জুনেই উদ্বোধন হচ্ছে পদ্মা সেতু : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২২
0

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চলতি বছরের জুনেই উদ্বোধন করা হচ্ছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু। এই সেতু দেশের জিডিপিতে এক দশমিক দুই ভাগ হারে অবদান রাখবে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ক্ষমতাসীন সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এই কথা জানান তিনি।বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলোতে তার ভাষণটি সম্প্রচারিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক বছর। কয়েক মাস পর জুন মাসেই আমরা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু। অনেক ষড়যন্ত্রের জাল আর প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে যাচ্ছি। এই সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে সরাসরি রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করবে। আশা করা হচ্ছে, এ সেতু জিডিপিতে এক দশমিক দুই শতাংশ হারে অবদান রাখবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বছরের শেষ নাগাদ আমরা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এই অংশে ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আশা করা যায় মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আগামী অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল।’

দেশে চলমান অন্য বৃহৎ প্রকল্পগুলোর কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে বলে ভাষণে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি জানান, দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপূর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক হাজার দুই শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট আগামী বছরের এপ্রিল নাগাদ চালু হবে। এর জন্য ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা।

জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছিলো।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল একটি শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠন করা। যেখানে সব ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-পেশার মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে। প্রতিটি মানুষ অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার সুযোগ পাবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি তাকে সপরিবারে হত্যা করে।’

তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৩ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর্থসামাজিক এবং অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ বিস্ময়কর উন্নয়ন সাধন করেছে। ২০২১ সাল ছিলো আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রার এক অভূতপূর্ব স্বীকৃতির বছর। গত বছর আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে এই অর্জন বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইশতেহার ঘোষণা করেছিলাম। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের মূল প্রতিপাদ্য ছিল দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ নির্মূল করে একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতা মুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের সমৃদ্ধশালী দেশ।’

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিজয়ী হওয়ার পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনা চতুর্থ বারের মতো (টানা তিনবার) প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।