টুইটারের রাগ ফেইসবুকে ঝারলেন তাসলিমা নাসরিন

আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২১
0

মঈন আলীকে নিয়ে মন্তব্য করায় টুইটারে ব্যাপকভাবে তোপের মুখে পরেন তাসলিমা নাসরিন। তাই এই বিষয় নিয়ে ফেইসবুকে ক্ষোভ ঝারলের দেশ থকে বিতারিত এই লেখক।

দীর্ঘ এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে এই তার ক্ষোভের কথা জানান। তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসটি দেশজনতার পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো। “টুইটারে হাজার হাজার এবিউজ বিরোধী সেনা আমাকে এবিউজ করছে, আমার দোষ কেন আমি মইন আলীকে ‘এবিউজ’ করেছি।

এর মানে মইন আলীকে এবিউজ করা ঠিক নয়, আমাকে এবিউজ করা ঠিক। অপমান অসম্মান অত্যাচার জীবনে কম দেখিনি। যত দিন বাঁচি ততদিন দেখতে হবে জানি। ঝাঁকে ঝাঁকে মুসলিম মৌলবাদি, ফেক বাম, আমাকে না-পড়া লোক, আমার কিছুই না জানা লোক, পঙ্গপালের মতো আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, লক্ষ শকুন যেন জীবন্ত আমাকে খুবলে খাচ্ছে। পকেটমার সন্দেহে গরিব নিরীহ ছেলেকে উন্মত্ত জনতা যেমন পিটিয়ে মেরে ফেলে, সেরকম মনে হচ্ছিল আমার, যেন আমি সেই গরিব নিরীহ ছেলেটি ।

দোষটা কী ছিল আমার? একটি জোক। আযান পড়লে যে মানুষ খেলার মাঠেই নিজের জায়নামাজ পেতে নামাজ পড়েন, খেলা চলতে থাকলে নাকি আম্পায়ারকে বলে চলেও যান নামাজ পড়তে, বিজয়ের শ্যাম্পেন খুললে দ্রুত সরে যান দূরে, বিয়ার কোম্পানীর লোগো থাকলে সেই জার্সি পরবেন না বলে জানিয়ে দেন, পয়গম্বরের আদেশ মাফিক গোঁফ ট্রিম করতে থাকেন, দাড়ি বড় করতে থাকেন, কোনও মেয়ে-সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিলে মুখের দিকে একটিবারও না তাকিয়ে সাক্ষাৎকার দেন, স্ত্রীকে হিজাব পরান — তাঁকে নিয়ে যদি কৌতুক করিই, তাহলে কি টুইটারের একাউন্ট উড়ে যাবে? হ্যাঁ এমনই থ্রেট এসেছে।

আমাকে যারা গতকাল থেকে এবিউজ করছে, তারা তো অনেকেই শার্লি আব্দোকে সমর্থন করে। শার্লি আব্দো তো মস্করা করে বিখ্যাত লোকদের নিয়ে, তাহলে সেটা সমর্থন করে কিভাবে? নাকি ওরা ফরাসি বলে ওদের সমর্থন করা চলে!

মইন আলীকে নিয়ে লেখা টুইট ছিল তিনদিন আগের। সেটি চার হাজারের ওপর লাইক পেয়েছিল, কেউ কিন্তু তখন কোনও অভিযোগ করেনি। হঠাৎ গতকাল কবিতা কৃষ্ণন নামে একজন বামপন্থী আমাকে গালিগালাজ করলেন টুইটটি নিয়ে। অমনি শুরু হয়ে গেল, তথাকথিত বাম এবং মুসলিম মৌলবাদিদের তসলিমা এবিউজ ।

গালি, গালি এবং গালি। সংগঠিত মৌলবাদিরা আজও চালিয়ে যাচ্ছে এবিউজ। সাধারণ মানুষও এসে কুৎসিত কথা বলে যাচ্ছে। মাঝখানে ইংলেণ্ডের ক্রিকেটাররাও যা নয় তা তো বললেনই, আমার টুইটার একাউণ্ট রিপোর্ট করার জন্যও ভক্তদের বলে গেলেন। ঘৃণার মতো সংক্রামক বোধহয় ডেডলি ভাইরাসও নয়।

কেউ জানলো না আমার স্ট্রাগল, আমার দীর্ঘ বছরের সংগ্রাম। মানবতা, মানবাধিকার, নারীর অধিকার, বাক স্বাধীনতা, সমতার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরবধি আমার লেখালেখি।

সবাই মনে করতে লাগলো আমি সারাজীবন ধরে ওই এক লাইনের একটা টুইটই লিখেছি, আমার আর কোনও কন্ট্রিবিউশান নেই, তাই আমাকে শায়েস্তা করা উচিত। মৌলবাদিদের দু’দিন ব্যাপী উৎসব চলছে । কারণ বড় বড় ক্রিকেটার আমাকে গালি দিচ্ছেন, বামপন্থী গালি দিচ্ছেন, নামী দামী লোক গালি দিচ্ছেন, তাদের আনন্দ আর ধরছে না।”