টঙ্গীতে শ্রমিক পুলিশ সংঘর্ষ : গুলিবিদ্ধ ১৩ ,পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত

আপডেট: মে ১০, ২০২১
0

গাজীপুর প্রতিনিধিঃ জীপুরে টঙ্গীতে
ঈদে বর্ধিত ছুটির দাবীতে হামীম শিল্প গোষ্ঠীর ক্রিয়েটিভ কালেকশন লিমিটেড কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে সোমবার পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে টঙ্গী শিল্প এলাকার মিল বাজার শহীদ সুন্দর আলী সড়কে ক্রিয়েটিভ কালেকশন লিমিটেড কারখানা ও আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে ৫ পুলিশ সদস্যসহ অর্ধ শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন।

পুলিশের গুলিতে আহত এক শ্রমিক

তাদের মধ্যে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত ১৩ শ্রমিককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তারা হলেন, মামুন (২৭) পিতা রেহান উদ্দিন, রবি (২১) পিতা রমজান আলী, লতিফ (১৯) পিতা কামাল উদ্দিন, ইমরান (১৯) পিতা কবির হোসেন, রুবেল (২৪) পিতা নজরুল, রুবেল (২২) পিতা চঁান মিয়া, রনি (২২) পিতা রমজান আলী, এহসানুল হক (৩৫) পিতা আবুল কাশেম, রাজীবুল (২৫) পিতা জাকির হোসেন, হাসান (২৫) পিতা মিন্টু মিয়া, হাসিনা (৪০) স্বামী মিজানুর রহমান, সাব্বির (২২) পিতা ছিরু মিয়া, ও সাবিনা (২৫) স্বামী হানিফ। সংঘর্ষে গুরুতর আহত পুলিশের সিটি এসবি শাখার এএসআই রুবেলকে (৩০) টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনালের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা উক্ত হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, তারা আরো আগে থেকেই আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে দশ দিনের ছুটির দাবী জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কতর্ৃপক্ষ সর্বোচ্চ সাত দিনের ছুটি দিতে রাজি হয়। পরে কতর্ৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে শ্রমিকরা দশ দিনের ছুটি ভোগ করার জন্য বিগত দুটি বন্ধের দিন কাজ করেন। ঈদের ছুটির মধ্যেই আরো একটি বন্ধের দিন পড়ায় শ্রমিকদের হিসেবে তারা মোট দশ দিনের ছুটি প্রাপ্ত হন। কিন্তু সোমবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করতে এসে জানতে পারেন, তাদেরকে সাত দিনেরই ছুটি দেওয়া হচ্ছে। এতে ক্ষুব্দ হয়ে শ্রমিকরা কল বন্ধ রেখে দশ দিনের ছুটির দাবীতে কর্মবিরতি শুরু করেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ জানান, অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় কারখানায় পুলিশ মোতায়েন করা হলে শ্রমিকরা পুলিশের সাথে উশৃংখল আচরণ শুরু করে। একপর্যায়ে সকাল ১১টার দিকে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ ফঁাকায় শর্টগানের গুলি বর্ষণ করে। শ্রমিকদের হামলায় শিল্প পুলিশের একজন এএসপি-সহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন বলে তিনি দাবী করেন।

পরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের কঁাদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবাল বুলেটের মুখে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে বেলা পৌনে ১টায় শ্রমিকরা পুনরায় একত্রিত হয়ে স্থানীয় মিলগেট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-ময়নসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে হটাতে পুলিশও আরো শক্তি বৃদ্ধি করে। একপর্যায়ে বেলা সোয়া ১টায় কঁাদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও শর্টগানের গুলি বর্ষণ করে পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে পুলিশ প্রহরায় যানবাহন চলাচল শুরু হলে বেলা দেড়টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনালের হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মাসুদ রানা জানান, পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষের ঘটনায় সোমবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত ১৯ জনকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে বুলেটবিদ্ধ ১৩ জন শ্রমিককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। পুলিশের একজন অফিসারকে উক্ত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং বাকীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আহত শ্রমিকদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ (রাবার বুলেট) বলে তিনি জানান। এছাড়া আহত নারী শ্রমিকদের বেশির ভাগই কঁাদানে গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এদিকে ঈদ বোনাস, বকেয়া বেতন ও বর্ধিত ছুটির দাবীতে টঙ্গীর সাতাইশ এলাকার তামিশনা পোশাক কারখানায়ও শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজ করছে। কারখানাটির আন্দোলনরত শ্রমিকরা সোমবার কর্মবিরতি পালন করে। পরে কতর্ৃপক্ষের সাথে সফল আলোচনার পর বিকেল ৩টায় তারা কাজে যোগ দেন।
###
মোঃ রেজাউল বারী বাবুল
গাজীপুর।