ডিজিটাল আইনের অপপ্রয়োগ বাদ দিয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার চায় সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি

আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২১
0

সার্বজনীন শারদীয় দূর্গোৎসবে কুমিল্লা, চৌমুহনী, রংপুরের পীরগঞ্জ, চট্টগ্রাম. চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ সহ ২২টি জেলা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর লুটপাট ও তাদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মিথ্যা অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে এ ধরণের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অপতৎপরতা প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিরোধী সমাবেশে নারী নেত্রীরা এ আহবান জানান।
সমাবেশে সারাদেশে নানাভাবে একের পর এক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশের নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফরম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ। সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি সচেতন দেশবাসীকে সাথে নিয়ে আজকের এই সাম্প্রদয়িক সহিংসতা বিরোধী সমাবেশ থেকে এই ঘটনাসমুহের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি এই ঘটনাসমূহের তীব্র নিন্দা প্রকাশ করে।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আদিবাসীসহ সকল নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার লক্ষ্যে। আমাদের সংবিধানে দেশের সকল মানুষের সম অধিকারের কথা উল্লেখ আছে, কিন্তু দুঃখের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি যে, গত কয়েক দশক ধরেই এই ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা আমাদের সমাজে ঘটেই চলেছে, যা আমাদের অনেক বড় বড় অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে এবং সকল বৈচিত্র্যকে ধারণ করে পরমত সহিষ্ণুতা ও সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষের মিলেমিশে বসবাসের নীতির ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ম্লান করছে দেশের সংবিধানকে অবমাননা করা হচ্ছে।

ইতোপূর্বে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে জড়িত অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় ক্রমাগত এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এই সকল সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সাথে জড়িত সকল অপরাধীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং পাশাপাশি এদের ইন্ধনদাতাদেরও খুঁজে বের করে নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে তাদের স্বরূপ সকলের সামনে উন্মোচন করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানা গেছে যে এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময়ে প্রশাসনের উদাসীনতা ও শৈথিল্য ছিল। কোথাও কোথাও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততার কথাও জানা গেছে, যা আমাদের উদ্বেগকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
বারবার এই ধরণের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পুনরাবৃত্তিরোধে সমাজের মননশীলতা গঠনের উপর রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও পরিবারকে গুরুত্ব দিতে হবে।


এ প্রেক্ষিতে:
১. শারদীয় দূর্গোৎসবে কুমিল্লা, চৌমুহনী, রংপুরের পীরগঞ্জ, চট্টগ্রাম. চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি এই ঘটনা সমূহের অপরাধী ও ইন্ধনদাতাদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে গ্রেফতার ও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ সাপেক্ষে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাচ্ছে।
২. সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহীতা ও দায়বদ্ধতার আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে।
৩. সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।
৪. সকল ক্ষতিগ্রস্থ সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছে।
৫. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাসমুহ ঘটানো হচেছ সে বিষয়ে যথাযথ তদন্ত পুর্বক অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে এবং এ বিষয়ে সকলকে সচেতন ও সতর্ক থাকার আহব্বান জানাচ্ছে।


৬. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করে সঠিক ও যথাযথ প্রয়োগেরও দাবি জানাচ্ছে।
৭. ২০১৩-১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সন্ত্রাসী হামলাকারীদের ট্রাইবুন্যালে দ্রুত বিচারের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল তা কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছে।
৮. সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছে।
৯. সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি ধর্মীয় সমাবেশ থেকে ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ এবং নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার অপপ্রচার বন্ধ করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে। একই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই ধরণের অপপ্রচার বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছে।
১০. সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সহাবস্থান, সম্প্রীতি, শান্তি, সৌহার্দ রক্ষা ও বর্তমান নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতির অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে সরকার, প্রশাসন,সকল গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছে।
১১. দেশের যে কোন স্থানে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছে।