খুলনা ব্যুরোঃ
খুলনার ডুমুরিয়ায় ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েও স্বস্তিতে নেই নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় তাদের টেনশন বেড়ে গেছে। বিদ্রোহী এসব প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। নৌকা প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় উপজেলায় ১৫জন প্রার্থীকে দল থেকে বহিঃস্কার করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও তারা নির্বাচনী মাঠ ছাড়েননি। এ কারণে নৗকার প্রার্থীরা জনগণের কাছে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। আবার বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা ভয়ভীতি ও মারপিটের শিকার হচ্ছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তবে বিদ্রোহী এ সব প্রার্থী ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পদচারণায় মুখরিত এখন ডুমুরিয়ার ১৪টি ইউনিয়নের নির্বাচনী মাঠ।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে আগামী ১১ নভেম্বর ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপিসহ অন্যান্য দল নির্বাচনে সক্রীয় অংশ গ্রহণ না করলে নির্বাচনী সহিংসতা থেমে নেই। আওয়ামীলীগের নৌকা প্রার্থীর সাথে পেশী ও স্নায়ু যুদ্ধ চলছে নৌকার বিদ্রোহী প্রাথীর সাথে। ঘটছেও ব্যাপক সহিংসতা। রেহায় পাচ্ছেনা পুলিশও। ইতোমধ্যে নৌকা প্রতীকের বিরোধীতা করার কারণে ডুমুরিয়া উপজেলায় ১৫ জন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে বহিঃস্কার করা হয়েছে। ঘটছেও ব্যাপক সহিংসতা। ২৮ অক্টোবর রাতে মাগুরখালী ইউনিয়নের বাগারদাইড় গ্রামে নৌকার কর্মীরা আচারণবিধি লঙ্ঘন কাে মিছিল বের করলে মাগুরখালি ক্যাম্প পুলিশ তাদেও নিবৃত করা চেষ্টা করলে। তখন মিছিলকারিরা তাদের উপর হামলা করলে গুরুতর আহত হন মাগুরখালী ক্যাম্প ইনচার্জ সাব ইন্সপেক্টর মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম ( ৪৬), সহকারী ইনচার্জ এ এস, আই মোঃ জাকির হোসেন (৩৫ দ) , কন্সটেবল রুবেল শেখ (৩৫)। এ সময় তারা পুলিশের মটর সাইকেলও ভাঙ্চুর করে। এদিকে ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়নের নোয়াকাটি গ্রামে গত ২৭ অক্টোবর রাতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মাদ মাহাবুবুর রহমানের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ আব্দুল কুদ্দুসের ১২ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ২৪ অক্টোবর রাতে ডুমুরিয়া উপজেলার মিকশিমিল গ্রামের নাসিম জোয়ার্দার (৪৫), লিটন বিশ্বাস (৩৮) রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদর সামনে দিয়ে শোলগাতিয়া বাজারে যাচ্ছিল। এ সময় নির্বাচন বিরোধের জের ধরে নৌকা প্রতীকের লোকেরা গাজী তৌহিদ আহম্মেদের কর্মীদের পিটিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় নাসিম জোয়ার্দার (৪৫), লিটন বিশ্বাস (৩৮)কে মারাত্মক জখম অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়; ১নং ধামালিয়া ইউনিয়নে ৭জন চেয়াম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএম জহুরুল হক (আনারস), বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ মনোনীত মোঃ রেজোয়ান মোল্যা (নৌকা) এবং আওয়ামীলীগ সমর্থিত জাহাঙ্গীর কবির টাইফুন (মোটর সাইকেল) এর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে বলে ভোটারগণ জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান; দলমত নির্বিশেষে শিক্ষিত, সৎ এবং যোগ্য প্রার্থীকে ইউনিয়নের অভিভাবক হিসেবে নির্বাচিত করবেন। আওয়ামীলীগ এবং আওয়ামীলীগ সমর্থিত একাধিক প্রার্থী হওয়ায় আনারস প্রতীকের প্রার্থী বিএম জহুরুল ইসলামের পাল্লা অনেক ভারী বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। অন্যন্য প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হলেন আওয়ামীলীগ সমর্থিত জি এম সাকি ইউনুস (ঘাড়া), এস এম তোজাম্মেল হক (রজনী গন্ধ্যা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনিত প্রার্থী কামরুজ্জামান ফকির (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আনারুল ইসলাম (অটোরিকসা)।আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএম জহুরুল ইসলাম বলেন; অন্যান্য ইউনিয়নের সহিংসতায় ভোটারগণ অজানা আতঙ্কে ভুগছে যে তারা সুষ্ঠুভাবে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে কিনা। তবে প্রশাসনের আশ^াসবাণীতে আমরা অনেকটাই আশ^স্ত।
রঘুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ৪জন। বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী খান শাকুর উদ্দীন (নৌকা), ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য গাজী আব্দুল হক ঘোড়া), আওয়ামীলীগ সমর্থিত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোজিৎ বালা ( আনারস) এবং তরুন সমাজ সেবক স্বতন্ত্র প্রার্থী এ এম আমিনুর রহমান (চশমা)। এখানে আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থীও ডামাডোলে কে জিতবে বলা মুশকিল। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীও বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার দায়ে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীকে সাংগঠনিকভাবে বহিঃস্কার করা হয়েছে। ভোটারদের সাথে কখা বলে জানা গেছে; ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটারা কোন দল শৃঙ্খলিত নেই। তারা আঞ্চলিকতা এবং যোগ্য প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেবেন। যিনি সুখ দুঃখে পাশে থাকবেন।
৩নং রুদাঘরা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যন মোস্তফা কামাল খোকন (নৌকা), এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ডুমুরিয়া উপজেলা শাখার কোষাধ্যক্ষ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী তৌহিদ আহম্মেদ (আনারস) এর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে। তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার দায়ে আনারস প্রতীকের প্রার্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদকে সাংগঠনিকভাবে বহিঃস্কার করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী গাজী তৌহিদ আহম্মেদ বলেন; আমার জনপ্রিয়তায় ঐর্শন্বিত হয়ে নৌকা প্রতীকের লোকজন আমার কর্মী সমার্থকদের হুমকি দিয়ে আতঙ্কিত করাসহ কয়েকজন কর্মীকে মারপিট করছ্।েআমি নৌকার বিরুদ্ধে নই। বিগত নির্বাচনেও নৌকা প্রতীক চেয়েছিলাম, কিন্তু পাইনি। তাই এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট করায় দলের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অনুরোধে আমি প্রার্থী হতে বাধ্য হয়েছি।
এছাড়া তরুণ সমাজ সেবক ও আওয়ামীলীগ সমর্থিত এম, এম ইমরান হোসেন (ঘোড়া) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনিত প্রার্থী মাহাবুব আলম (হাতপাখা) নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
—মোঃ আনোয়ার হোসেন আকুঞ্জী