে হয়ে ছুটছেন। ভোটারদের সমর্থন পেতে অলিগলিতে ঘুরেছেন তারা। সোমবারেও ঝড় বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাত করে ব্যাস্ত সময় কাটিয়েছেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সবার একটাই উদ্দেশ্য-নির্বাচনে জয়ী হওয়া। আর এজন্য তারা এ নির্বাচনের মূল ফ্যাক্টর ভাসমান ভোটারদের গুরুত্ব দিয়ে তাদের খোঁজে বিভিন্ন মিল-কারখানায় ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। তারা নানা কৌশলে এসব ভোটারদের সমর্থন ও ভোট আদায়ের চেষ্টা করছেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠণের কর্মী সমর্থকদের সমর্থন আদায় ও তাদেরকে ভোটকেন্দ্রে এনে ভোট আদায়ের জন্য নানা কৌশলে কাজ করছেন।

এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বলতে কয়েকটি এ্যাম্বাসীতে চিঠি দিয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। চিঠিতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষন করতেও বিদেশী কুটনীতিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
চিঠিতে কুটনীতিকদের মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করারও অনুরোধ জানানো হয়। ইংরেজীতে লেখা তিন পাতার ওই চিঠি গত রোববার ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের রাস্ট্রদূত ও হাইকমিশনারকে দেয়া হয়েছে। এর আগে সিটি নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন নির্বাচন কমিশন সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ অন্যদের কাছে একই দাবিতে চিঠি দেন। সোমবার মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের ছেলে ও তার নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়কারী বহুল আলোচিত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জাহাঙ্গীর আলম জানান, নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বলার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানানোর জন্য কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারকে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে নির্বাচন পর্যবেক্ষন করতেও বিদেশী কুটনীতিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা চাই একটা অবাধ, সুষ্ঠু, গঠনমূলক নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনার বলেছেন সুষ্ঠু ভোট করবে, সিসি ক্যামেরা দিবে, ইভিএম-এ ভোট হবে। যার ভোট সে দিবে, যে ভোট পাবে তার নামে ডিক্লিয়ার হবে। আমরাও এটাই চাই। ওনারা যে কমিটমেন্ট করেছে সেটার বাস্তবায়ন চাই।

জানা গেছে, চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারকে ইংরেজিতে লেখা তিন পাতার এ চিঠিটি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা এবং অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগসহ কয়েকটি দাবি জানানো হয়েছে। এর আগে সিটি নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন নির্বাচন কমিশন সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ অন্যদের কাছে একই দাবি জানিয়েছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন।

চিঠিতে জায়েদা খাতুন বলেন, ‘আমি জায়েদা খাতুন আসন্ন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে “টেবিল ঘড়ি” প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছি। আমি গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের মা। আপনারা সবাই অবগত আছেন যে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আমার ছেলে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নির্বাচিত মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বাতিল করা হয়েছে। আমার ছেলের প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ করতে ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছি।

তিনি চিঠিতে আরো উল্লেখ করেন, গাজীপুরে আমি আমার নির্বাচনী প্রচারণায় নামলেই লাখো শান্তিপ্রিয় মানুষ আমার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। আমি ৯ মে প্রতীক পাওয়ার পর থেকে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান আমাকে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন, আমার জনসংযোগে হামলা করছেন এবং আমার নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত পোলিং এজেন্ট এবং সম্ভাব্য পোলিং এজেন্টদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। ব্যক্তিগত গুন্ডা ও প্রশাসনের ছদ্মবেশে বিশেষ পুলিশ পরিচয়ে তাদের ভয় ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।”

চিঠিতে জায়েদা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান তার সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে আমার গণসংযোগের সময় আমার গাড়ীবহরে বাধা দিচ্ছেন এবং তার পক্ষে (নৌকার) উস্কানিমূলক শ্লোগান দিচ্ছেন এবং পুলিশ প্রশাসনের সদস্যরা অযথা বিভিন্ন স্থানে আমার নির্বাচনী প্রচারণাকে অবৈধভাবে বাধা দিচ্ছে ও হয়রানি করছে। আমি এসব ঘটনা জানিয়ে একাধিকবার নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ করেছি। এ বিষয়ে আমি ১৮ মে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সর্বশেষ গত ১৮ মে বিকেলে মহানগরীর টঙ্গীর ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে আজমত উল্লা খানের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার গাড়ীবহরকে বাধা দেয় এবং আমার নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত গাড়ীটি ভাঙচুর করে।’

জাহাঙ্গীর বলেন, এসব কারণে ক্থটনীতিকদের দ্বারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য এবং সেনা মোতায়েনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে চাপ সৃষ্টি করার অনুরোধ জানিয়েছেন মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন।
প্রার্থীদের গণসংযোগ \
আওয়ামীলীগ প্রার্থীর গণসংযোগ \ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী (নৌকা) এড. আজমত উল্লা খান শুক্রবার নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় দিনভর গণসংযোগ করেছেন। তিনি ভোটারদের খোঁজে একাধিক মিল কারখানায়ও গিয়েছেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠণের সকল পর্যায়ের নেতা কর্মীরাসহ আশেপাশে এলাকার নেতা কর্মীরাও এ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন \ টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে প্রতিদন্ধিতা করছেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। তিনি ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরকে সঙ্গে নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন ও ভোটারদের কাছে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট প্রার্থণা করেন। বিকেলে মীরের বাজার এলাকায় গণসংযোগকালে প্রতিপক্ষের লোকজন বাঁধা দেয়। বাঁধা পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন তার গতিপথ পরিবর্তন করে সদও থানা এলাকার দিয়ে গণসংযোগ করেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচনে তার প্রধান সমন্বয়কারী ও ছেলে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

জাপা প্রার্থী \ জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল) সোমবার মহানগরীর শিলমুন এলাকা হতে গণসংযোগে শুরু করেন। সোমবারের প্রচার প্রচারণার কর্মসূচী রোড শো শিলমুন থেকে শুরু করে মরকুন টিএন্ডটি, গোপালপুর, পাগাড়, বিসিক, জামাই বাজার, মধুমিতা, স্টেশন রোড, থানা গেট, তিস্তার গেট, দত্তপাড়া, কলেজ গেট, গাজিপুরা, সাতাইশ, সিংবাড়ি, বেক্সিমকোর মোড় হয়ে চেরাগআলি মার্কেট ও টঙ্গী। যান। পওে তিনি কাউলতিয়া এলাকায় এলাকায় কর্মী সমর্থকদের নিয়ে দিনভর গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী \ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান (হাত পাখা) কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ও মিল কারখানায় গণসংযোগ করেছেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি \ এদিকে হাতি প্রতীক নিয়ে অপর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি সোমবার দিনভর কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নগরীর টঙ্গী পূর্ব ও টঙ্গী পশ্চিম থানার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন।