ড্যু অর ডাই সিচ্যুয়েশনে শেখ হাসিনা

আপডেট: মে ১৬, ২০২৩
0

অলিউল্লাহ নোমান

শেখ হাসিনা ডো অর ডাই সিচ্যুয়েশনে অবস্থান নিয়েছেন। আত্মরক্ষা নয়, আক্রমনে থাকাই হল বেষ্ট ডিফেন্স। শেখ হাসিনা সেই পজিশন নিয়েছেন। এটা লিডারশীপের একটা বড় গুণ।

আমি তাকে পছন্দ করি না, সেটা ভিন্ন বিষয়। তবে বলব, লিডারশীপের অবস্থান এমনই হতে হয়।

স্যাংশন আরোপ করা দেশ থেকে কেনাকাটা না করারা ঘোষণার দিনেই আমেরিকা ও বৃটেনের রাষ্ট্রদূতদের ঢাকায় বাড়তি প্রটোকল কেড়ে নিয়েছেন তিনি। এর মাধ্যমে কঠোর বার্তাই দিয়েছেন আমেরিকা এবং বৃটেনকে।
তার এই বার্তায় জানিয়ে দিয়েছেন আমেরিকা ও বৃটেনকে, তোমরা যা পর কর।
এখন দেখার বিষয় এই দুই দেশ কি পদক্ষেপ নেয়।
অনেকেই হয়ত ভাবছেন আমেরিকা ও বৃটেন চাইলে সরকার ফেলে দিতে পারে।
এই কথার সাথে আমি একমত নই।

বহু নজির আছে তারা চেয়েছে কিন্তু পরিবর্তন হয় নাই। যেমন সিরিয়ায় আসাদকে সরানোর জন্য সরাসরি বোমা হামলা চালিয়েছে। গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে দেশটি ধ্বংস করতে সক্ষম হলেও আসাদের কোন—-ছিঁড়তে পারেনি। এক আসাদেই প্রমানিত বিদেশিরা চাইলেই যুদ্ধ করেও পরিবর্তন ঘটাতে পারে না।
হয়ত বলবেন, সাদ্দাম হোসেন এবং গাদ্দাফির কথা। এই দুইজন ছিলেন দেশপ্রেমিক এবং আমেরিকার জন্য থ্রেট। আফ্রিকায় মুসলিম সংখ্যাঘরিষ্ঠ দেশ লিভিয়াকে ধ্বংস করাই ছিল তাদের মূল টারগেট। গাদ্দাফি পরবরতি লিভিয়ার অবস্থা এখন সেটাই প্রমাণ করে। একই অবস্থা ইরাকেও বিরাজমান।
সুতরাং চরম ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে লিভিয়া ও ইরাকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হলেও বাংলাদেশে তারা এমনটা করতে যাবেন বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের মানুষ হয়ত পরিবর্তনের জন্য এমন ধ্বংসযজ্ঞ চাইবেও না।
পাকিস্তানের যুক্তি দিবেন। পাকিস্তানে পারলামেন্টে একটা সুযোগ ছিল। ইমরানের শরীক দল গুলোর এমপিদের কিনে নিতে সক্ষম হয়েছিল ইমরান বিরোধীরা। বাংলাদেশের পারলামেন্টে এমন অবস্থা নেই।

শেখ হাসিনা জানেন, তার বাবার হত্যাকাণ্ডের পর ইন্নালিল্লাহ বলার মানুষ ছিল না। দুরবিন দিয়ে খুঁজে আওয়ামীলীগার পাওয়া যায়নি তখন।
শেখ হাসিনা এটাও জানেন, অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে তার ক্ষেত্রেও একই পরিণতি ঘটবে।
কিন্ত, শেখ হাসিনা যতদিন জীবীত থেকে লড়াই করার চেষ্টা করবে ততদিন আসাদের মত পাশে থেকে জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত লোকের অভাব হবে না!
কারণ, তারাও জানেন শেখ হাসিনা না থাকলে তাদের পরিণতি কি ঘটবে। তাদের স্বারথেই শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে ঝাপিয়ে পড়বে।
তাই শেখ হাসিনার সুবিধাভোগি দলীয় নেতা-কর্মী, আমলা, সিভিল প্রশাসন, পুলিশ-মিলিটারি তার পাশে থাকবে।
জুডিশিয়ারি, পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল গুলোসহ সুবিধাভোগীরা জীবন দিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা চালাবে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদি রাজনীতির বড় সফলতা এখানে।

শেখ হাসিনার আরেকটা বড় গুণ হচ্ছে তার চিন্তা এবং আদর্শের সাথে কখনো বেঈমানী করে না।
তার ধর্মনিরপক্ষ চিন্তার সাথে বেঈমানী করে কখনো বলতে শুনিনি পূর্বের নীতি (বাপেরটা) ভুল ছিল। ক্ষমতার জন্য এটা জ্বানালা দিয়ে ছুডে ফেলে দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা কোন একক ব্যক্তিকে ক্ষমতাবান বা বিলিয়নিয়ার বানায়নি।
তার ব্যক্তিগত কোন চাকরের পরিবার রাজনীতিতে নাক গুলিয়ে কোন একটি জেলা নিয়ন্ত্রন করেন এমন কোন ঘটনা শোনা যায়নি। শেখ হাসিনা তার দলের প্রতিটি কর্মীকে লুটপাটে সহযোগিতা করেছেন।সুতরাং তারাও তারজন্য জীবন দিতে সামনে এগিয়ে আসবে যতদিন শেখ হাসিনা বেঁচে থেকে লড়াই করবেন।
নিজের আত্মবিশ্বাসের রাজনীতির কারণেই হয়ত শেখ হাসিনা ডো অর ডাই পজিশন নিয়েছেন।

যুক্তরাজ্য নির্বাসিত সাংবাদিক
সিনিয়র সাংবাদিক দৈনিক আমার দেশ