ঠাকুরগাঁওয়ে কাঁচা ভুট্টার মণ ১০০০ টাকা

আপডেট: মে ৬, ২০২২
0

ঠাকুরগাঁওয়ে চলতি বছর ভুট্টার ভালো ফলন হয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা বেশ খুশি। উৎপাদন খরচ কম এবং ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।

জানা গেছে, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এ বছর ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে। করোনা মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে দামও বেড়েছে দ্বিগুণ।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবার উপজেলার কৃষকরা ভুট্টা চাষ করেছেন ১৯ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে।

সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা ভুট্টার মোচা সংগ্রহে ব্যস্ত। কেউ মাড়াই করছেন, আবার কেউ জমিতে ভুট্টা শুকিয়ে জমি থেকেই বিক্রি করছেন।

ঘনিমহেষপুর গ্রামের ইসলাম উদ্দিন এবার তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে তিনি ফলন পেয়েছেন ৪০ মণের বেশি। প্রতি বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে ১২-১৫ হাজার টাকা। জমি থেকেই এ বছর তিনি প্রতি মণ কাঁচা ভুট্টা বিক্রি করেছেন এক হাজার টাকা দরে।

ইসলাম উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, এবার ভুট্টার ফলন খুব ভালো হয়েছে। দামও প্রায় গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। গত বছর এই সময় ভুট্টার দাম ছিল প্রতি মণ ৬০০ টাকার নিচে। গরম বাতাসে গত বছর ভুট্টার মোচা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ফলে প্রতি বিঘা জমিতে ফলন হয়েছিল মাত্র ১২-২০ মণ।

উপজেলার চাপাতি গ্রামের নারী চাষি ঝরনা বেগম নয়া দিগন্তকে বলেন, দু’বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি এ বছর। প্রতি বিঘায় পেয়েছি ৩৮-৪০ মণ ভুট্টা। এক বিঘা জমির ভুট্টার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

উত্তর বঠিনা গ্রামের শিমুল বাবু এবার ভুট্টা চাষ করেছেন ১৬ বিঘা জমিতে। প্রতি বিঘায় তার খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। জমি থেকে ভুট্টা সংগ্রহে ব্যস্ত দেখা যায় তাকে।

শিমুল বাবু নয়া দিগন্তকে বলেন, ভুট্টা চাষে খরচ কম, কম যত্ন নিতে হয় আবার ভালো ফলনও হয়। চাহিদা ভালো থাকায় দামও ভালো পাওয়া যায়। ফলে ভুট্টা চাষ এখন কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বছর আমাদের টার্গেট ছিল প্রতি বিঘায় ৩২ মণ ভুট্টা, কিন্তু এবার গড়ে প্রতি বিঘায় ফলন হচ্ছে ৪০ মণের বেশি, বলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষ্ণ রায়।

তিনি বলেন, সমসাময়িক ফসলগুলোর মধ্যে পানিসাশ্রয়ী ফসল ভূট্টা চাষের আবাদ বাড়াতে সরকার কৃষকগণকে অনুপ্রাণিত করছে। এবারে ঠাকুরগাঁও সদরের প্রায় তিন হাজার সাত শ’ জন কৃষক ভুট্টা বীজ এবং সার প্রণোদনা পেয়েছেন।

বাংলাদেশে ভুট্টা ৯০-এর দশকেও কৃষকদের কাছে তেমন পরিচিত কোনো ফসল ছিল না, কিন্তু এখন এটি ধানের পরেই দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। এটা হয়েছে মূলত গবাদি পশু-পাখি এবং মাছ চাষের প্রধান খাদ্য ফিড তৈরিতে ভুট্টার অধিক ব্যবহারের কারণেই। এখন বাংলাদেশের ফিড তৈরির মিলগুলোতে বছরে প্রায় ৭৫-৮০ লাখ টন ভুট্টার প্রয়োজন।

মিলগুলোতে চাহিদা বাড়ার জন্যই কেবল দেশে ভুট্টা চাষ বাড়ছে না। গম উৎপাদনের চেয়ে ভুট্টা উৎপাদন লাভজনক হওয়ার কারণেও কৃষকরা বেশি বেশি ভুট্টা চাষ করছেন।

ঠাকুরগাঁও প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাছ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির উৎপাদন বাড়ায় ভুট্টার চাহিদাও বাড়ছে। প্রাণিখাদ্য তৈরির বড় অংশই ভুট্টা থেকে আসে। এর মধ্যে মুরগির খাদ্য তৈরিতে ৫৫ শতাংশ ভুট্টার দরকার হয়।

এ হার গবাদিপশুর খাদ্যে ৩০ ও মাছের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। এত খাতে বছরে ৪৫ লাখ
টন ভুট্টার চাহিদা রয়েছে।